ঠাকুরগাঁও জেলার জামালপুর ইউনিয়নে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী জামালপুর জমিদার বাড়ি এক সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক নিদর্শন। ১৮৬২ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের তাজপুর পরগনার রওশন আলীর বংশধর জামাল উদ্দিন জমিদারির দায়িত্ব পেয়ে এই বাড়ির ভিত্তি স্থাপন করেন। তবে জমিদার বাড়ির নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই, ১৮৬৭ সালে তিনি শুরু করেন একটি জামে মসজিদের নির্মাণকাজ, যা এখন পরিচিত জামালপুর জমিদার বাড়ী জামে মসজিদ নামে। ব্যয়বহুল এই মসজিদের কাজ সম্পন্ন হলেও, জমিদার বাড়ির নির্মাণ অসমাপ্ত রয়ে যায়।
স্থাপত্য ও বৈশিষ্ট্য
প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো জমিদার বাড়ির প্রবেশমুখে রয়েছে বিশাল একটি তোরণ। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত এই মসজিদে একসঙ্গে ৩০০-৬০০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটি চারটি অংশে বিভক্ত — মূল কক্ষ, ছাদ, ছাদবিহীন বারান্দা, ও প্রধান দরজা। ৩৫ ফুট উঁচু ৮০টি মিনার এবং তিনটি কারুকার্যখচিত গম্বুজ মসজিদের শোভা বাড়িয়েছে। মসজিদের মিনার ও গম্বুজের অপূর্ব নকশায় ফুটে ওঠে ফুলেল নকশার শিল্পকর্ম, যা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। এখনো জমিদার পরিবারের বংশধরেরাই এই ঐতিহাসিক স্থাপনার দেখভাল করেন।
যাতায়াত ব্যবস্থা
বাংলাদেশের যেকোনো স্থান থেকে বাস, ট্রেন বা নিজস্ব যানবাহনে সহজেই ঠাকুরগাঁও পৌঁছানো যায়। ঢাকা-ঠাকুরগাঁও রুটে চলাচল করে কর্ণফুলি পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, নাবিল পরিবহন, বাবলু এন্টারপ্রাইজ ও কেয়া পরিবহন। বাসভাড়া ৮০০-১,৮০০ টাকা এবং ট্রেনের ভাড়া ৬৫০-২,২৩৭ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
ঠাকুরগাঁও জেলা সদর থেকে জামালপুর জমিদার বাড়ির দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। ঠাকুরগাঁও থেকে পীরগঞ্জ থানার পথে শিবগঞ্জ হাট পর্যন্ত পৌঁছে আরও ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে গেলেই দেখা মিলবে ঐতিহাসিক এই স্থাপনার।
থাকার ব্যবস্থা
ঠাকুরগাঁও শহরের নর্থ সার্কুলার রোডে রয়েছে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল —
- হোটেল সালাম ইন্টারন্যাশনাল
- হোটেল প্রাইম ইন্টারন্যাশনাল
- হোটেল শাহ্ জালাল
- হোটেল সাদেক
সরকারি সার্কিট হাউজ ও জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজেও থাকার ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
খাবার ও স্থানীয় স্বাদ
ঠাকুরগাঁও সদরে পাবেন বেশ কিছু জনপ্রিয় খাবারের হোটেল —
- মুন্সির হোটেল
- উজ্জল হোটেল
- বাবুর হোটেল
- শহিদুল হোটেল
- নিরিবিলি হোটেল
- নিউ সুরুচি হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট
ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে সিদল ভর্তা (শুঁটকি ও মশলার মিশ্রণ) এবং চালের গুঁড়ার পিঠা বেশ জনপ্রিয়।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
ঠাকুরগাঁও ঘুরতে গেলে আরও কিছু আকর্ষণীয় স্থান দেখে নিতে পারেন:
- লোকায়ন জীবন বৈচিত্র্য জাদুঘর
- বালিয়াডাঙ্গী সূর্য্যপূরী আমগাছ
- বালিয়া মসজিদ
- রাজা টংকনাথের রাজবাড়ী+
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!