কুতুবদিয়া (Kutubdia) কক্সবাজার জেলার একটি দ্বীপ উপজেলা। এই দ্বীপটির আয়তন প্রায় ২১৬ বর্গ কিলোমিটার এবং এটি বিভিন্ন বৈচিত্র্যে ভরপুর। কুতুবদিয়ায় রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র, সমুদ্র সৈকত, লবণ চাষ, বাতিঘর এবং কুতুব আউলিয়ার মাজার।
ইতিহাস
ধারণা করা হয় যে, চতুর্দশ শতাব্দীর শেষের দিকে কুতুবদিয়া দ্বীপটি সাগরের মধ্যে জেগে ওঠে এবং পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষের দিকে এখানে মানুষের বসবাস শুরু হয়। 'কুতুবুদ্দীন' নামে এক পরহেজগার ব্যক্তি এই দ্বীপে আস্তানা স্থাপন করেন এবং পরবর্তীতে আরাকান থেকে বিতাড়িত মুসলমানরা এই দ্বীপে আশ্রয় নেন। কুতুবুদ্দীনের নামে দ্বীপটির নামকরণ হয় 'কুতুবুদ্দীনের দিয়া', যা পরবর্তীতে 'কুতুবদিয়া' নামে পরিচিতি লাভ করে।
কুতুবদিয়া দ্বীপের দর্শনীয় স্থান
- কুতুবদিয়া চ্যানেল: মাগনামা ঘাট থেকে কুতুবদিয়া দ্বীপে যাওয়ার পথে এই চ্যানেলটি পার করতে হয়। শীতকাল ছাড়া, বছরের অন্যান্য সময় এটি বেশ উত্তাল থাকে।
- কুতুব আউলিয়ার দরবার: কুতুব আউলিয়ার দরবার শরীফ দেখতে আপনাকে দ্বীপের ধুরং এলাকায় যেতে হবে।
- বাতিঘর: কুতুবদিয়ায় সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজকে পথ দেখাতে একটি বাতিঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। এখন ভাটার সময় তার ধ্বংসাবশেষ দেখা যায় এবং নতুন বাতিঘর নির্মিত হয়েছে।
- সমুদ্র সৈকত: কুতুবদিয়ায় প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত রয়েছে। সৈকতের বৈশিষ্ট্য হলো এখানে প্রচুর গাংচিল ঘুরে বেড়ায় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখার জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।
- বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র: কুতুবদিয়া সমুদ্র সৈকতের দক্ষিণে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র অবস্থিত, যা প্রায় এক হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে।
- লবণ চাষ: শীতকালে এখানে লবণ চাষ করা হয়, যা প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত হয়।
কুতুবদিয়া দ্বীপ যাওয়ার উপায়
- ঢাকা থেকে: ঢাকা থেকে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলায় যেতে হবে, তারপর মগনামা ঘাট হয়ে কুতুবদিয়া দ্বীপে পৌঁছাতে হবে। বাস ভাড়া ৯০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত।
- চট্টগ্রাম থেকে: চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বাস স্ট্যান্ড থেকে চকরিয়ায় যাওয়া যায় এবং পরে সিএনজি করে মগনামা ঘাটে যেতে হবে।
- কক্সবাজার থেকে: কক্সবাজার থেকে চকরিয়া বাস স্ট্যান্ড হয়ে মগনামা ঘাটে যাওয়ার জন্য সিএনজি বা মহেশখালি নৌপথ ব্যবহার করতে হবে।
- চকরিয়া থেকে: চকরিয়া থেকে মগনামা ঘাটে সিএনজি করে যেতে হবে এবং সেখানে থেকে ইঞ্জিন নৌকা বা স্পিড বোটে কুতুবদিয়া দ্বীপে পৌঁছাতে হবে।
একদিনের ভ্রমণ পরিকল্পনা ও খরচ
চট্টগ্রাম থেকে খুব সকালে রওনা দিলে বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং বাতিঘর দেখে দিনের বেলায় ফিরে আসা সম্ভব। যাওয়ার পথে ৬-৭ ঘণ্টা সময় লাগে এবং বাকি সময়ে দ্বীপটি ঘুরে দেখা যায়।
কোথায় থাকবেন
কুতুবদিয়া দ্বীপের বড়ঘোপ বাজারে "হোটেল সমুদ্র বিলাস" নামে একটি আবাসিক হোটেল রয়েছে। এখানে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায় নন-এসি রুম পাওয়া যায়। এছাড়া, দ্বীপটি ক্যাম্পিং করার জন্যও আদর্শ।
কোথায় খাবেন
কুতুবদিয়া দ্বীপে ভালো কোনো রেস্টুরেন্ট না থাকলেও, স্থানীয় হোটেলগুলোতে শুঁটকি, ভর্তা এবং নানা ধরণের মাছ ও মাংস খাওয়া যায়। বড়ঘোপ বাজারে "নিউ মদিনা" এবং "ক্যাফে আলম" রেস্তোরাঁগুলি ভালো খাবার প্রদান করে।
ভ্রমণ টিপস
কুতুবদিয়া দ্বীপে বিদ্যুৎ সরবরাহ জেনারেটর এবং সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে করা হয়। সাগরে নামার আগে অবশ্যই জোয়ার-ভাটার সময় জানা উচিত, বিশেষ করে ভাটার সময় সাগরে নামা থেকে বিরত থাকুন। স্পিড বোট এবং ইঞ্জিন নৌকা সূর্যাস্তের আগে দ্বীপ থেকে ফিরে আসে, তাই সময়টি জেনে রাখুন।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!