কিশোরগঞ্জ জেলার ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে দিল্লির আখড়া (Dhillir Akhra) অন্যতম, যা প্রায় সাড়ে চারশত বছরের পুরনো। এটি কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার কাটখাল ইউনিয়নে অবস্থিত একটি মনোরম হাওরাঞ্চলে। যদিও এর নাম দিল্লির আখড়া, বাস্তবে এর ভারতের দিল্লির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। জানা যায়, দিল্লির সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনামলে আধ্যাত্মিক সাধু নারায়ন গোস্বামী এই আখড়াটি প্রতিষ্ঠা করেন। আখড়ার ভেতরে ধর্মশালা, নাটমন্দির, অতিথিশালা, পাকশালা, বৈষ্ণবদেবের থাকার ঘর, এবং সাধক নারায়ন গোস্বামী ও তাঁর অন্যতম শিষ্য গঙ্গারাম গোস্বামীর সমাধি রয়েছে।
দিল্লির আখড়া ও তার আশপাশের এলাকা সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য দুটি পুকুর এবং প্রায় তিন হাজার হিজল গাছ দ্বারা সজ্জিত। নদীর তীরে অবস্থিত এই ঐতিহাসিক আখড়া ও হিজল গাছগুলো মিঠামইন হাওরের সৌন্দর্যকে বিশেষ বৈচিত্র্যময় করেছে।
দিল্লির আখড়ার ইতিহাস
হিজল গাছ ও দিল্লির আখড়া নিয়ে স্থানীয় মানুষের মধ্যে নানা গা ছমছম করা ঘটনা প্রচলিত রয়েছে। সাধক নারায়ন গোস্বামী ছিলেন পার্শ্ববর্তী বিতলঙ্গের আখড়ার আধ্যাত্মিক সাধক রামকৃষ্ণ গোস্বামীর শিষ্য। ওই সময়ে চতুর্দিকে নদী পরিবেষ্টিত এলাকা ছিল ঘন ঝোপ-জঙ্গলে ভরা। রহস্যজনকভাবে এই নদীপথে চলতে থাকা নৌকাগুলো ডুবে যেত কিংবা দুর্ঘটনার শিকার হতো। একদিন দিল্লির সম্রাট পাঠানো একটি কোষা নৌকা নদীপথে যাত্রা করতে গিয়ে ডুবে যায়, আর নৌকার এক যাত্রী সাপের কামড়ে মারা যান। এ খবর শুনে রামকৃষ্ণ, তাঁর শিষ্য নারায়ন গোস্বামীকে ঘটনাস্থলে পাঠান। নারায়ন গোস্বামী নদীর তীরে বসে তপস্যা শুরু করলে, অলৌকিকভাবে তাঁকে হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলা হয়। তিনি তাঁর সাধনার মাধ্যমে তীরে ফিরে আসেন। এভাবে ৭ দিন একই ঘটনা ঘটে।
পরে, একদিন দৈব বাণীর মাধ্যমে নারায়ন গোস্বামীকে স্থান ত্যাগ করার জন্য বলা হয়। নারায়ন গোস্বামী জানতে চান সেই শক্তির পরিচয়, তখন দানব মূর্তি ধারণ করে দৈব কণ্ঠ নিজেকে পরিচয় দেয়। নারায়ন গোস্বামী দানবদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নেন, যাতে তারা মানুষকে ক্ষতি না করে। এরপর দানবেরা হিজল গাছের রূপে পরিণত হয়। পরবর্তীতে, সাধক নারায়ন গোস্বামী তাঁর অলৌকিক ক্ষমতায় কোষা নৌকাটি উদ্ধার করেন এবং সাপের কামড়ে মারা যাওয়া যাত্রীকে জীবিত করেন। এই ঘটনা শুনে দিল্লির সম্রাট জাহাঙ্গীর নারায়ন গোস্বামীর জন্য একটি আখড়া প্রতিষ্ঠা করেন, যার পর থেকে আখড়াটি দিল্লির আখড়া নামে পরিচিতি পায়।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ যেতে হলে প্রথমে কিশোরগঞ্জ শহরে আসতে হবে। ঢাকা থেকে বাস বা ট্রেনে কিশোরগঞ্জ আসা যাবে। ট্রেনে ঢাকা থেকে আসলে সময় লাগবে প্রায় ৪ ঘণ্টা এবং ভাড়া হবে ১৩৫-৩৬৮ টাকা। বাসে আসলে ভাড়া হবে ২৭০-৩৫০ টাকা। কিশোরগঞ্জ পৌছানোর পর, একরামপুর সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে রিকশা অথবা সিএনজি নিয়ে চামটা বন্দর (চামড়া ঘাট) যেতে হবে, যেখান থেকে নৌকা বা ট্রলার নিয়ে দিল্লির আখড়া যেতে পারবেন।
থাকার ব্যবস্থা
মিঠামইন উপজেলায় থাকার খুব ভালো ব্যবস্থা নেই। তবে উপজেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে অথবা মিঠামইন বাজার এলাকায় শিকদার হোটেল ও সোহেল গেস্ট হাউজে থাকা যায়। কিশোরগঞ্জ শহরে রিভার ভিউ, গাংচিল, নিরালা, উজানভাটি, ক্যাসেল সালাম—এ ধরনের ভালো মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে।
কি খাবেন
হাওরের তাজা মাছ খাওয়ার জন্য মিঠামইনের স্থানীয় হোটেলগুলোতে যেতে পারেন, যেখানে বিশেষ ধরনের মাছ রান্না করা হয়।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!