মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্র

বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত মহাকাব্যিক উপন্যাস বিষাদ সিন্ধু'র রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেন ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর কুষ্টিয়ার লাহিনীপাড়া গ্রামে তাঁর মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। মীর মশাররফ হোসেনের পিতা মীর মোয়াজ্জেম হোসেন রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে বাস করতেন। মীর মশাররফ হোসেনের পূর্বপুরুষ, সৈয়দ সাদুল্লাহ, বাগদাদ থেকে দিল্লি এবং পরবর্তীতে ফরিদপুর জেলার স্যাকরা গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন।

মীর মশাররফ হোসেনের শিক্ষা জীবন কুষ্টিয়া, ফরিদপুর এবং কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে অতিবাহিত হয়। নিজ গৃহ থেকে তিনি তাঁর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর মোট গ্রন্থ সংখ্যা প্রায় ৩৭টি। তিনি বিশুদ্ধ বাংলায় গদ্য, পদ্য, প্রবন্ধ, নাটক এবং উপন্যাস লিখেছেন। 'জমিদার দর্পন' নাটকের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ নাট্যকারের মর্যাদা অর্জন করেন।

মীর মশাররফ হোসেনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা বিষাদ সিন্ধু বাংলা সাহিত্যের একটি অমূল্য রত্ন। বাংলা মুসলিম সমাজে এটি আজও ধর্মগ্রন্থের মতোই শ্রদ্ধার সাথে পাঠ করা হয়। তিনি ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর পদমদী নিজ গৃহে মৃত্যুবরণ করেন এবং তাঁর স্ত্রী কুলসুমের সমাধির পাশে সমাহিত হন।

মীর মশাররফ হোসেনের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ২০০১ সালে মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। প্রায় দুই একর জায়গায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র (Mir Mosharraf Hossain Memorial Museum) ২০০৫ সালে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এখানে সংগ্রহশালা, ১০০ আসনের সেমিনার কক্ষ, দফতর, গ্রন্থাগার, অতিথি কক্ষ, অভ্যর্থনা কক্ষ, ডাইনিং, কিচেন এবং প্রসাধন কক্ষ রয়েছে। বর্তমানে অসংখ্য দর্শনার্থী এই স্মৃতিকেন্দ্র পরিদর্শন করেন।

সময়সূচী: শুক্র ও শনিবার সহ সরকারি ছুটির দিনে মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র বন্ধ থাকে।

যেভাবে যাবেন

ঢাকার গাবতলি থেকে রাবেয়া, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, রাজবাড়ী পরিবহণ, সপ্তবর্ণা, সাউদিয়া বাসে চড়ে পাদ্মা সেতু পার হয়ে রাজবাড়ী যেতে জনপ্রতি ৫০০ টাকা ভাড়া লাগে। এছাড়া ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস, মধুমতি এক্সপ্রেস, এবং বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে রাজবাড়ী আসতে পারবেন। ট্রেনে আসনভেদে ভাড়া ৩৪০ থেকে ৭৮২ টাকা হতে পারে। রাজবাড়ী জেলা শহর থেকে অটোরিকশা রিজার্ভ করে সরাসরি মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র যেতে পারবেন।

থাকার জায়গা

রাজবাড়ী জেলায় কয়েকটি সরকারি ডাক বাংলো এবং আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেমন – হোটেল পার্ক, কেনটন চাইনিজ হোটেল, গুলশান বোডিং, প্রাইম হোটেল, পাংশা ডাক বাংলো, বালিয়াকান্দি ডাক বাংলো, গোয়ালন্দ ডাক বাংলো।

খাবারের জায়গা

মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্রে খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই। পদমদী থেকে ২ কিলোমিটার দূরে আনন্দ বাজারে সাধারণ মানের কিছু হোটেল রয়েছে। তবে রাজবাড়ীতে বিভিন্নমানের খাবারের হোটেলে আপনার প্রয়োজনীয় খাবার খেতে পারবেন। এছাড়া ভাদু শাহার দোকানের চমচম, রেলগেইটের হৈরা শাহের চপ এবং ঝালাই পট্টির কুলফি মালাইও বিশেষভাবে সুস্বাদু।

মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতিকেন্দ্র এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
89.93 কিমি
রাজবাড়ী থেকে
13.13 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
কল্যাণ দীঘি
জামাই পাগলের মাজার
সিদ্ধেশ্বরী মঠ
মথুরাপুর দেউল
শ্রীপুর জমিদার বাড়ি
কবি কাজী কাদের নওয়াজের বাড়ি
শৈলকুপা জমিদার বাড়ি
মধুমতি নদী
মাগুরার ভাতের ভিটা
গাজনার বিল
কে পি বসুর বাড়ি
কানাইপুর জমিদার বাড়ি
পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের বাড়ি
ফরিদপুর পৌর শেখ রাসেল শিশুপার্ক
সাতৈর মসজিদ
শৈলকুপা শাহী মসজিদ
তেওতা জমিদার বাড়ি
রাজা সীতারাম রাজপ্রাসাদ
দুবলিয়া মেলা
গেরদা ফলক

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন