নিঝুম দ্বীপ নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার অন্তর্গত বঙ্গোপসাগরের কোলে অবস্থিত একটি অনিন্দ্য সুন্দর দ্বীপ। প্রায় ১৪,০৫০ একর আয়তনের এই দ্বীপটি মূলত কামলার চর, বল্লার চর, চর ওসমান ও চর মুরি নামক চারটি ছোট দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত। শীতকালে দ্বীপটি হয়ে ওঠে হাজারো অতিথি পাখির অভয়ারণ্য। এখানে সরালি, জিরিয়া, রাজহাঁস, গাংচিল, পেলিক্যানসহ প্রায় ৩৫ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। এছাড়া দ্বীপের বনাঞ্চলে চিত্রা হরিণ, বন্য শূকর, বানর, শেয়াল এবং নানা প্রজাতির সাপের বিচরণ রয়েছে।
হরিণ ও পাখির রাজ্য
নিঝুম দ্বীপে প্রায় ৪০,০০০ চিত্রা হরিণের বাস। সকালে স্থানীয় গাইডের সাহায্য নিয়ে সহজেই ম্যানগ্রোভ বনে হরিণ দেখতে পারবেন। পাখির প্রেমীদের জন্য পার্শ্ববর্তী কবিরাজের চর ও দমার চর আদর্শ স্থান। সূর্যাস্তের সময় কবিরাজের চরে হাজারো মহিষের পাল যেন এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তৈরি করে।
দর্শনীয় স্থান ও অভিজ্ঞতা
- কবিরাজের চর: বিকেলে চৌধুরীর খাল দিয়ে হাঁটলে হরিণের দেখা মেলে।
- কমলার দ্বীপ: এখানে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ে। চাইলে স্থানীয়দের কাছ থেকে টাটকা ইলিশ কিনতে পারেন।
- দমার চর: দক্ষিণ প্রান্তের নতুন সী বিচ "ভার্জিন আইল্যান্ড" নামে পরিচিত। নানা অচেনা পাখির দেখা মেলে।
- নামার বাজার সি বীচ: ১০ মিনিট হাঁটলেই এই সমুদ্র সৈকতে পৌঁছাতে পারবেন। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি বারবিকিউ করার সুযোগও রয়েছে।
নিঝুম দ্বীপে যাওয়ার সেরা সময়
অক্টোবর থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো। বর্ষাকালে সাগর উত্তাল থাকায় ভ্রমণে সতর্কতা প্রয়োজন।
কীভাবে যাবেন নিঝুম দ্বীপে
➡️ বাসে: ঢাকা থেকে নোয়াখালীর সোনাপুর পর্যন্ত বাসে (৫৫০–৮০০ টাকা) গিয়ে সিএনজি বা অটোরিকশায় চেয়ারম্যান ঘাট (৪৫০–৫০০ টাকা)। সেখান থেকে সি-ট্রাক, ট্রলার বা স্পিডবোটে হাতিয়া, পরে মোটরসাইকেল ও ট্রলারে নিঝুম দ্বীপ।
➡️ ট্রেনে: ঢাকা থেকে নোয়াখালী মাইজদি পর্যন্ত ট্রেনে (৩১৫ টাকা)। মাইজদি থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে চেয়ারম্যান ঘাট (৫০০–৬০০ টাকা)। তারপর আগের মতোই সি-ট্রাক ও ট্রলারে দ্বীপে যাওয়া যায়।
➡️ লঞ্চে: ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রতিদিন বিকাল ৫:৩০-এ লঞ্চ (ডেক ৩৫০ টাকা, কেবিন ১২০০–২২০০ টাকা) তমুরদ্দি ঘাটে পৌঁছে। এরপর মোটরসাইকেল ও ট্রলারে সহজেই নিঝুম দ্বীপে যাওয়া যায়।
থাকার ব্যবস্থা
- নিঝুম রিসোর্ট: ১৫০০–৩০০০ টাকায় বিভিন্ন মানের রুম। অফ-সিজনে ৫০% ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়।
- হোটেল দ্বীপ সম্পদ: সাধারণ মানের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা।
- মসজিদ বোর্ডিং: সাশ্রয়ী থাকতে চাইলে ২০০–৪০০ টাকায় সাধারণ রুম পাওয়া যায়।
খাবার ও অন্যান্য সুবিধা
- স্থানীয় খাবারের মধ্যে সামুদ্রিক মাছ, চিংড়ি, মোটা চালের ভাত পাওয়া যায়।
- নিঝুম রিসোর্ট বারবিকিউয়ের ব্যবস্থা করে দেয়।
- দ্বীপে বিদ্যুৎ না থাকায় সোলার ও জেনারেটরের উপর নির্ভর করতে হয়, তাই পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে যাওয়া ভালো।
ভ্রমণ পরামর্শ
- সি-ট্রাক ও ট্রলার চলাচল জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভর করে। বিকাল ৫টার পর ট্রলার পাওয়া যায় না।
- ক্যাম্পিং করতে চাইলে নামার বাজারেই সব সরঞ্জাম পাওয়া যায়।
- দ্বীপের মানুষজন সহজ-সরল, তাই তাদের সঙ্গে সদাচারণ করা উচিত।
- নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানে বোট রিজার্ভ করতে মাঝি আলতাব হোসেনের (০১৭৭৭-১১৫৪৬৩) সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।
নিঝুম দ্বীপ প্রকৃতির এক অনন্য উপহার। কোলাহলমুক্ত পরিবেশ, বন্যপ্রাণীর অবাধ বিচরণ, আর দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্রসৈকত—সব মিলিয়ে নিঝুম দ্বীপ হতে পারে আপনার স্বপ্নের গন্তব্য!
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!