কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার নাফ নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ। আঠারো শতকের শেষ দিকে টেকনাফে সুপেয় পানির অভাব মেটাতে থানা প্রাঙ্গণে একটি কূপ খনন করা হয়েছিল। প্রতিদিন স্থানীয় রাখাইন তরুণীরা এই কূপ থেকে পানি নিতে আসত। সেই সময় কলকাতা থেকে বদলি হয়ে আসা পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজ ভট্টাচার্যের সঙ্গে পরিচয় হয় এক রাখাইন জমিদার কন্যা মাথিনের। পরিচয়ের পর তাদের মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
দুজন বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলেও ধীরাজের বাবার অসুস্থতার কারণে তাকে কলকাতায় ফিরতে হয়। মাথিন তাকে যেতে বাঁধা দিলেও ধীরাজ গোপনে কলকাতায় চলে যান। প্রিয় মানুষকে হারিয়ে দুঃখে, কষ্টে মাথিন অনিদ্রা আর অনাহারে দিন কাটাতে শুরু করেন। শেষমেশ দুঃসহ কষ্ট সহ্য করতে না পেরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ধীরাজ ও মাথিনের এই প্রেমকাহিনীর স্মৃতি ধরে রাখতে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন কূপটির নাম রাখে “মাথিনের কূপ”। ২০০৬ সালে টেকনাফ থানার তৎকালীন কর্মকর্তা খালেদ হোসেন এবং সাংবাদিক আব্দুল কুদ্দুস রানা কূপটি সংস্কার করেন। এরপর থেকে এটি অমর প্রেমের নিদর্শন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
কিভাবে যাবেন
সড়কপথে টেকনাফ
ঢাকার ফকিরাপুল, আরামবাগ, আব্দুল্লাহপুর, গাবতলী এবং সায়েদাবাদ থেকে শ্যামলী, সেন্টমার্টিন পরিবহন, ঈগল, এস আলম, মডার্ন লাইন, গ্রীন লাইন ইত্যাদি বাস সরাসরি টেকনাফ যায়। বাসের মান এবং শ্রেণী অনুযায়ী জনপ্রতি ভাড়া ৯০০ থেকে ২৫০০ টাকা। টেকনাফ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পুলিশ ফাঁড়ির চত্বরে মাথিনের কূপ দেখতে পাবেন।
কক্সবাজার হয়ে টেকনাফ
ঢাকা থেকে সড়ক, রেল অথবা আকাশপথে কক্সবাজার গিয়ে সেখান থেকে লোকাল বাস, জীপ বা সিএনজিতে টেকনাফ যাওয়া যায়।
- ট্রেনে কক্সবাজার ভ্রমণ:
- ঢাকা থেকে সরাসরি ট্রেন: কক্সবাজার এক্সপ্রেস বা পর্যটক এক্সপ্রেস।
- চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার: সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা-নিশীথা, মহানগর প্রভাতী/গোধূলী।
ভাড়া আসন অনুযায়ী ৪০৫ থেকে ১৩৯৮ টাকার মধ্যে।
- বাসে কক্সবাজার:
সৌদিয়া, এস আলম মার্সিডিজ বেঞ্জ, গ্রিন লাইন, হানিফ, শ্যামলী, সোহাগ পরিবহন ইত্যাদি বাসে ৯০০ থেকে ২৫০০ টাকা ভাড়ায় কক্সবাজার যেতে পারবেন। - আকাশপথে কক্সবাজার:
বাংলাদেশ বিমান, নভোএয়ার, ইউএস বাংলা এবং এয়ার আস্ট্রা ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে।
কোথায় থাকবেন
টেকনাফ থেকে দিনে গিয়ে আবার দিনে ফিরে আসা যায় বলে বেশিরভাগ ভ্রমণকারী কক্সবাজারে অবস্থান করেন। তবে টেকনাফে থাকার প্রয়োজন হলে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেলে থাকতে পারেন। রুম ভেদে ৬০০ থেকে ১৫০০ টাকা খরচ হবে। এছাড়া সাধারণ মানের আবাসিক হোটেলে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে থাকতে পারবেন।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!