জোড় বাংলা মসজিদ

ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার এলাকায় অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন এক গম্বুজবিশিষ্ট ঐতিহাসিক স্থাপনাটি হলো জোড় বাংলা মসজিদ, যেটি স্থানীয়ভাবে জোড়া ঢিবি মসজিদ নামেও পরিচিত। এই মসজিদের নকশা, অলঙ্করণ এবং স্থাপত্য শৈলী প্রাচীন মুসলিম ঐতিহ্য ও গৌরবময় শিল্প সংস্কৃতির এক অসাধারণ উদাহরণ।

জনশ্রুতি মতে, হিজরি ৮০০ সালে সুলতান আলাউদ্দিন হুসাইন শাহের পুত্র শাহ সুলতান মাহমুদ এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। এই স্থানটিতে পূর্বে জোড়ায় দুটি কুঁড়েঘর বা দীঘি থাকার কারণে মসজিদটির নাম "জোড় বাংলা মসজিদ" রাখা হয়েছে বলে মনে করা হয়।

প্রায় ১১ ফুট উঁচু একটি বেদীর উপর ছোট আকৃতির পাতলা ইট দিয়ে বর্গাকৃতির গঠনশৈলীতে তৈরি মসজিদটির সামনের দিকে রয়েছে তিনটি খিলানবিশিষ্ট প্রবেশদ্বার। চার কোণে রয়েছে অষ্টকোণ আকৃতির চারটি দৃষ্টিনন্দন বুরুজ। পশ্চিম দিকের দেয়ালে পোড়ামাটির নিখুঁত কারুকাজে সজ্জিত তিনটি মেহরাব রয়েছে, যার মধ্যে মধ্যবর্তী মেহরাবটি সবচেয়ে বড় ও আকর্ষণীয়। এই মসজিদের স্থাপত্যে ডুমুরিয়ার সারসনগর, অভয়নগরের শুভারাদা মসজিদ এবং বাগেরহাটের বিবি কেরানী মসজিদের নিদর্শনের মিল পাওয়া যায়।

মসজিদের পাশে রয়েছে কিছু পুরনো কবর এবং এর উত্তরে অবস্থিত একটি প্রাচীন দিঘী, যা অন্ধপুকুর নামে পরিচিত। শাহ সুলতান মাহমুদের আমলে এই দিঘী খনন করা হয়েছিল মুসল্লিদের ওজু ও পানীয় জলের প্রয়োজন মেটাতে। বহু বছর পর, ১৯৯২-৯৩ সালের প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে মসজিদটি আবার আবিষ্কৃত হয় এবং পরে কিছু অংশ সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে এটি একটি সক্রিয় ধর্মীয় স্থান, যেখানে স্থানীয় মুসল্লিরা নিয়মিত নামাজ আদায় করেন।

কিভাবে যাবেন?

ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে রয়েল, সোনার তরী, এসবি, জেআর পরিবহণ, হানিফ, দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা ও পূর্বাশা ডিলাক্স সহ নানা পরিবহনের বাসে সরাসরি ঝিনাইদহ যাওয়া যায়। এসব বাসের এসি ও নন-এসি ভাড়া ৬৫০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ১৩০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। ঝিনাইদহ শহর থেকে সিএনজি বা লোকাল বাসে যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়ক ধরে সহজেই বারোবাজার পৌঁছানো যায়। সেখান থেকে রিকশাযোগে মসজিদে যাওয়া যায়।

কোথায় থাকবেন?

ঝিনাইদহ শহরে ভ্রমণকারীদের জন্য বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল রাতুল, হোটেল রেডিয়েশন, হোটেল জামান, নয়ন হোটেল, ক্ষণিকা রেস্ট হাউজ এবং হোটেল ড্রিম ইন বেশ পরিচিত।

কোথায় খাবেন?

বারোবাজারে সাধারণ মানের কিছু খাবারের দোকান পাওয়া যায়। আর ঝিনাইদহ শহরে চাইলে আপনি ক্যাফে কাশফুল, কস্তুরি হোটেল, অজয় কিচেন, লিজা ফাস্ট ফুড, ইং কিং চাইনিজ, রূপসী বাংলা রেস্তোরাঁ কিংবা আহার রেস্তোরাঁয় সুস্বাদু খাবার উপভোগ করতে পারেন।

ঝিনাইদহের আরও দর্শনীয় স্থান

জোড় বাংলা মসজিদ ছাড়াও ঝিনাইদহে রয়েছে বারোবাজারের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ, নলডাঙ্গা রাজবাড়ী রিসোর্ট, ঐতিহাসিক মিয়াদের দালান এবং আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র জোহান ড্রিম ভ্যালি পার্ক।

জোড় বাংলা মসজিদ এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
141.59 কিমি
ঝিনাইদহ থেকে
26.7 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
গলাকাটা মসজিদ
বারোবাজার
গাজী কালু চম্পাবতী মাজার
মল্লিকপুরের বটগাছ
বিনোদিয়া ফ্যামিলি পার্ক
জেস গার্ডেন পার্ক
নলডাঙ্গা রাজবাড়ি রিসোর্ট
চাঁচড়া শিবমন্দির
খালিশপুর নীলকুঠি ভবন
ঢোল সমুদ্র দীঘি
কালেক্টরেট পার্ক
গদখালী ফুলের রাজধানী
জোহান ড্রীম ভ্যালী পার্ক
মিয়ার দালান
ভাসমান সেতু
কে পি বসুর বাড়ি
মাগুরার ভাতের ভিটা
বেনাপোল স্থল বন্দর
ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকার
নড়াইল বাঁধা ঘাট

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন