ঝিনাইদহ জেলার পাগলা কানাই ইউনিয়নে অবস্থিত ঢোল সমুদ্র দীঘি (Dhol Samudra Dighi) একটি বিখ্যাত ঐতিহাসিক স্থান, যা স্থানীয়ভাবে রাজা মুকুট রায়ের গৌরবময় কীর্তি হিসেবে পরিচিত। শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত এই বিশাল দীঘিটি প্রায় ৫২ বিঘা জমি জুড়ে বিস্তৃত, যা এটিকে ঝিনাইদহ জেলার বৃহত্তম জলাধারে পরিণত করেছে।
দীঘির চারপাশে সারি সারি গাছের উপস্থিতি প্রকৃতির সঙ্গে এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটিয়েছে। ছুটির দিনে শহরের মানুষজন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পরিবার-পরিজনসহ এই দীঘির পাড়ে সময় কাটাতে পছন্দ করেন।
ঢোল সমুদ্র দীঘির পেছনের কিংবদন্তি
স্থানীয় জনশ্রুতি অনুসারে, রাজা মুকুট রায়ের শাসনামলে এক সময় রাজ্যে মারাত্মক জলসঙ্কট দেখা দেয়। সমাধানের জন্য এক বিশাল পুকুর খনন করা হলেও তা শুকনোই থেকে যায়। হতাশ রাজা এক রাতে স্বপ্নে দেখেন, রানি যদি এই পুকুরে পূজা দেন, তবে পানিতে পূর্ণ হয়ে উঠবে। রাজা তার স্বপ্নের কথা রানিকে জানালে, প্রজাদের মঙ্গল কামনায় রানি পুকুরে পূজা দিতে রাজি হন।
নির্ধারিত দিনে ঢোল, বাঁশি, সানাইয়ের শব্দে মুখর পরিবেশে পূজা শুরু হয়। রানি যখন পুকুরে নামলেন, তখন আচমকাই পানির প্রবল স্রোত উপরে উঠতে শুরু করে। কিন্তু রানির ফিরে আসার মুহূর্তে পানির গতি আরও বেড়ে যায়। প্রজারা তখনো উৎসবের আনন্দে ব্যস্ত, কেউ রানির দিকে লক্ষ্য করছিল না। ফলে রানি স্রোতে তলিয়ে যান। রানির এই আত্মত্যাগ এবং সেদিন বাজানো ঢোলের স্মৃতিতেই এই দীঘির নামকরণ হয় “ঢোল সমুদ্র দীঘি”।
কিভাবে যাবেন?
ঢাকার গাবতলী থেকে রয়েল, সোনার তরী, এসবি, জেআর, চুয়াডাঙ্গা, হানিফ, দর্শনা এবং পূর্বাশা ডিলাক্সের মতো বিভিন্ন পরিবহনের বাসে সরাসরি ঝিনাইদহে যাওয়া যায়। এসি এবং নন-এসি বাসে ভাড়া পড়বে আনুমানিক ৬৫০ থেকে ১৩০০ টাকার মধ্যে। ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বর থেকে ইজিবাইক বা অটোরিকশায় করে সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন ঢোল সমুদ্র দীঘিতে।
কোথায় থাকবেন?
ঝিনাইদহ শহরে পর্যটকদের থাকার জন্য বেশ কয়েকটি মানসম্মত আবাসন রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল রাতুল, হোটেল রেডিয়েশন, হোটেল জামান, নয়ন হোটেল, হোটেল ড্রিম ইন এবং ক্ষণিকা রেস্ট হাউজ উল্লেখযোগ্য।
কোথায় খাবেন?
ঝিনাইদহ শহরের পায়রা চত্বর এলাকায় রয়েছে বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল ও রেস্তোরাঁ, যেখানে ভোজনরসিকরা স্বাদ নিতে পারবেন স্থানীয় খাবারের।
ঝিনাইদহের আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
ঢোল সমুদ্র দীঘি ছাড়াও ঝিনাইদহ জেলায় রয়েছে আরও বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে বারোবাজার, নলডাঙ্গা রাজবাড়ী রিসোর্ট, মিয়ার দালান এবং জোহান ড্রিম ভ্যালি পার্ক অন্যতম।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!