কুমিল্লা শহর থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার দূরে কোটবাড়িতে অবস্থিত রূপবান মুড়া, যা বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নিদর্শন। ১৯৯০-এর দশকে কুমিল্লা-কালিবাজার সড়কের পাশে এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি খনন করা হয়। স্থানীয় কাহিনীতে জানা যায়, রহিম ও রূপবানের অসম প্রেমের গল্প ঘিরে গড়ে উঠেছে এই মুড়া। সবুজ প্রকৃতির মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা এই ঐতিহাসিক স্থান যেন অতীতের স্মৃতিচিহ্ন বয়ে বেড়ায়।
প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব
খননের মাধ্যমে রূপবান মুড়া থেকে ৩৪.১৪ ও ২৫ মিটারের একটি প্রাচীন বিহার (ভিক্ষুদের আশ্রম) এবং ২৮.৯৬ মিটারের একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়। মন্দিরের পূর্ব দিক থেকে উদ্ধার করা হয় কারুকার্যখচিত একটি বৃহদাকার বৌদ্ধমূর্তি ও ৫টি প্রাচীন মুদ্রা, যা বর্তমানে ময়নামতি জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। গবেষকদের ধারণা, এসব নিদর্শন ৭ম থেকে ১২শ শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত হয়েছিল।
রূপবান মুড়ার উঁচু বিহারের চূড়ায় দাঁড়ালে সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করা যায়। বিকেলের মৃদু হাওয়া আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে স্থানীয় মানুষ থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্যটকরা এখানে ছুটে আসেন।
কিভাবে যাবেন রূপবান মুড়ায়
রূপবান মুড়া ভ্রমণের জন্য প্রথমে কুমিল্লা জেলায় পৌঁছাতে হবে। ঢাকা থেকে ট্রেন বা বাসে সহজেই কুমিল্লা যাওয়া যায়।
- ট্রেনে: কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে মহানগর প্রভাতী/গোধূলী, উপকূল এক্সপ্রেস, পাহারিকা এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশিথা সহ চট্টগ্রামগামী বিভিন্ন ট্রেনে কুমিল্লায় যেতে পারবেন। জনপ্রতি ভাড়া ১৭০-৭০২ টাকা।
- বাসে: সায়েদাবাদ বা কমলাপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে রয়্যাল কোচ, এশিয়া এয়ারকন, বিআরটিসি, প্রিন্স, এশিয়া লাইন, তৃষা সহ বিভিন্ন নন-এসি/এসি বাসে কুমিল্লা যাওয়া যায়। ভাড়া বাস ভেদে ২৫০-৪০০ টাকার মধ্যে পড়বে।
কুমিল্লা বাস স্ট্যান্ড থেকে কোটবাড়ি পৌঁছে, কুমিল্লা-কালিবাজার সড়কের দক্ষিণ পাশে বার্ড ও বি.জি.বি স্থাপনার মাঝখানে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত রূপবান মুড়ায় সহজেই পৌঁছানো যায়।
কোথায় থাকবেন?
কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড়, শাসনগাছা ও স্টেশন রোডে বিভিন্ন মানের হোটেল ও রেস্ট হাউজ রয়েছে। জনপ্রিয় কিছু অপশন:
- হোটেল সোনালী
- হোটেল ভিক্টোরিয়া আবাসিক
- আমানিয়া রেস্ট হাউজ
- হোটেল ড্রিম ল্যান্ড
- মাসুম রেস্ট হাউজ
- হোটেল মেলোডি
- হোটেল নূর
কোথায় খাবেন?
রূপবান মুড়ায় যাওয়ার পথে বেশকিছু মানসম্মত রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে আপনি স্থানীয় ও বাহারি খাবারের স্বাদ নিতে পারেন। যেমন:
- ইরিশ হিল হাইওয়ে হোটেল
- সৌদিয়া হোটেল
- ঝাল বাংলা রেস্তোরা
- হোটেল ময়নামতি
- উজান হাইওয়ে
- আনোয়ার হোটেল
- সাকিব হোটেল
- লিজা হোটেল
আর কুমিল্লা গেলে অবশ্যই মাতৃভাণ্ডারের বিখ্যাত রসমালাই ও রসগোল্লা, ভগবতীর পেড়া, এবং মিঠাইয়ের মালাই চপ চেখে দেখতে ভুলবেন না!
শেষ কথা
রূপবান মুড়া শুধু একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান নয়, বরং এটি অতীতের ইতিহাস, প্রেমের কাহিনী ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব মিলনস্থল। আপনি যদি কোলাহলমুক্ত পরিবেশে ইতিহাস আর প্রকৃতির ছোঁয়া একসঙ্গে পেতে চান, তবে রূপবান মুড়া হতে পারে আপনার পরবর্তী গন্তব্য।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!