রিসাং ঝর্ণা

খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার সাপমারা গ্রামে অবস্থিত অপূর্ব সুন্দর রিসাং ঝর্ণা। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘সাপ মারা রিসাং ঝর্ণা’ নামে পরিচিত। মারমা ভাষায় "রিছাং" শব্দের অর্থ হলো উঁচু স্থান থেকে জলরাশি গড়িয়ে পড়া। এই ঝর্ণার আরেকটি নাম তেরাং তৈকালাই

রিসাং ঝর্ণা কোথায়?
আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র থেকে রিসাং ঝর্ণার দূরত্ব মাত্র ৩ কিলোমিটার। খাগড়াছড়ি-ঢাকা মহাসড়ক থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার হাঁটলেই এই ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

রিসাং ঝর্ণার পাশেই আরেকটি ঝর্ণা!

রিসাং ঝর্ণা থেকে মাত্র ২০০ গজ ভেতরে রয়েছে আরেকটি ঝর্ণা, যা "রিছাং ঝর্ণা-২" বা "অপু ঝর্ণা" নামে পরিচিত। পর্যটকদের সুবিধার্থে এখানে পাকা সিঁড়ি পথ তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ৩০ মিটার উঁচু পাহাড় থেকে ঝর্ণার পানি নিচে পড়ার দৃশ্য ঘন্টার পর ঘন্টা উপভোগ করার মতো। চাইলে ঝর্ণার পানিতে অবগাহন করেও সতেজ হয়ে উঠতে পারেন!

কিভাবে যাবেন?

খাগড়াছড়ি জেলা শহর থেকে রিসাং ঝর্ণা প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে। আপনি জীপ, প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাসে ঝর্ণার কাছাকাছি এসে কিছুটা পথ হেঁটে গেলেই এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

পরিবহন ব্যবস্থা:
  • চান্দের গাড়ি / সিএনজি: খাগড়াছড়ি থেকে সরাসরি ভাড়া নিয়ে ঝর্ণার কাছাকাছি যেতে পারবেন। তবে প্রায় ৫০০ মিটার আগে গাড়ি নামিয়ে দেবে, বাকি পথ হেঁটে যেতে হবে।
  • লোকাল বাস: খাগড়াছড়ি সদর থেকে লোকাল বাস বা চান্দের গাড়িতে আলুটিলা গুহার সামনে নামতে হবে। সেখান থেকে হৃদয় মেম্বারের এলাকা পর্যন্ত লোকাল বাসে জনপ্রতি ভাড়া ৫ টাকা। এরপর দুই কিলোমিটার পায়ে হাঁটা বা বাইকে করে ঝর্ণায় যেতে হবে।
  • বাইক ভাড়া: শুধু একমুখী যাত্রার জন্য ৫০ টাকা, আর যাওয়া-আসার জন্য ১০০ টাকা

রিসাং ঝর্ণার আশেপাশে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

আপনি চাইলে রিসাং ঝর্ণার পাশাপাশি আলুটিলা গুহা, বৌদ্ধ মন্দির, দেবতা পুকুর ও ঝুলন্ত ব্রিজ একসঙ্গে ঘুরে দেখতে পারেন। পুরো ভ্রমণে ৪-৫ ঘণ্টা লাগবে।

পরিবহনের খরচ:
  • চান্দের গাড়ি (১০-১৫ জন): ২০০০-৩০০০ টাকা
  • সিএনজি রিজার্ভ: ৮০০-১০০০ টাকা
  • খাগড়াছড়ি জিপ পরিবহন মালিক সমিতির নির্ধারিত ভাড়া: ৫০০০ টাকা

কিভাবে খাগড়াছড়ি যাবেন?

ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি:

  • শান্তি, হানিফ, এস আলম, শ্যামলী, ইকোনো এবং ঈগল পরিবহনের এসি/নন-এসি বাসে সরাসরি যাওয়া যায়।
  • নন-এসি বাসের ভাড়া: ৭৫০-৮৫০ টাকা
  • এসি বাসের ভাড়া: ১০০০-১৬০০ টাকা

চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি:

  • অক্সিজেন মোড় থেকে বি আর টি সি ও শান্তি পরিবহণের বাস খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
  • সকাল ৭টা থেকে প্রতি ১-২ ঘণ্টা পর পর বাস ছেড়ে যায়।
  • লোকাল বাসের ভাড়া: ১৮০-২৫০ টাকা
  • সময়সীমা: ৪-৫ ঘণ্টা

কোথায় থাকবেন?

খাগড়াছড়ি শহরে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। আপনি চাইলে ৪০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকা পর্যন্ত বাজেট অনুযায়ী হোটেল বেছে নিতে পারেন।

কিছু ভালো মানের হোটেল:
হোটেলের নামরুমের ধরনভাড়া (টাকা)যোগাযোগ
পর্যটন মোটেলএসি (২ বেড)২১০০০৩৭১-৬২০৮৪৮৫
পর্যটন মোটেলনন-এসি১৩০০০৩৭১-৬২০৮৪৮৫
হোটেল গাইরিংএসি/নন-এসি/ভিআইপি১০০০-৩০০০০৩৭১-৬১০৪১, ০১৮১৫-১৬৩১৭৩
অরণ্য বিলাসটুইন বেড এসি২৫০০০১৮৩৮-৪৯৭২৫৭
গিরি থেবারভিআইপি এসি৩০৫০০১৮৫৯-০২৫৬৯৪
হোটেল ইকো ছড়ি ইন--০৩৭১-৬২৬২৫, ৩৭৪৩২২৫
কম খরচে থাকার জায়গা:

যদি কম খরচে থাকতে চান, তাহলে শাপলা চত্বরের আশেপাশে বোর্ডিং হোটেলে ৩০০-৪০০ টাকা খরচে থাকতে পারবেন।

কোথায় খাবেন?

খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর ও বাস স্ট্যান্ড এলাকায় বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট আছে। তবে পাহাড়ি খাবারের স্বাদ নিতে চাইলে পানথাই পাড়ার ‘সিস্টেম রেস্তোরা’-তে যেতে পারেন। এখানে পাওয়া যায় কফি, হাঁসের কালাভুনা, বাঁশকুড়ুল ও ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি খাবার।

শেষ কথা

রিসাং ঝর্ণা শুধু একটি জলপ্রপাত নয়, এটি প্রকৃতির অপূর্ব এক দান। পাহাড়ের মাঝখানে এই ঝর্ণার শীতল জলরাশি যে কাউকেই মুগ্ধ করবে। যদি প্রকৃতির নিবিড় সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, তাহলে রিসাং ঝর্ণায় একবার ঘুরে আসতেই হবে।

রিসাং ঝর্ণা এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
176.81 কিমি
খাগড়াছড়ি থেকে
6.21 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
আলুটিলা গুহা
হর্টিকালচার হ্যারিটেজ পার্ক
নিউজিল্যান্ড পাড়া
মাতাই পুখিরি
মায়াবিনী লেক
তৈদুছড়া ঝর্ণা
পানছড়ি শান্তিপুর অরণ্য কুঠির
মহামুনি বৌদ্ধ বিহার
মানিকছড়ি মং রাজবাড়ী
হাজাছড়া ঝর্ণা
কুমারীকুন্ড
শমসের গাজীর সুড়ঙ্গ পথ
শমসের গাজীর বাঁশের কেল্লা রিসোর্ট
সোনাইছড়ি ট্রেইল
মহামায়া লেক
খৈয়াছড়া ঝর্ণা
হাজারিখিল অভয়ারণ্য
নাপিত্তাছড়া ঝর্ণা ও ট্রেইল
হ্যাপি আইল্যান্ড
আরণ্যক হলিডে রিসোর্ট

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন