হার্ডিঞ্জ ব্রিজ (Hardinge Bridge) বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহাসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি রেলসেতু, যা পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী এবং কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। এটি পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত এবং রেল যোগাযোগ সহজতর করার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়। ১৯১৫ সালের ৪ মার্চ, তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ এই সেতুটির উদ্বোধন করেন। তাঁর নাম অনুসারেই এটি "হার্ডিঞ্জ ব্রিজ" নামে পরিচিত।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণ ও কাঠামো
১৮৮৯ সালে পদ্মা নদীর ওপর একটি রেলসেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, যা পরবর্তীতে বাস্তবায়িত হয়। পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ভিত্তি নদীর গভীর থেকে প্রায় ১৬০ ফুট নিচ পর্যন্ত স্থাপন করা হয়েছে, যা সে সময়ের মধ্যে অন্যতম গভীর ভিত্তির স্থাপনা ছিল। ব্রিজটির ১৫ নম্বর স্তম্ভের ভিত্তি পানির সর্বনিম্ন সীমা থেকে ১৫৯.৬০ ফুট নিচে এবং সর্বোচ্চ সীমা থেকে ১৯০.৬০ ফুট নিচে স্থাপিত হয়।
এর অনন্য স্থাপত্যশৈলীর জন্য তৎকালীন ব্রিটিশ চিফ ইঞ্জিনিয়ার রবার্ট উইলিয়াম গেইলসকে ‘স্যার’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। বর্তমানে এই ব্রিজের পাশেই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম লালন শাহ সেতু অবস্থিত, যা সড়কপথে সংযোগ স্থাপন করেছে।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এবং আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
হার্ডিঞ্জ ব্রিজের চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নদীর মনোরম দৃশ্য পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। এখানে বেশ কিছু রিসোর্ট এবং পিকনিক স্পট গড়ে উঠেছে, যা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ যোগ করেছে। পদ্মার তীরে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত উপভোগ করাও এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা হতে পারে।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজে কিভাবে যাবেন?
দেশের যেকোনো স্থান থেকে সড়ক বা রেলপথে ঈশ্বরদী পৌঁছে সহজেই হার্ডিঞ্জ ব্রিজে যাওয়া যায়। ঈশ্বরদী রেলওয়ে স্টেশন বা বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশা, টেম্পো বা সিএনজি ভাড়া করে পাকশী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন হার্ডিঞ্জ ব্রিজে পৌঁছানো সম্ভব।
থাকার ব্যবস্থা
পাবনায় বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেখানে আপনি রাতযাপন করতে পারেন। কিছু উল্লেখযোগ্য হোটেলের তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
- হোটেল প্রবাসী ইন্টারন্যাশনাল - ফোন: +৮৮ ০১৭৪৯১৪৮৬৮৫
- হোটেল শিলটন - ফোন: ০৭৩১-৬২০০৬, ০১৭১২-৪৩৩২৪৯
- হোটেল পার্ক - ফোন: ০৭৩১-৬৪০৯৬
- প্রাইম গেস্ট হাউস - ফোন: ০৭৩১-৬৫৭০১, ০৭৩১-৬৬৯০১
- স্বাগতম হোটেল ও চাইনিজ রেস্টুরেন্ট - ফোন: ০৭৩১-৬৪০২৯, ০৭৩১-৬৫৮৬১
- ছায়ানীড় হোটেল - ফোন: ০৭৩১-৬৬১০০, ০৭৩১-৬৫৩৯০
খাবারের ব্যবস্থা
পাবনা শহরের আব্দুল হামিদ রোডে বেশ কিছু ভালো মানের খাবার হোটেল রয়েছে। তার মধ্যে স্বাগতম হোটেল এন্ড চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, ছায়ানীড়, এবং মিড নাইট মুন চাইনিজ রেস্টুরেন্ট জনপ্রিয়। এসব রেস্টুরেন্টে স্থানীয় ও চাইনিজ খাবারের ভালো ব্যবস্থা রয়েছে।
হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ভ্রমণ করলে এর ইতিহাস ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। এটি শুধুমাত্র একটি ব্রিজ নয়, বরং বাংলাদেশের রেল ইতিহাসের একটি অনন্য নিদর্শন।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!