বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর ও যত্নে সংরক্ষিত জমিদার বাড়ি হলো মহেড়া জমিদার বাড়ি (Mohera Jamindar Bari)। টাঙ্গাইল সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে, আট একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও প্রাচীন সভ্যতার এক চমৎকার নিদর্শন। বাড়িটির পাশে রয়েছে ছোট পার্ক, চিড়িয়াখানা, পিকনিক স্পট ও বোট রাইডের সুবিধা, যা এক দিনের ভ্রমণের জন্য আদর্শ। ঢাকার কাছে হওয়ায় সকালে যাত্রা শুরু করলে দিনে ফিরে আসা সম্ভব।
জমিদার বাড়ির গঠন ও স্থাপত্য
বাড়ির প্রবেশ পথেই রয়েছে দু’টি সুরম্য গেট, যা প্রথমেই দর্শকদের মুগ্ধ করে। প্রধান তিনটি ভবন ছাড়াও এখানে রয়েছে নায়েব সাহেবের ঘর, কাছারি ঘর, গোমস্তাদের ঘর, দীঘি এবং আরও তিনটি লজ। প্রবেশ পথের আগে বিশাখা সাগর নামে একটি দীঘি আছে। এছাড়া, পেছনে রয়েছে পাসরা পুকুর ও রানী পুকুর।
১. চৌধুরী লজ
প্রবেশের পরপরই দেখা যায় গোলাপি রঙের চৌধুরী লজ। রোমান স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত ভবনটি ঢেউ খেলানো ছাদ এবং দোতলার সামনে বাগান ও সবুজ মাঠ দিয়ে সাজানো।
২. মহারাজ লজ
বাইজানটাইন স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত মহারাজ লজের সামনে রয়েছে ৬টি কলাম। ভবনের বাঁকানো সিঁড়ি ও ঝুলন্ত বারান্দা ভবনটির সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ভবনটিতে ১২টি কক্ষ, সামনের বাগান এবং পেছনে একটি টেনিস কোর্ট রয়েছে। এটি শুটিং স্পট হিসেবে জনপ্রিয়।
৩. আনন্দ লজ
মহেড়া জমিদার বাড়ির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ভবন হলো আনন্দ লজ। নীল-সাদা রঙের ভবনটির সামনে ৮টি কলাম এবং তিনতলা ঝুলন্ত বারান্দা ভবনটিকে করে তুলেছে দৃষ্টিনন্দন। সামনে রয়েছে হরিণ ও বাঘের মূর্তিসহ একটি বাগান।
৪. কালীচরণ লজ
ইংরেজি ‘ইউ’ আকৃতির এই ভবনটি ইংরেজ স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। বিকেলে ভবনের ভেতর থেকে আলোর প্রতিফলন এক অপূর্ব দৃশ্য তৈরি করে।
এই ভবনগুলো ছাড়াও এখানে রয়েছে নায়েব ভবন, কাছারি ভবন এবং রানী মহল।
টিকেট মূল্য ও অন্যান্য খরচ
- প্রবেশ মূল্য: ৮০ টাকা
- গাড়ি পার্কিং: ৫০ টাকা
- শিশু পার্ক: ২০ টাকা
- সুইমিংপুল: ৩০০ টাকা
- বোট রাইড: দরদাম সাপেক্ষে
কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে টাঙ্গাইল জেলার নাটিয়াপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি বা রিকশায় সহজেই পৌঁছানো যায়। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে বিনিময়, ঝটিকা, ধলেশ্বরী বাস সার্ভিসে টাঙ্গাইল যেতে পারেন (ভাড়া: ২০০-২৫০ টাকা)। নাটিয়াপাড়ায় নেমে সিএনজি/রিকশায় মাত্র ১৫-২০ মিনিটে মহেড়া জমিদার বাড়ি পৌঁছানো যায়।
ট্রেনে যেতে চাইলে উত্তরবঙ্গগামী কোনো ট্রেনের স্টপেজ সম্পর্কে জেনে নিন। মহেরা বা টাঙ্গাইল স্টেশনে নেমে স্থানীয় যানবাহনে বাড়িতে পৌঁছানো সম্ভব।
থাকার ব্যবস্থা
পরিবার নিয়ে এখানে থাকার জন্য প্রতি রাতের ভাড়া ৩,০০০-১০,০০০ টাকার মধ্যে।
খাবারের ব্যবস্থা
মহেড়া পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে একটি ক্যান্টিন রয়েছে, যেখানে আগে থেকে অর্ডার দিয়ে পছন্দমত খাবার পাওয়া যায়।
ভ্রমণ টিপস
বাড়িটির ভেতরে পুলিশ ট্রেনিং একাডেমি পরিচালিত হয়, তাই প্রবেশের আগে অনুমতি নিতে হবে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার জন্য কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলা আবশ্যক। মহেড়া জমিদার বাড়ি ভ্রমণে ঐতিহ্য ও প্রকৃতির এক অনন্য মেলবন্ধন উপভোগ করবেন।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!