নাটোর জেলার গোপালপুরের আজিমপুর এলাকায় অবস্থিত শহীদ সাগর (Shahid Sagar) মুক্তিযুদ্ধের এক হৃদয়বিদারক অধ্যায়ের সাক্ষী। ১৯৭১ সালের ৫ মে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের শতাধিক কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিককে পাক হানাদার বাহিনী আটক করে এবং মিলের অতিথিশালার সামনে অবস্থিত পুকুর পাড়ে নির্মমভাবে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। সেই সময় পুকুরটি "গোপাল সাগর" নামে পরিচিত ছিল, যা শহীদদের রক্তে লাল হয়ে উঠেছিল। কেবল কয়েকজন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যেতে সক্ষম হন।
স্বাধীনতার পর, এই স্থানকে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে শহীদ সাগর নামে নামকরণ করা হয়। ১৯৭৩ সালের ৫ মে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এখানে শহীদ সাগর স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয় এবং এর পাশে একটি ফুলের বাগান তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে ২০০০ সালের ৫ মে এখানে একটি স্মৃতি যাদুঘর স্থাপন করা হয়। প্রতি বছর ৫ মে শহীদদের স্মরণে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল গণহত্যা দিবস পালন করা হয়।
জনশ্রুতি ও প্রতীকী স্মৃতি
জনশ্রুতি অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের পর দীর্ঘদিন পর্যন্ত পুকুরের পানি লালচে রঙ ধারণ করেছিল, যা শহীদদের আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। এখনও পুকুর পাড়ের সিঁড়িতে প্রতীকী লাল রক্তের চিহ্ন দেখা যায়, যা সেই বিভীষিকাময় ঘটনার স্মারক হয়ে আছে।
কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে নাটোরে পৌঁছানোর জন্য বেশ কয়েকটি পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে—
বাসে:
ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে হানিফ, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, দেশ ট্রাভেলস, গ্রামীণ, তুহিন-এলিট পরিবহন সরাসরি নাটোরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাসভেদে ভাড়া ৫৯০ থেকে ১,৩০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
ট্রেনে:
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে রংপুর এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়ে নাটোর পৌঁছানো যায়। ট্রেনে আসনভেদে ভাড়া ৪২০-১,৪৪৯ টাকা হতে পারে।
স্থানীয় যাতায়াত:
নাটোর জেলা সদর থেকে বাস, সিএনজি বা অটোরিকশায় প্রায় ৩১ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের শহীদ সাগরে পৌঁছানো যায়।
কোথায় থাকবেন?
নাটোর শহরের মাদ্রাসা মোড় ও রেলওয়ে স্টেশনের আশপাশে বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেমন—
- হোটেল ভিআইপি
- হোটেল মিল্লাত
- হোটেল প্রিন্স
- হোটেল রাজ
- হোটেল রুখসানা
- নাটোর বোর্ডিং
কোথায় খাবেন?
নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের কাছে অর্পিতা কফি হাউজ ও গোপালপুর বাজারে হালকা খাবার পাওয়া যায়। নাটোর শহরে কিছু জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টের মধ্যে রয়েছে—
- ওয়ান সেভেন হোটেল (বনপাড়া)
- হোটেল ফাইভ স্টার
- মোল্লা হোটেল
- ক্যাফে হট & চিলি
নাটোরের জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে তাজা মাছ ও কাঁচাগোল্লা অন্যতম।
নাটোরের দর্শনীয় স্থান
শহীদ সাগর ছাড়াও নাটোরের অন্যান্য আকর্ষণীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে—
- চলনবিল জাদুঘর
- চলনবিল
- রানী ভবানীর নাটোর রাজবাড়ী
- উত্তরা গণভবন
শহীদ সাগর শুধু একটি স্থান নয়, এটি মুক্তিযুদ্ধের এক গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষী। স্বাধীনতার জন্য যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাঁদের স্মরণে এটি একটি অনন্য দর্শনীয় স্থান হয়ে উঠেছে।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!