সিরাজগঞ্জ জেলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে শাহজাদপুর উপজেলায় অবস্থিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈত্রিক জমিদার বাড়িটি রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি নামে পরিচিত। অষ্টাদশ শতাব্দীতে এটি নীলকুঠি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ১৮৪২ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ইংরেজদের নিলাম থেকে এটি ক্রয় করেন।
১৮৯০ থেকে ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭ বছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারি কাজের জন্য এই কাছারি বাড়িতে অবস্থান করেন। এখানে বসেই তিনি চিত্রা, সোনার তরী, চৈতালি, গীতাঞ্জলি ও বিসর্জন-এর মতো কালজয়ী সাহিত্যকর্ম রচনা করেন। জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর ১৯৬৯ সালে শিলাইদহের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ির মতোই প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে এটি সংরক্ষিত হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালে এটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
রবীন্দ্র কাছারি বাড়ির স্থাপত্য ও জাদুঘর
প্রায় ১০ বিঘা জমির ওপর নির্মিত ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীর এই বাড়িটি বর্তমানে রবীন্দ্র জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
🔹 প্রদর্শনীগুলো:
- জাদুঘরের প্রথম ও দ্বিতীয় তলার ১৬টি কক্ষে সংরক্ষিত রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শৈশব থেকে প্রৌঢ় বয়স পর্যন্ত বিভিন্ন ছবি, আলোকচিত্র ও ব্যবহৃত সামগ্রী।
- কবির আঁকা চিত্রকর্ম, তার ব্যবহৃত কাঠের চেয়ার, টি-টেবিল, পালকি, স্পিডবোট, পালঙ্কসহ আরও নানা ঐতিহাসিক জিনিস এখানে প্রদর্শিত হয়েছে।
- প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক এবং রবীন্দ্রপ্রেমী দর্শনার্থী কবির স্মৃতিবিজড়িত এই স্থান ঘুরে দেখতে আসেন।
প্রবেশমূল্য ও সময়সূচী
✅ জাদুঘর খোলা থাকে:
📅 মঙ্গলবার থেকে শনিবার – সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত
📅 সোমবার – দুপুর ২:৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬:৩০ পর্যন্ত
📅 শুক্রবার: ১২:৩০ থেকে ২:৩০ পর্যন্ত নামাজের বিরতি
💰 প্রবেশমূল্য:
- বাংলাদেশি দর্শনার্থীদের জন্য ২০ টাকা
- বিদেশি পর্যটকদের জন্য ১০০ টাকা
কিভাবে যাবেন?
🚍 বাসে:
- ঢাকার গাবতলী বা মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে শ্যামলী, আল-হামরা, ইউনিক, সীমান্ত সুপার সার্ভিস, এসআই, অভি বা উত্তরবঙ্গগামী বাসে সিরাজগঞ্জ পৌঁছানো যায়।
- এসি/নন-এসি বাসের ভাড়া ৫০০ থেকে ১৩০০ টাকা।
🚆 ট্রেনে:
- ঢাকার কমলাপুর বা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে যাওয়া যায় (শনিবার ব্যতীত সপ্তাহে ৬ দিন)।
- ট্রেনের টিকিটের মূল্য ২০০-৩৬৮ টাকা।
সিরাজগঞ্জ জেলা শহর থেকে অটোরিকশা বা সিএনজি নিয়ে সহজেই রবীন্দ্র কাছারি বাড়ি পৌঁছানো যায়।
কোথায় থাকবেন?
সিরাজগঞ্জ শহরে বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে:
🏨 হোটেল আলিশান
🏨 হোটেল অনিক
🏨 আরমানী কমপ্লেক্স
🏨 জয়সাগর রেস্ট হাউজ
🏨 উল্লাপাড়া ডাকবাংলো
কোথায় খাবেন?
শাহজাদপুরের কিছু জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট:
🍽 হোটেল ঘরোয়া
🍽 ফয়সাল ক্যাফে
🍽 আপ্যায়ন হোটেল
🍽 হাজি বিরিয়ানি
এটি এক অনন্য ঐতিহ্যবাহী স্থান, যেখানে কবিগুরুর সাহিত্য ও ইতিহাসের সংস্পর্শে আসার সুযোগ মেলে।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!