মধুপুর জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশের অন্যতম জীববৈচিত্র্যে ভরপুর একটি স্থান। এটি টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর উপজেলায় অবস্থিত, যা ঢাকা থেকে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার দূরে। টাঙ্গাইল শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৪৭ কিলোমিটার। শাল গাছ এই উদ্যানের প্রধান আকর্ষণ, এবং ধারণা করা হয় এটি কয়েক শতাব্দী পুরনো। ১৯৬২ সালে উদ্যানটি বন বিভাগের আওতায় আসে এবং ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ সরকার এটিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে। প্রায় ৮৪,৩৬৬ হেক্টর জুড়ে বিস্তৃত এই উদ্যানের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বংশী নদী, যা এর সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
এখানে বাস করে গারো, কোচ, বামনসহ বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়। উদ্যানের ভেতরে রয়েছে শাল, বহেড়া, আমলকি, আমড়া, বট, অশ্বথ, সর্পগন্ধা, শতমূলী প্রভৃতি বিভিন্ন গাছপালা। প্রাণীর মধ্যে মুখপোড়া হনুমান, চিত্রা হরিণ, লাল মুখ বানর, বন মোরগ, এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও সরীসৃপ উল্লেখযোগ্য।
উপভোগ্য স্থানসমূহ
মধুপুর উদ্যানে রয়েছে হরিণ প্রজনন কেন্দ্র ও পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, যা থেকে পুরো উদ্যানের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এখানে জুই-চামেলীর বাগান, দোখলা রেস্ট হাউজ, বকুল কটেজ, চুনিয়া কটেজসহ বিভিন্ন পিকনিক স্পট রয়েছে। এছাড়াও, স্থানীয় আদিবাসীদের তৈরি রেশম বস্ত্রের জন্য কারিতাস নামে একটি বিক্রয় কেন্দ্রও আছে।
কীভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে সরাসরি সড়কপথে মধুপুর উদ্যানে পৌঁছানো যায়। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বিনিময় ও শুভেচ্ছা পরিবহন সার্ভিস চালু রয়েছে। জনপ্রতি ভাড়া ২৮০-৩৫০ টাকার মধ্যে।
থাকার ব্যবস্থা
উদ্যানের ভেতরে থাকার জন্য রয়েছে দোখলা রেস্ট হাউজ এবং চারটি কটেজ। রাত্রিযাপনের জন্য বন বিভাগের অনুমতি প্রয়োজন। বুকিং পেতে সহকারী বন সংরক্ষকের (০১৯১৪-৫১৭২৫৬) সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
ভ্রমণ পরামর্শ
- হালকা পোশাক ও আরামদায়ক জুতা পরুন।
- সানগ্লাস, টুপি, দূরবিন, এবং পানির বোতল সঙ্গে রাখুন।
- বনের পরিবেশে নীরবতা বজায় রাখুন।
- প্লাস্টিক বা আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন।
- পোকামাকড় এবং জোঁকের ঝামেলা থেকে বাঁচতে সতর্ক থাকুন।
মধুপুর জাতীয় উদ্যান প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অসাধারণ গন্তব্য। সবুজের মাঝখানে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটানোর জন্য এটি হতে পারে আপনার পরবর্তী ভ্রমণ পরিকল্পনার সেরা অংশ।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!