পঞ্চগড় জেলা সদর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুরে অবস্থিত বার আউলিয়া মাজার, যা স্থানীয় লোককাহিনীতে রহস্য ও আধ্যাত্মিকতার প্রতীক। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, দুইটি বাঘ ও দুইটি সাপ মাজারটি পাহারা দিতো, এবং কেউ যদি খারাপ উদ্দেশ্যে মাজারে আসত, তখন বাঘ দুটি তাকে প্রতিহত করত। বার আউলিয়াদের অলৌকিক ক্ষমতা নিয়ে বহু জনশ্রুতি প্রচলিত রয়েছে।
ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, সপ্তদশ শতকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বারজন সুফি সাধক ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে আগমন করেন। হেমায়েত আলী শাহ্ (রঃ), নিয়ামত উল্লাহ শাহ্ (রঃ), কেরামত আলী শাহ্ (রঃ), আজহার আলী শাহ্ (রঃ), হাকিম আলী শাহ্ (রঃ), মনসুর আলী শাহ্ (রঃ), মমিনুল শাহ্ (রঃ), শেখ গরীবুল্লাহ (রঃ), আমজাদ আলী মোল্লা (রঃ), ফরিজউদ্দিন আখতার (রঃ), শাহ্ মোক্তার আলী (রঃ) ও শাহ্ অলিউল্লাহ (রঃ) চট্টগ্রামে প্রথম আস্তানা গড়ে তোলেন। পরবর্তীতে তাঁরা ইসলাম প্রচার করতে করতে উত্তরবঙ্গে এসে মির্জাপুরে স্থায়ী আশ্রয় নেন। তাঁদের মৃত্যুর পর এই বারজন সাধকের সমাধিস্থলে বার আউলিয়া মাজার গড়ে ওঠে।
১৯৯০ সালে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের উদ্যোগে মাজারের অবকাঠামো উন্নত করা হয়। পরবর্তীতে আশেপাশে গোরস্থান, পুকুর, মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানা নির্মাণ করা হয়। প্রতিবছর বৈশাখ মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ওরশ মোবারক, ওয়াজ মাহফিল, কোরআন খানি ও তোবারক বিতরণের আয়োজন করা হয়, যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো ধর্মপ্রাণ মানুষ সমবেত হন।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে নাবিল পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, তানযিলা ট্রাভেল, বরকত ট্রাভেল এর মতো বাস সার্ভিস ব্যবহার করতে পারেন। নন-এসি বাসের ভাড়া ১০০০-১১০০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ১৩০০-১৯০০ টাকা।
যদি ট্রেনে যেতে চান, তাহলে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, একতা বা দ্রুতযান এক্সপ্রেসে পঞ্চগড় পৌঁছাতে পারবেন। টিকিটের ভাড়া শ্রেণি অনুযায়ী ৬৯৫ থেকে ২৩৯৮ টাকা পর্যন্ত। পঞ্চগড় থেকে স্থানীয় পরিবহনে আটোয়ারী এসে মাজারে পৌঁছানো যায়।
কোথায় থাকবেন
রাত্রিযাপনের জন্য পঞ্চগড় শহরে হোটেল মৌচাক, হোটেল রাজ নগর, হিলটন বোর্ডিং, রোকখানা বোর্ডিং, হোটেল প্রীতম, হোটেল এইচ কে প্যালেস ও হোটেল ইসলাম ভালো অপশন হতে পারে।
কোথায় খাবেন
আটোয়ারী উপজেলায় স্থানীয় খাবারের ছোট ছোট হোটেল পাবেন। উন্নত মানের খাবারের জন্য পঞ্চগড় শহরে হোটেল করোটিয়া, হোটেল মৌচাক, হোটেল নিরিবিলি, হোটেল হাইওয়ে ও হোটেল হামজা রেস্তোরাঁতে যেতে পারেন।
পঞ্চগড় জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান: বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শন, স্থানীয় চা বাগান এবং রকস মিউজিয়াম পঞ্চগড়ের অনন্য আকর্ষণ।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!