বালিয়াটি জমিদার বাড়ি দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রামে, যা মানিকগঞ্জ শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সাতটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা নিয়ে গড়ে ওঠা এই জমিদার বাড়ি ইতিহাসের গৌরব নিয়ে আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। জমিদার বাড়ির বিভিন্ন ভবন বিভিন্ন সময়ে জমিদারদের উত্তরাধিকারীদের মাধ্যমে নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে এটি বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের তত্ত্বাবধানে সংরক্ষণ ও পরিচালিত হচ্ছে। জমিদার বাড়ির কেন্দ্রীয় ভবন, যাকে রংমহল বলা হয়, সেখানে একটি যাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে। এই জমিদার বাড়ি "বালিয়াটি প্যালেস" নামেও পরিচিত।
ঊনবিংশ শতকে নির্মিত এই প্রাসাদটি প্রায় ১৬,৫৫৪ বর্গমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। জমিদার বাড়ির প্রবেশপথের দুই পাশে স্থাপিত রয়েছে সিংহের দুটি মূর্তি। পুরো প্রাঙ্গণটি উঁচু প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। মূল প্রবেশপথ দিয়ে ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়ে সবুজ গাছপালা ঘেরা বিস্তৃত আঙ্গিনা, যেখানে রয়েছে সুন্দর ফুলের বাগান। আঙ্গিনার পেছনে রয়েছে পাশাপাশি চারটি বহুতল ভবন, আর ভবনগুলোর পেছনে চারটি পুকুর ও জমিদারদের অন্দরমহল। প্রাসাদের ভেতরে ২০০টিরও বেশি কক্ষ রয়েছে, প্রতিটি কক্ষে সূক্ষ্ম কারুকাজ লক্ষ্য করা যায়। এই ভবনগুলো নির্মাণে চুন-সুরকি, লোহার পাত ও কাদামাটি ব্যবহার করা হয়েছে, আর দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় ২০ ইঞ্চি। জমিদার বাড়ির নির্মাণ কৌশল এবং কারুকাজ তৎকালীন জমিদারদের ঐশ্বর্য ও রুচির পরিচায়ক।
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি ভ্রমণের সময়সূচি
- গ্রীষ্মকাল (এপ্রিল-সেপ্টেম্বর): সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা।
- শীতকাল (অক্টোবর-মার্চ): সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা।
- শুক্রবার: দুপুর ১২:৩০ থেকে ২:৩০ পর্যন্ত নামাজের জন্য বন্ধ থাকে।
- সাপ্তাহিক ছুটি: রবিবার পূর্ণ দিবস এবং সোমবার অর্ধদিবস।
সরকারি ছুটির দিনেও এটি বন্ধ থাকে।
প্রবেশ ফি
- বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য: ৩০ টাকা।
- বিদেশি নাগরিকদের জন্য: ২০০ টাকা।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে:
- গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে আরিচা বা মানিকগঞ্জগামী বাসে সাটুরিয়া নামতে হবে। এস বি লিংক পরিবহনে যাওয়া সুবিধাজনক। সাটুরিয়া জিরো পয়েন্ট থেকে বালিয়াটি জমিদার বাড়ি মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে। ইজিবাইক বা সিএনজিতে ২০-৩০ টাকায় পৌঁছানো যায়।
- উত্তরা থেকে আব্দুল্লাপুর হয়ে নবীনগর পর্যন্ত এসে স্মৃতিসৌধের সামনে থেকে সাটুরিয়াগামী বাস ধরে পৌঁছাতে পারেন।
দেশের অন্যান্য স্থান থেকে:
- প্রথমে মানিকগঞ্জ এসে সেখান থেকে স্থানীয় পরিবহনে সাটুরিয়া পৌঁছে একইভাবে বালিয়াটি জমিদার বাড়িতে যেতে পারবেন।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
বালিয়াটি জমিদার বাড়ির পাশাপাশি মানিকগঞ্জের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলোও দেখতে পারেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- তেওতা রাজবাড়ি
- আরিচা ঘাট
- শাহ রুস্তমের মাজার
- ঈমামপাড়া জামে মসজিদ
- নবরত্ন মন্দির
- ধানকরা জমিদার বাড়ি
- ইব্রাহিম শাহের মাজার
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!