হাতিরঝিল ঢাকার অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান, যা নগরবাসীর বিনোদনের জন্য দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ ও মনোরম সৌন্দর্যের কারণে বিশেষ জনপ্রিয়। এখানে রয়েছে মনকাড়া সেতু, সাদা সিঁড়ি, ও নজরকাড়া ফোয়ারা। এই জায়গার বিশেষ আকর্ষণ হলো পালতোলা নৌকায় নৌবিহারের সুযোগ। হাতিরঝিলের উন্নয়নে তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন পরিকল্পনা, যার মধ্যে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, শিশুপার্ক, বিশ্বমানের থিয়েটার, ও শরীর চর্চা কেন্দ্র উল্লেখযোগ্য।
হাতিরঝিল নামকরণের ইতিহাস
ইতিহাস থেকে জানা যায়, একসময় পিলখানা থেকে বেগুনবাড়ি ঝিলে হাতি যাতায়াত করত। এই কারণে এলাকা গুলোর নামের সঙ্গে "হাতি" শব্দ যুক্ত হয়, যেমন হাতিরপুল ও এলিফ্যান্ট রোড। হাতি গোসলের জন্য ব্যবহৃত হওয়ায় এই ঝিলের নাম হয় "হাতিরঝিল"।
নৌকা ভ্রমণের আনন্দ
হাতিরঝিলের পানিতে চালু হয়েছে যাত্রীবাহী ওয়াটারবাস। এটি একদিকে ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য উপভোগ্য, অন্যদিকে গুলশান থেকে কাওরান বাজার সহজে পৌঁছানোর মাধ্যম। বর্তমানে ৫টি ওয়াটারবাসে প্রতিটি ৪৫ জন যাত্রী ধারণক্ষমতা রাখে।
চক্রাকার বাস সার্ভিস
হাতিরঝিলের চারপাশ ঘুরে দেখার জন্য চালু হয়েছে চক্রাকার বাস সার্ভিস। ৩২ থেকে ৪৬ আসনের এই বাসগুলোতে যাত্রীরা মুখোমুখি বসতে পারেন। বাসটি এফডিসি থেকে শুরু করে রামপুরা ও বনশ্রী হয়ে আবার একই জায়গায় ফিরে আসে। পুরো হাতিরঝিল ভ্রমণ করতে ভাড়া মাত্র ৩০ টাকা।
মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফাউন্টেইন
হাতিরঝিলের সৌন্দর্য আরও বাড়ানোর জন্য স্থাপন করা হয়েছে মিউজিক্যাল ড্যান্সিং ফাউন্টেইন। পানির ফোয়ারাগুলো মিউজিকের তালে আলোর ঝলকানি ছড়ায়। সাধারণত সন্ধ্যা ৭:৩০ এবং রাত ৯:৩০-এ এটি ১৫ মিনিটের জন্য চালু হয়।
কিভাবে যাবেন
ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে বাস বা সিএনজিতে সহজেই হাতিরঝিল পৌঁছানো যায়।
হাতিরঝিল একদিন কাটানোর জন্য এক অনন্য স্থান, যেখানে বিনোদন ও প্রকৃতির ছোঁয়া একসঙ্গে উপভোগ করা যায়।
হাতিরঝিলে কোথায় খাবেন
হাতিরঝিলে ভ্রমণের পাশাপাশি বিভিন্ন খাবারের আস্বাদন নেওয়ার জন্য বেশ কিছু ভালো জায়গা রয়েছে। এখানে স্থানীয় থেকে শুরু করে নানা ধরনের খাবারের বিকল্প পাওয়া যায়।
ঝিলপাড়ের ক্যাফেগুলো
হাতিরঝিলের ঝিলপাড়ে বেশ কিছু ক্যাফে এবং রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখান থেকে ঝিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে খাবার খাওয়া যায়। জনপ্রিয় কিছু ক্যাফের মেনুতে পাবেন:
- বার্গার, স্যান্ডউইচ
- কফি, চা, এবং ঠান্ডা পানীয়
- পাস্তা ও পিজ্জা
ওয়াটারফ্রন্ট রেস্টুরেন্ট
হাতিরঝিলের পানির পাশেই রয়েছে কয়েকটি ওয়াটারফ্রন্ট রেস্টুরেন্ট। এগুলোর বিশেষত্ব হলো খাবারের সঙ্গে মনোরম পরিবেশের মেলবন্ধন। এখানে পাবেন:
- দেশি খাবার (ভাত, মাছ, মাংস)
- চাইনিজ খাবার
- তন্দুরি এবং কাবাব
স্ট্রিট ফুডের স্বাদ
যদি হালকা খাবার পছন্দ করেন, তাহলে হাতিরঝিলের স্ট্রিট ফুডের স্টলগুলো ঘুরে দেখতে পারেন। এগুলোতে পাওয়া যায়:
- ফুচকা, চটপটি
- ঝালমুড়ি ও শিঙাড়া
- ঠান্ডা পানীয় এবং আইসক্রিম
পিকনিকের জন্য নিজস্ব ব্যবস্থা
যদি পরিবার বা বন্ধুদের নিয়ে পিকনিকের পরিকল্পনা করেন, তবে বাড়ি থেকে নিজস্ব খাবার নিয়ে আসতে পারেন। ঝিলের পাশে বসে খাওয়া এক বিশেষ অভিজ্ঞতা হতে পারে।
খাবারের পাশাপাশি পরামর্শ
- রেস্টুরেন্টগুলোতে খাবার অর্ডারের আগে দাম যাচাই করুন।
- সন্ধ্যায় ক্যাফেগুলোতে ভিড় হতে পারে, তাই আগে থেকে জায়গা নিশ্চিত করে নিন।
- পানির বোতল ও হালকা স্ন্যাকস সঙ্গে রাখতে পারেন।
হাতিরঝিলের পরিবেশে খাবার খাওয়ার অভিজ্ঞতা আপনার ভ্রমণকে আরও উপভোগ্য করে তুলবে!
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!