ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার কপোতাক্ষ নদীর তীরে অবস্থিত খালিশপুর নীলকুঠি বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যখন ভারত উপমহাদেশে নীল চাষ শুরু করে, তখন তারা খালিশপুরে প্রায় ১৪ একর জমির উপর একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে যা ছিল নীলচাষ কেন্দ্র। ১৮১০ থেকে ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত এই ভবনটি নীলচাষে বাধ্য কৃষকদের উপর নির্মম শোষণের জন্য ব্যবহৃত হতো।
১৮৬০ সালে বাংলার কৃষকদের প্রতিরোধে শুরু হয় বিখ্যাত নীল বিদ্রোহ, যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল এই খালিশপুর নীলকুঠিকে ঘিরে। অন্য এলাকার নীলকুঠিগুলোর মতো এটি ইংরেজরা বিক্রি করতে না পারলেও পরবর্তীতে জমিদাররা এটি কাচারিঘর হিসেবে ব্যবহার করে।
দেশভাগের পর ১৯৪৭ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে এই ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। পরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে ঘোষণা করে। বর্তমানে নীলকুঠির পাশেই স্থাপন করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মহাবিদ্যালয় ও তার নামে একটি স্মৃতি জাদুঘর। এছাড়াও, নীলকুঠির আশপাশে বিস্তৃত ১০ একর জমিতে রয়েছে চমৎকার একটি আমবাগান।
যেভাবে পৌঁছাবেন
ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে রয়েল, সোনার তরী, এসবি পরিবহণ, জেআর পরিবহণ, চুয়াডাঙ্গা এক্সপ্রেস, হানিফ, দর্শনা বা পূর্বাশা ডিলাক্সের মাধ্যমে সরাসরি ঝিনাইদহ যেতে পারবেন। এসি ও নন-এসি বাসে ভাড়া পরবে ৬৫০ থেকে ১৩০০ টাকার মধ্যে। ঝিনাইদহ শহরে পৌঁছে স্থানীয় বাসে মহেশপুর এবং সেখান থেকে রিকশা বা সিএনজিতে করে খালিশপুর নীলকুঠি ভ্রমণ করা যাবে।
থাকার ব্যবস্থা
ঝিনাইদহ শহরে পর্যটকদের জন্য বেশ কয়েকটি মানসম্মত আবাসিক হোটেল রয়েছে। হোটেল রাতুল, হোটেল রেডিয়েশন, হোটেল জামান, নয়ন হোটেল, হোটেল ড্রিম ইন এবং ক্ষণিকা রেস্ট হাউজ এর মধ্যে অন্যতম।
খাওয়ার জায়গা
খাবারের জন্য শহরের পায়রা চত্বর এলাকায় অবস্থিত ক্যাফে কাশফুল, কস্তুরি হোটেল, অজয় কিচেন, লিজা ফাস্ট ফুড, ইং কিং চাইনিজ, রূপসী বাংলা রেস্তোরাঁ, সুইট হোটেল ও আহার অন্যতম জনপ্রিয়।
আশেপাশের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
খালিশপুর ভ্রমণের পাশাপাশি ঝিনাইদহ জেলার অন্যান্য আকর্ষণীয় স্থানও ঘুরে দেখতে পারেন। যেমন:
- বারোবাজার
- জোড় বাংলা মসজিদ
- গাজী কালু ও চম্পাবতীর মাজার
- গলাকাটা মসজিদ
- শৈলকুপা জমিদার বাড়ি
- ঢোল সমুদ্র দীঘি
- নলডাঙ্গা রাজবাড়ী রিসোর্ট
- মিয়ার দালান
- জোহান ড্রিম ভ্যালী পার্ক
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!