জাতীয় স্মৃতিসৌধের পরিকল্পনা করা হয় ১৯৭২ সালে। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে এটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন এই সৌধটির নকশা করেন। ১৯৮২ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। সৌধটি মূলত সাতটি ত্রিভুজাকৃতির স্তম্ভ নিয়ে তৈরি, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিভিন্ন অধ্যায়কে প্রতীকীভাবে প্রকাশ করে।
সৌধটি একটি শান্তিপূর্ণ সবুজ প্রাঙ্গণে অবস্থিত। এখানে পুকুর, খোলা মাঠ এবং বিশালায়তনের গাছপালার সমারোহ রয়েছে। মূল সৌধের পাশে একাধিক জাদুঘর এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহনকারী দেয়াল রয়েছে। সৌধে গিয়ে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত দেখার অভিজ্ঞতা মনোমুগ্ধকর। বিশেষ করে বিজয় দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে এখানে আলোর ঝলকানি এবং মানুষের ভিড় এক অভূতপূর্ব দৃশ্য তৈরি করে।
স্মৃতিসৌধে সাতটি স্তম্ভ কেন?
জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থাপত্যে রয়েছে সাতটি ত্রিভুজাকৃতির স্তম্ভ। এই সাতটি স্তম্ভ আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাতটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে চিহ্নিত করে। পর্যায়গুলো হলো:
- ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন
- ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন
- ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র আন্দোলন
- ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন
- ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন
- ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান
- ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ
স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সে রয়েছে কৃত্রিম জলাশয়, সবুজ বাগান এবং ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর নির্মমতার স্মারক বধ্যভূমি ও গণকবর। মুক্তিযুদ্ধের পর এই বধ্যভূমি ও গণকবর আবিষ্কৃত হয় এবং তা স্মৃতিসৌধের মূল কাঠামোর সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। স্মৃতিসৌধের সামনের জলাশয়টি শাপলায় ভরা, যেখানে স্মৃতিসৌধের প্রতিচ্ছবি এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের সৃষ্টি করে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রবেশ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এটি প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সকল দর্শনার্থীর জন্য উন্মুক্ত থাকে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে স্মৃতিসৌধে যেতে চাইলে বিআরটিসি বাস সার্ভিস একটি চমৎকার বিকল্প। মতিঝিল, গুলিস্তান, শাহবাগ, ফার্মগেট, আসাদগেট, শ্যামলী ও গাবতলী থেকে বিআরটিসি বাসে সরাসরি স্মৃতিসৌধে পৌঁছানো সম্ভব। মিরপুর ১২ থেকে তিতাস পরিবহন বাসও স্মৃতিসৌধের দিকে যায়, যা মিরপুর ১০, মিরপুর ১ এবং গাবতলী হয়ে চলাচল করে। এছাড়া, মতিঝিল বা গুলিস্তান থেকে অন্যান্য বাসে নবীনগর পর্যন্ত যাওয়া যায়, সেখান থেকে সহজেই স্মৃতিসৌধে যাওয়া যায়।
খাওয়ার ব্যবস্থা
স্মৃতিসৌধের কাছাকাছি কিছু জনপ্রিয় খাবার জায়গা:
- আলোকধারা রেস্টুরেন্ট: স্থানীয় এবং চাইনিজ খাবারের জন্য উপযুক্ত।
- পল্লীবিদ্যুৎ মোড়ের খাবার দোকান: বাজেটের মধ্যে ভালো খাবার পাওয়া যায়।
- স্থানীয় ফাস্ট ফুড স্টল: হালকা নাশতার জন্য ভালো।
এছাড়া নিজস্ব খাবার নিয়ে গেলে সৌধের খোলা জায়গায় পিকনিকের মজা উপভোগ করতে পারেন।
পরামর্শ
- পরিবারসহ গেলে শিশুদের জন্য খোলা জায়গায় খেলার ব্যবস্থা রয়েছে।
- বিজয় দিবস বা অন্যান্য জাতীয় দিনে ভিড় বেশি থাকে, তাই আগেভাগে যাওয়ার পরিকল্পনা করুন।
- সৌধ পরিদর্শনের সময় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে নিরিবিলি ও শান্ত পরিবেশ বজায় রাখুন।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!