শাপলা গ্রাম, সাতলা

শাপলা গ্রাম সাতলা যেন এক শাপলার রাজ্য। এখানকার বিলের পানিতে ফুটে থাকা হাজারো লাল শাপলা সূর্যের লাল আভাকেও হার মানায়। বরিশাল সদর থেকে সাতলা গ্রামের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা গ্রামের বিলগুলো স্থানীয়দের কাছে শাপলার বিল নামে পরিচিত। এখানে কবে থেকে শাপলা ফোটা শুরু হয়েছে তার সঠিক তথ্য না জানা গেলেও, এখানে লাল, সাদা ও বেগুনি—এই তিন রঙের শাপলা ফুল ফোটে। তবে লাল শাপলার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

সাতলা গ্রামের প্রায় ১০ হাজার একর জলাভূমিতে শাপলা ফোটে। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ শাপলা বিক্রির সাথে যুক্ত। সাতলা গ্রাম থেকেই সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে শাপলা ফুল সরবরাহ করা হয়। শাপলার ছবি তোলার জন্য ফটোগ্রাফারদের কাছে সাতলা একটি আদর্শ স্থান।

সাতলা কখন যাবেন?

সাধারণত আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এই তিন মাস এখানে শাপলা ফোটে। বছরের এই সময়ে সাতলা গ্রামে গেলে হাজারো শাপলা দেখতে পাবেন। তবে শাপলা দেখতে হলে খুব সকালে যেতে হবে, কারণ সকাল গড়ানোর সাথে সাথে শাপলা ফুল বুজে যায় অথবা ব্যবসায়ীরা ফুল তুলে বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যায়। তাই সবচেয়ে ভালো উপায় হলো এক রাত গ্রামে থেকে ভোরে শাপলা বিলে যাওয়া।

সাতলা যাওয়ার উপায়

বরিশাল থেকে বাসে শিকারপুর এসে অটো ভাড়া করে উত্তর সাতলা যেতে পারেন। এছাড়া ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার সময় উজিরপুরের নুতনহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে নেমে সরাসরি অটো করে সাতলা শাপলা বিলে যেতে পারেন। অথবা বরিশালের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে সাতলা ও বাগধা গ্রামে যাওয়ার সরাসরি বাস সার্ভিস রয়েছে, যা আপনাকে ২ ঘন্টায় গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। এছাড়াও বরিশাল থেকে মহেন্দ্র গাড়ি ভাড়া করেও শাপলা গ্রাম সাতলা ঘুরে আসতে পারেন।

ঢাকা থেকে বরিশাল

সড়কপথে ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে প্রায় ৭-৮ ঘন্টা সময় লাগে। গাবতলি বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন পরিবহণের বাস চলাচল করে। শাকুরা, ঈগল ও হানিফ পরিবহনের এসি/নন-এসি বাসের টিকেট মূল্য ৬০০ থেকে ১৩০০ টাকা (পরিবর্তনশীল)। ঢাকা থেকে বরিশালগামী বাসগুলো সাধারণত বরিশাল শহরের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে থামে।

ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার জন্য লঞ্চও একটি ভালো মাধ্যম। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে বরিশালগামী লঞ্চ ছেড়ে যায়, যা পরদিন ভোরে বরিশাল ঘাটে পৌঁছায়। ভালো সার্ভিসের লঞ্চের মধ্যে রয়েছে এমভি মানামী, কুয়াকাটা ২, কীর্তনখোলা ১০, এডভেঞ্চার ১, এডভেঞ্চার ৯, সুন্দরবন ৯, সুন্দরবন ১০, সুরভী ৭, সুরভী ৮, পারাবত ৯ ও পারাবত ১১। ডেকের ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১২০০-১৪০০ টাকা, ডাবল কেবিন ২২০০-২৫০০ টাকা এবং ভিআইপি কেবিন ৫০০০-৮০০০ টাকা।

কোথায় থাকবেন?

সাতলায় থাকার ভালো কোনো ব্যবস্থা নেই। ভালো কোনো জায়গায় থাকতে চাইলে বরিশাল শহরে ফিরে যেতে হবে। তবে যদি সাতলা গ্রামেই রাত কাটাতে চান, তাহলে স্থানীয় স্কুলে বা কোনো গৃহস্থের বাড়িতে কথা বলে রাত্রিযাপন করতে পারেন। সাতলা গ্রামের মানুষ অতিথিপরায়ন এবং তারা খুশি মনে আতিথিয়তা করে।

বরিশাল শহরে বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল রয়েছে, যেখানে অনায়াসে রাত্রি যাপন করতে পারবেন। এর মধ্যে হোটেল গ্র্যান্ড পার্ক, রিচমার্ট গেস্ট হাউজ, হোটেল এরিনা, এথেনা, সেডোনা ও রোদেলা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া পোর্ট রোড ও সদর রোডের পাশে কিছু কম বাজেটের হোটেলও রয়েছে।

শাপলা গ্রাম, সাতলা এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
106.11 কিমি
বরিশাল থেকে
34.94 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের পৈত্রিক বাড়ী
শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর
নয় গম্বুজ মসজিদ
বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ
গুটিয়া মসজিদ
ভাসমান পেয়ারা বাজার
কীর্তিপাশা জমিদার বাড়ি
দুর্গাসাগর দিঘী
শেখ রাসেল শিশু পার্ক
বিল রুট ক্যানেল
ভূতিয়ার পদ্মবিল
লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি
পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি
উলপুর জমিদার বাড়ি
গাবখান সেতু
সাতুরিয়া জমিদার বাড়ি
আড়পাড়া মুন্সীবাড়ি
রায়েরকাঠী জমিদার বাড়ি
সুজাবাদ কেল্লা
অক্সফোর্ড মিশন

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন