মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি

ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি, যা স্থানীয়দের কাছে রাজবাড়ি নামেও পরিচিত। ময়মনসিংহ শহর থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই স্থাপনাটি বাংলার জমিদার আমলের গৌরবময় ইতিহাসের অনন্য নিদর্শন। জমিদাররা ব্রিটিশদের কাছ থেকে প্রথমে রাজা, পরে মহারাজার উপাধি পেয়েছিলেন, যা রাজবাড়ির মর্যাদা আরও বাড়িয়ে তোলে।

এই জমিদার বাড়ির শাসনকার্য ভাগ হয়ে ছিল ১৬ জন জমিদারের মধ্যে, যারা ১৬টি অংশ পরিচালনা করতেন। বাড়িটির প্রবেশদ্বারে বিশাল সিংহ দরজা চোখে পড়ে, আর ভেতরে রয়েছে জমিদার পরিবারের মায়ের ঘর, মন্দির, দরবার হল, কাচারিঘর, অতিথি কক্ষ, সিন্দুক ঘরসহ নানা ভবন। একসময় রাজবাড়িতে ছিল প্রায় ১০,০০০ বইয়ের একটি দূর্লভ লাইব্রেরি, যার কিছু অংশ এখন সংরক্ষিত রয়েছে মুক্তাগাছা বাংলা একাডেমিতে। প্রায় ১০০ একর জমির উপর নির্মিত এই রাজবাড়ি এখনও প্রাচীন স্থাপত্যশৈলীর অনবদ্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে সংরক্ষিত।

ইতিহাসের পাতা থেকে

মুক্তাগাছার জমিদার আচার্য চৌধুরীর পূর্বপুরুষরা ছিলেন বগুড়ার অধিবাসী। ১৭২৫ সালে শ্রীকৃষ্ণ আচার্য্য মুর্শিদ কুলি খাঁর কাছ থেকে পুরস্কার হিসেবে বিনোদবাড়ির জমিদারি লাভ করেন। পরে বিনোদবাড়ির নাম পরিবর্তন করে মুক্তাগাছা রাখা হয়। শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরী মুর্শিদাবাদের দরবারে রাজস্ব বিভাগে কাজ করতেন এবং ১১৩২ সালে মুক্তাগাছাকে আলাপসিং পরগণার অন্তর্ভুক্ত করেন।

যেভাবে যাবেন মুক্তাগাছা

  • বাসে: ঢাকা থেকে এনা, আলম এশিয়া, শামীম এন্টারপ্রাইজ, শৌখিন বা নিরাপদ পরিবহনের বাসে ৩২০ টাকায় ময়মনসিংহ পৌঁছানো যায়। সময় লাগে ২.৫-৩ ঘণ্টা। ময়মনসিংহ থেকে স্থানীয় বাসে ২০-৩০ টাকায় বা সিএনজিতে ৪০-৪৫ টাকায় মুক্তাগাছা পৌঁছানো যায়। রিজার্ভ নিলে খরচ পড়বে ২০০-২৫০ টাকা।
  • ট্রেনে: তিস্তা এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস, যমুনা এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস কিংবা হাওর এক্সপ্রেসে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যেতে পারেন। সময় লাগবে ৩-৪ ঘণ্টা, ভাড়া ১২০-৫০১ টাকা।
  • সরাসরি বাস: ঢাকা থেকে ইসলাম পরিবহনের বাসে সরাসরি মুক্তাগাছা যাওয়া যায়, যদিও সময় একটু বেশি লাগতে পারে। ব্যক্তিগত গাড়ি থাকলে আরও সুবিধা।

কোথায় থাকবেন

মুক্তাগাছায় কয়েকটি আবাসিক হোটেল আছে, তবে বেশি আরামদায়ক থাকার জন্য ময়মনসিংহ শহরের হোটেল আমির ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল মুস্তাফিজ বা সিলভার ক্যাসেলে থাকতে পারেন।

কোথায় খাবেন ও মুক্তাগাছার বিখ্যাত মন্ডা

মুক্তাগাছার ভ্রমণ যদি বিখ্যাত গোপাল পালের মন্ডা না খেয়ে শেষ করেন, তবে সেটি অপূর্ণ রয়ে যাবে। দেড়শ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মন্ডার স্বাদ নিতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন। মন্ডার দাম প্রতি পিস ৩৫ টাকা, কেজি ৭০০ টাকা।

ভারী খাবার খেতে চাইলে মুক্তাগাছা বাজারে কয়েকটি স্থানীয় হোটেল আছে, তবে আরও ভালো মানের খাবার পেতে ময়মনসিংহ শহরে প্রেসক্লাব ক্যান্টিনের মোরগ পোলাও, হোটেল ধানসিঁড়ি কিংবা হোটেল সারিন্দার সুস্বাদু খাবার উপভোগ করতে পারেন।

শেষ কথা

ঐতিহ্য, ইতিহাস আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়ানো মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি একদিনের ভ্রমণের জন্য আদর্শ স্থান। রাজবাড়ির প্রতিটি ইট, মন্দিরের ঘণ্টা, দরবার হলের নিপুণ কারুকাজ যেন আজও অতীতের গল্প শোনায়। মুক্তাগাছার পথে বেরিয়ে পড়লেই হয়তো আপনি পেয়ে যাবেন বাংলার এক হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের ছোঁয়া।

মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
107.84 কিমি
ময়মনসিংহ থেকে
16.02 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
ব্রহ্মপুত্র নদ
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালা
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্ক
আলেকজান্ডার ক্যাসেল
বিপিন পার্ক
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
মধুপুর জাতীয় উদ্যান
বোটানিক্যাল গার্ডেন, ময়মনসিংহ
ময়না দ্বীপ
জলছত্র আনারস হাট
সন্তোষপুর রাবার বাগান
বিথাঙ্গল বড় আখড়া
পীরগাছা রাবার বাগান
রামগোপালপুর জমিদার বাড়ি
ধনবাড়ি নবাব মঞ্জিল
ধনবাড়ি মসজিদ
মিয়াবাড়ি জামে মসজিদ
শের আলী গাজীর মাজার
লুইস ভিলেজ রিসোর্ট এন্ড পার্ক
দয়াময়ী মন্দির

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন