বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এ জেলা দেশের আম উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় আমের পাইকারি বাজার। প্রতি আমের মৌসুমে এই বাজারে শত কোটি টাকার বেশি বাণিজ্য হয়। মে থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে চলে আম কেনাবেচার ব্যস্ততা।
রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আরও কিছু আমের বাজার থাকলেও, কানসাট আমের বাজার পাইকারি বেচাকেনার জন্য সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয়। এখানে বিভিন্ন জাতের সুস্বাদু আম পাওয়া যায়, যা স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বিক্রি করে থাকেন। আপনি চাইলে বাজার থেকে সরাসরি আম কিনে খেতে বা প্যাকেট করে নিয়ে যেতে পারেন।
কানসাট আমের বাজারে যাওয়ার উপযুক্ত সময়
এই বাজারে আম বেচাকেনা শুরু হয় আম পরিপক্ক হওয়ার পর থেকে। সাধারণত মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত বাজারে আমের সরবরাহ থাকে। তবে জুন মাসে বাজার সবচেয়ে বেশি সরগরম থাকে, কারণ এই সময়েই বেশিরভাগ জাতের আম বাজারে আসে।
কানসাট আমের বাজারে যাওয়ার উপায়
কানসাট যেতে হলে প্রথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌঁছাতে হবে। ঢাকা থেকে সরাসরি চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী বেশ কয়েকটি বাস চলাচল করে। কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে দেশ ট্রাভেলস, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, গ্রামীণ ট্রাভেলস, তুহিন এলিট ইত্যাদি পরিবহনের এসি ও নন-এসি বাস রয়েছে। ভাড়া ৮৩০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
আপনি সরাসরি কানসাট নামতে পারেন, অথবা চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে নেমে লোকাল যানবাহনে ২১ কিলোমিটার দূরের কানসাট পৌঁছাতে পারেন।
রেলপথে ভ্রমণের জন্য কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে সরাসরি চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাওয়া যায়। ট্রেনের ভাড়া আসনভেদে ৫১৫ থেকে ১১৭৩ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। একদিনের ভ্রমণের জন্য রাতের বাসে রওনা হয়ে সকালে পৌঁছানো এবং সারাদিন ঘুরে সন্ধ্যায় ঢাকার উদ্দেশ্যে ফেরত যাওয়া ভালো বিকল্প হতে পারে।
কানসাটে থাকার ব্যবস্থা
রাতে থাকার প্রয়োজন হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহরে বেশ কয়েকটি সাধারণ মানের হোটেল রয়েছে, যেমন— হোটেল রোজ, হোটেল আল নাহিদ, হোটেল স্বপ্নপুরী, নবাবগঞ্জ বোর্ডিং ও হোটেল রংধনু। তবে এসব হোটেলের মান খুব বেশি ভালো নয়।
যদি ভালো মানের থাকার ব্যবস্থা চান, তাহলে রাজশাহী শহরে থাকতে পারেন। সেখানে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেলে ১৯০০ থেকে ৪৬০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন মানের কক্ষ পাওয়া যায়। এছাড়া হোটেল হক্স ইন, নাইস ইন্টারন্যাশনাল, মুক্তা ইন্টারন্যাশনাল, ডালাস ইন্টারন্যাশনাল, শুকরান ইন্টারন্যাশনাল ইত্যাদি হোটেলে ৫০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে কক্ষ ভাড়া পাওয়া যায়।
কানসাট আমের বাজারের আশেপাশে দর্শনীয় স্থান
কানসাট আমের বাজারে ঘুরে দেখা ছাড়াও আশেপাশে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে—
- আমের বাগান: বাজারের আশেপাশে অনেক আমবাগান আছে, যেখানে ঘুরে আম পাড়া ও কেনার অভিজ্ঞতা নিতে পারেন।
- কানসাট জমিদার বাড়ি: ঐতিহ্যবাহী এ জমিদার বাড়িটি ইতিহাসপ্রেমীদের জন্য আকর্ষণীয় স্থান।
- ছোট সোনা মসজিদ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের অন্যতম ঐতিহাসিক মসজিদ, যা মোঘল আমলের স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিখ্যাত।
- নাচোলের আলপনা গ্রাম (টিকইল): ঐতিহ্যবাহী আলপনা আঁকা ঘরবাড়ির জন্য বিখ্যাত এ গ্রাম ভ্রমণপিপাসুদের জন্য দারুণ আকর্ষণীয় হতে পারে।
এছাড়া রাজশাহীতে গেলে আরও অনেক দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা যায়। রাজশাহীর পর্যটন গাইড পড়তে পারেন আমাদের রাজশাহী ভ্রমণ গাইডে।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!