চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার ছোট্ট একটি গ্রাম টিকইল (Tikoil), যা শিল্পের এক উন্মুক্ত ক্যানভাস হিসেবে পরিচিত। এই গ্রামের প্রতিটি বাড়ির দেয়াল যেন রঙিন তুলির আঁচড়ে সেজে ওঠে, যেখানে ফুটে ওঠে নান্দনিক সব আলপনা। গ্রামবাসীদের এই অনন্য শিল্পচর্চার কারণে টিকইল গ্রাম দেশ-বিদেশে “আলপনা গ্রাম” (The Alpona Village) নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে।
টিকইল গ্রামের আলপনা সংস্কৃতি
প্রধানত গৃহিণী ও গ্রামের মেয়েরাই এই আলপনা অঙ্কনের কাজ করে থাকেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যকে রক্ষা করে চলেছেন। সাধারণত মাটির তৈরি বাড়িগুলোর দেয়ালেই এই নকশাগুলো আঁকা হয়। শুধু ঘরের বাহিরের দেয়াল নয়, রান্নাঘরসহ ঘরের প্রতিটি অংশেই আলপনার ছোঁয়া থাকে।
শুরুতে আলপনা আঁকার জন্য চক (খড়িমাটি), গিরিমাটি, রং এবং তারপিন তেল ব্যবহার করা হতো, তবে এগুলোর স্থায়িত্ব কম থাকায় বর্তমানে ব্যবহার করা হয় গিরিমাটি, শুকনো বরইয়ের গুঁড়া, আমের পুরোনো আঁটির শাঁস, চকগুঁড়া, বিভিন্ন প্রাকৃতিক রং, মানকচু ও কলাগাছের কস। এই উপাদানগুলোর সংমিশ্রণে তৈরি মিশ্রণ ৪-৫ দিন ভিজিয়ে রেখে আলপনা আঁকা হয়, যা প্রায় এক বছর পর্যন্ত টিকে থাকে।
আলপনার গুরুত্ব ও ঐতিহ্য
স্থানীয়দের বিশ্বাস, আলপনার কারণে তাদের ঘরবাড়ি পবিত্র থাকে এবং পরিবারের সদস্যরা মানসিক প্রশান্তি অনুভব করেন। তবে এই শিল্পের সুনির্দিষ্ট উৎপত্তি সম্পর্কে গ্রামের মানুষের তেমন ধারণা নেই। বিভিন্ন উৎসব, পার্বণ ও বিশেষ অনুষ্ঠানে তারা পূর্বপুরুষদের এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য আলপনা আঁকে।
কিভাবে যাবেন?
✅ ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ
- সড়কপথে ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দূরত্ব ২৯৬ কিলোমিটার।
- ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, একতা এন্টারপ্রাইজ, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, কেটিসি হানিফ, এভারগ্রীন ট্রান্সপোর্ট ইত্যাদি বাস চলাচল করে।
- এসি/নন-এসি বাসের ভাড়া ৮২০ থেকে ১,৪০০ টাকা।
- ট্রেনে যাতায়াতের জন্য বনলতা এক্সপ্রেস (শুক্রবার বাদে সপ্তাহে ৬ দিন) চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত যায়। ট্রেনের ভাড়া ৫১৫ থেকে ১,১৭৩ টাকা।
✅ চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আলপনা গ্রাম
- চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থেকে আলপনা গ্রামের দূরত্ব ২৮ কিলোমিটার।
- বাস, ট্যাক্সি বা সিএনজি ভাড়া নিয়ে নাচোল উপজেলার টিকইল গ্রামে যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন?
নাচোলে থাকার তেমন ভালো ব্যবস্থা নেই, তাই থাকতে হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে আসতে হবে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কিছু ভালো মানের হোটেল:
- হোটেল রোজ
- হোটেল আল নাহিদ
- হোটেল স্বপ্নপুরী
- নবাবগঞ্জ বোর্ডিং
- হোটেল রংধনু
কোথায় খাবেন?
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিভিন্ন মানের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। খাবারের জন্য জনপ্রিয় কিছু জায়গা থেকে খেতে পারেন। এছাড়া শিবগঞ্জের বিখ্যাত "আদি চমচম" খেতে ভুলবেন না।
ভ্রমণের জন্য কিছু পরামর্শ
✔ গ্রামের মানুষদের ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যা সৃষ্টি করে এমন কাজ করবেন না।
✔ ছবি বা ভিডিও তোলার আগে স্থানীয়দের অনুমতি নিন।
✔ গ্রামবাসীদের সঙ্গে ভদ্র ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করুন।
টিকইল গ্রামের রঙিন আলপনার সৌন্দর্য উপভোগ করতে এবং এই চমৎকার শিল্পধারা কাছ থেকে দেখতে অবশ্যই একবার ঘুরে আসুন এই অনন্য গ্রাম থেকে!
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!