বাংলা সাহিত্যের একজন গুণী ব্যক্তিত্ব কাজী কাদের নওয়াজ, যিনি ছিলেন একজন কবি, শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যপ্রেমী। যদিও সাহিত্যের প্রায় সব শাখাতেই তিনি দক্ষ ছিলেন, তবে কবিতার প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিল বিশেষভাবে দৃশ্যমান। রবীন্দ্র-ভাবধারার কিছুটা প্রভাব থাকলেও তাঁর লেখায় নিজস্বতা ও মৌলিক চিন্তার ছাপ স্পষ্টভাবে প্রকাশ পায়। প্রকৃতি, প্রেম, দেশপ্রেম, সত্য ও সৌন্দর্যের প্রতি টান ছিল তাঁর কবিতার মূল উপজীব্য। তাঁর বহু সাহিত্যকর্ম বিভিন্ন সাময়িকী ও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। আজও তাঁর লেখা "শিক্ষাগুরুর মর্যাদা" কবিতাটি প্রাথমিক শিক্ষার অংশ হিসেবে পঞ্চম শ্রেণিতে পাঠ্য।
তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম
কাজী কাদের নওয়াজের বিখ্যাত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে— মরাল (১৯৩৬), দাদুর বৈঠক (১৯৪৭), নীল কুমুদী (১৯৬০), মণিদীপ, ওস্তাদের কদর, মা, প্রায়শ্চিত্ত, চাঁদদিঘী, হারানো টুপি, কালের হাওয়া, মরুচন্দ্রিকা, দুটি পাখি দুটি তারা (১৯৬৬), এবং উতলা সন্ধ্যা প্রভৃতি। বাংলা সাহিত্যে তাঁর অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৩) ও মাদার বখশ পুরস্কার সহ একাধিক সম্মাননা।
সংক্ষিপ্ত জীবনী
১৯০৯ সালের ১৫ জানুয়ারি, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার তালেবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী কাদের নওয়াজ। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট গ্রামে। বর্ধমানের মাথরুন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯২৩ সালে মাধ্যমিক পাশ করার পর, তিনি বহরমপুর কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে অনার্সসহ বিএ এবং এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৩২ সালে শিক্ষাবিভাগে সাব-ইন্সপেক্টর পদে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ১৯৪৬ সালে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে উন্নীত হন। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৭ সালে তিনি ঢাকার নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এবং পরে দিনাজপুর জেলা স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন।
অবসরের পর ১৯৬৬ সালে তিনি মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার মুজদিয়া গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৮৩ সালের ৩ জানুয়ারি তাঁর জীবনাবসান ঘটে। সাহিত্যপ্রেমী ও ভ্রমণপিয়াসীরা আজও শ্রদ্ধাভরে তাঁর স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি পরিদর্শনে যান।
কিভাবে যাবেন কবির বাড়ি
কাজী কাদের নওয়াজের বাড়ি যেতে হলে প্রথমে মাগুরা জেলা সদরের ভায়না মোড় থেকে নতুন বাজার হয়ে শ্রীপুর বাজার যেতে হবে। সেখান থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরত্বে মুজদিয়া গ্রামে অবস্থিত তাঁর স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি।
ঢাকা থেকে মাগুরা যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে সরাসরি মাগুরা যাওয়া যায় বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার মাধ্যমে। সোহাগ, হানিফ, দ্রুতি, ঈগল ইত্যাদি পরিবহনের এসি ও নন-এসি বাসে সহজেই মাগুরা পৌঁছানো যায়। ভাড়ার পরিমাণ বাসের ধরন অনুযায়ী ৫৮০ থেকে ১৩০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।
কোথায় থাকবেন
মাগুরা শহরে আবাসনের সুযোগ সীমিত হলেও কিছু পরিচ্ছন্ন ও সাশ্রয়ী হোটেল রয়েছে। হোটেল চলনতিকা ও ছায়া বিথী এদের মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও জেলা পরিষদের ডাকবাংলো ও মাগুরা সার্কিট হাউজে প্রশাসনিক অনুমতি সাপেক্ষে রাত্রিযাপন করা যায়।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!