অক্সফোর্ড মিশন চার্চ (Oxford Mission Church) প্রাচ্যের ভেনিস নামে পরিচিত বরিশাল বিভাগের বগুড়া রোডে অবস্থিত। বাংলাদেশের অন্যতম শৈল্পিক গির্জা স্থাপত্যের নিদর্শন এই অক্সফোর্ড মিশন চার্চকে এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম গির্জা হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রাচীন এই গির্জাটির মূল নাম ইপিফানি চার্চ হলেও এটি অক্সফোর্ড মিশন নামেই বেশি পরিচিত। সিস্টার এডিথের নকশায় ১৯০৩ সালে গির্জাটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ফাদার স্ট্রংয়ের নির্দেশনায় ১৯০৭ সালে এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়।
অক্সফোর্ড মিশন চার্চটি দেখতে একতলা হলেও এর উচ্চতা প্রায় পাঁচ তলা ভবনের সমান। গ্রিক স্থাপত্য শৈলীর অনুকরণে নির্মিত এই গির্জাটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়। গির্জার প্রাচীর পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে সবুজ ঘাসের মাঠ, খেলার মাঠ, পুকুর, অক্সফোর্ড মিশন প্রাইমারি স্কুল ও হাই স্কুল, লাইব্রেরি, হাসপাতাল, ছাত্রছাত্রীদের হোস্টেল, ফুলের বাগান এবং নানা প্রজাতির ঔষধি গাছ। মূল বেদির ওপর স্থাপিত একটি বিশাল আকৃতির ক্রস গির্জার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রায় ৩৫ একর জমির উপর নির্মিত এই গির্জার ভেতরে রয়েছে কাঠের সুন্দর খোদাই কাজ এবং মার্বেল পাথরের মেঝে। গির্জার প্রার্থনা কক্ষটি অত্যন্ত সুবিশাল ও মনোরম, চারপাশের পরিবেশ শান্ত ও স্নিগ্ধ। এখানে সারি সারি পাম গাছের সমারোহ দেখা যায়। গির্জার পাশেই রয়েছে ফাদার্স হাউস ও মাদার্স হাউস। এছাড়াও, অক্সফোর্ড মিশন চার্চে একটি বিশাল আকর্ষণীয় ঘণ্টা রয়েছে, যা এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘণ্টা হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন সাতবার এই ঘণ্টাটি বাজানো হয়। গির্জার অসংখ্য করিডোর ও খিলানপথ এর মূল কাঠামোকে আরও সুদৃঢ় করে তুলেছে। অনুমতি নিয়ে সহজেই এই গির্জাটি ঘুরে দেখা যায়। সকাল থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য গির্জাটি খোলা থাকে।
কিভাবে যাবেন
বরিশাল শহরে অক্সফোর্ড মিশন চার্চে যাওয়ার জন্য সিএনজি, অটোরিকশা বা রিকশা পাওয়া যায়। ঢাকা থেকে বরিশালে সড়কপথে যেতে প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা সময় লাগে। ঢাকার গাবতলি বাস টার্মিনাল থেকে ভোর ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন পরিবহণের বাস বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। শাকুরা, ঈগল এবং হানিফ পরিবহনের এসি ও নন-এসি বাসের টিকেটের মূল্য ৬০০ থেকে ১৩০০ টাকা পর্যন্ত (পরিবর্তনশীল)। ঢাকা থেকে বরিশালগামী বাসগুলো সাধারণত বরিশাল শহরের নতুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে থামে।
ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার জন্য লঞ্চ সবচেয়ে সুবিধাজনক মাধ্যম। ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে বরিশালগামী লঞ্চগুলো ছেড়ে যায়। লঞ্চগুলো পরদিন ভোরে বরিশাল ঘাটে পৌঁছায়। ভালো সার্ভিসের লঞ্চগুলোর মধ্যে এমভি মানামী, কুয়াকাটা ২, কীর্তনখোলা ১০, এডভেঞ্চার ১, এডভেঞ্চার ৯, সুন্দরবন ৯, সুন্দরবন ১০, সুরভী ৭, সুরভী ৮, পারাবত ৯, পারাবত ১১ উল্লেখযোগ্য। ডেকের টিকেটের মূল্য ২০০-২৫০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১২০০-১৪০০ টাকা, ডাবল কেবিন ২২০০-২৫০০ টাকা এবং ভিআইপি কেবিনের ভাড়া ৫০০০-৮০০০ টাকা।
বরিশালে থাকার ব্যবস্থা
বরিশালে বেশ কিছু ভালো মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেখানে সহজেই রাত্রিযাপন করা যায়। এর মধ্যে হোটেল গ্র্যান্ড প্লাজা, রিচমার্ট, হোটেল এথেনা, এরিনা, সেডোনা এবং রোডেলা উল্লেখযোগ্য।
আর কী দেখবেন?
বরিশাল শহরের আশেপাশে আরও বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে বিবির পুকুর, ৩০ গোডাউন, বেলস পার্ক, দুর্গাসাগর দীঘি, বাইতুল আমান মসজিদ, লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি, মিয়াবাড়ি জামে মসজিদ এবং মুক্তিযোদ্ধা পার্ক উল্লেখযোগ্য।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!