বাগেরহাট সদর উপজেলার বারুইপাড়া ইউনিয়নের অযোধ্যা গ্রামে অবস্থিত কোদলা মঠ, যা সপ্তদশ শতাব্দীর একটি প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় বাসিন্দারা একে অনেক সময় 'অযোধ্যার মঠ' নামেও ডাকেন। এই ঐতিহাসিক মঠটি বাগেরহাটের বিখ্যাত ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
মঠের ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, তারক ব্রহ্মের কৃপা পাওয়ার বাসনায় এক ব্রাহ্মণ এটি নির্মাণ করেছিলেন। অন্য একটি প্রচলিত মত অনুযায়ী, যশোরের বারো ভূঁইয়াদের অন্যতম রাজা প্রতাপাদিত্য তার গুরু অবিলম্বা সরস্বতীর স্মরণে এই মঠটি গড়ে তুলেছিলেন। এটি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় স্থাপনা নয়, বরং বাগেরহাটের ঐতিহ্য, হিন্দু সংস্কৃতি এবং স্থাপত্যকলার এক দৃষ্টিনন্দন নিদর্শন।
স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য
কোদলা মঠের স্থাপত্যশৈলী একেবারেই স্বতন্ত্র এবং চমকপ্রদ। এটি নির্মাণে খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে উড়িষ্যায় প্রচলিত “রেখা” শৈলীর ছোঁয়া দেখা যায়, যা ‘নাগারা স্টাইল’ নামেও পরিচিত। চারকোণা ভিত্তির উপর নির্মিত এই পিরামিড আকৃতির মঠের উচ্চতা ১৮.২৯ মিটার এবং প্রতিটি দেয়ালের দৈর্ঘ্য ২.৬১ মিটার। মঠটির তিনটি পাশে প্রবেশপথ রয়েছে, তবে দক্ষিণ দিকের প্রধান প্রবেশদ্বারটি বিশেষভাবে নজরকাড়া, কারণ সেখানে রয়েছে পোড়ামাটির চমৎকার কারুকাজ। বাইরের অংশে পাঁচটি কুলুঙ্গিযুক্ত বহুভুজাকার দেয়ালে টেরাকোটার নিখুঁত অলংকরণ কোদলা মঠকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। বর্তমানে এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে সংরক্ষিত রয়েছে।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি বাস কিংবা ট্রেনে বাগেরহাট যাওয়া যায়। গুলিস্তান ও সায়েদাবাদ থেকে দোলা পরিবহন, সোহাগ, হানিফ, সাকুরা, ফাল্গুনী, ঈগল ও ওয়েলকাম এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির বাস পদ্মা সেতু হয়ে বাগেরহাটের পথে চলাচল করে। রেলপথে গেলে কমলাপুর থেকে কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস, সুন্দরবন, রূপসা বা চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনে খুলনা পৌঁছে সেখান থেকে বাগেরহাট যেতে পারবেন।
বাগেরহাট শহর থেকে কোদলা মঠের দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। বাস স্ট্যান্ড থেকে রিকশা বা অটোরিকশায় যাত্রাপুর বাজার পর্যন্ত যেতে হবে। সেখান থেকে পূর্ব দিকে প্রাচীন ভৈরব নদী পার হয়ে প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করলেই দেখা মিলবে এই অসাধারণ মঠটির।
থাকার ব্যবস্থা
বাগেরহাট শহরে পর্যটকদের জন্য রয়েছে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল ও গেস্ট হাউজ। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো — সার্কিট হাউজ, ডাক বাংলো, ষাট গম্বুজ গেস্ট হাউজ, সুন্দরবন রিসোর্ট, হোটেল মোহনা, মমতাজ হোটেল, হোটেল আল আমিন, হোটেল ফুয়াদ, রেসিডেন্সিয়াল হোটেল, হোটেল অভি, জারিফ আবাসিক এবং হোটেল ধানসিঁড়ি।
খাবার-দাবার
বাগেরহাটে ঘুরতে এলে নারিকেল চিংড়ির স্বাদ নেওয়া যেন একান্ত আবশ্যক! এই অঞ্চলের জনপ্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এছাড়াও শহরের রাধুনি হোটেল ও ধানসিঁড়ি হোটেলে পাওয়া যায় মানসম্পন্ন এবং সুস্বাদু খাবার।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!