বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সমাধি

খুলনা জেলার রূপসা নদীর পূর্বপারে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক খেতাবে সম্মানিত মুক্তিযোদ্ধা, বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোহাম্মদ রুহুল আমিন। ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর, খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছে এক ভয়াবহ যুদ্ধের সময় শত্রুপক্ষের বিমান হামলায় তিনি শহীদ হন। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বছর শাহাদাৎ বার্ষিকীসশস্ত্রবাহিনী দিবসে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের জীবনী

১৯৩৫ সালে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলার বাঘপাঁচড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মোহাম্মদ রুহুল আমিন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতীয় নৌবাহিনী থেকে পাওয়া পলাশ গানবোটের আর্টিফিশিয়াল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ১০ ডিসেম্বর, ভারতীয় নৌঘাঁটি হলদিয়া থেকে পলাশ, পদ্মা ও পাভেল নামের তিনটি গানবোট পাকবাহিনীর দখলে থাকা খুলনার পিএনএস তিতুমির নৌঘাঁটি দখল করার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

তবে পথিমধ্যে, খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছে পৌঁছালে শত্রু বাহিনীর যুদ্ধবিমান থেকে বোমাবর্ষণ শুরু হয়। কমান্ডারের নির্দেশে সবাই গানবোট ত্যাগ করলেও রুহুল আমিন গানবোট সচল রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা চালান। এক পর্যায়ে, শত্রুর গোলার আঘাতে পলাশের ইঞ্জিন রুম ধ্বংস হয়ে যায়। আহত অবস্থায় নদীর তীরে পৌঁছালে, সেখানে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকাররা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তাঁর মরদেহ তিন দিন রূপসা নদীর তীরে পড়ে ছিল। পরে, রূপসা থানার আব্দুর গাফফার স্থানীয়দের সহায়তায় পূর্ব রূপসার বাগমারা গ্রামে তাঁকে সমাহিত করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্ব ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয়

সমাধি সংরক্ষণ ও বর্তমান অবস্থা

১৯৯৪ সালে রূপসা রিপোর্টারস ক্লাব ও বাংলাদেশ নৌবাহিনী যৌথভাবে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন ও বীর উত্তম শহীদ মহিবুল্লাহর সমাধি সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে দেড় একর জায়গা জুড়ে একটি আধুনিক সমাধি কমপ্লেক্স নির্মিত হয়েছে, যেখানে দর্শনার্থীরা শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারেন।

কিভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে ট্রেন, বাস বা লঞ্চে খুলনা আসা যায়। এরপর, খুলনার রূপসা বাস স্ট্যান্ড থেকে বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন সড়ক ধরে মাত্র ৫০ গজ হাঁটলেই তাঁর সমাধিস্থল দেখতে পাবেন।

কোথায় থাকবেন?

খুলনা শহরে বিভিন্ন মানসম্পন্ন হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—

  • টাইগার গার্ডেন ইন্টারন্যাশনাল
  • হোটেল ক্যাসেল সালাম
  • ওয়েস্টার্ন ইন
  • হোটেল হলিডে ইন্টারন্যাশনাল
  • হোটেল মিলেনিয়াম
  • সিটি ইন লিমিটেড

কোথায় খাবেন?

খুলনা শহরের শিববাড়ী মোড় ও আশেপাশের এলাকায় বেশ কিছু ভালো রেস্টুরেন্ট রয়েছে। খুলনার জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে—

  • সন্দেশ
  • ১ টাকার পুরি
  • কাচ্চি বিরিয়ানি
  • গলদা চিংড়ি অন্যতম।

সমাধিস্থলে যাওয়ার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা

শালীন পোশাক পরিধান করুন।
সমাধিস্থলে প্রবেশের আগে জুতা বা স্যান্ডেল খুলে রাখুন।
নীরবতা বজায় রেখে শ্রদ্ধা জানান।
পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন, ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না।

শেষ কথা

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সমাধিস্থল বাংলাদেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের এক অনন্য সাক্ষী। তাঁর অসীম সাহস ও আত্মত্যাগ চিরকাল জাতির হৃদয়ে অমলিন হয়ে থাকবে। খুলনা ভ্রমণের সময় এই স্মৃতিসৌধ পরিদর্শন করলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি এক অনন্য শ্রদ্ধা নিবেদন করা সম্ভব।

বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সমাধি এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
138.91 কিমি
খুলনা থেকে
3.52 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
শহীদ হাদিস পার্ক
খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর
খান জাহান আলী সেতু
তেঁতুলিয়া জামে মসজিদ
চন্দ্রমহল ইকো পার্ক
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরালয়
ভরতের দেউল
চুনাখোলা মসজিদ
বিবি বেগনী মসজিদ
বাগেরহাট জাদুঘর
ষাট গম্বুজ মসজিদ
সিঙ্গাইর মসজিদ
রণবিজয়পুর মসজিদ
খান জাহান আলীর মাজার
কোদলা মঠ
বিল রুট ক্যানেল
ভূতিয়ার পদ্মবিল
শেখ রাসেল শিশু পার্ক
বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধ
অরুনিমা ইকো পার্ক

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন