টাঙ্গুয়ার হাওর

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠাপানির জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। নীল আকাশ, জলাবন, সবুজ প্রকৃতি আর দূরের পাহাড় এই হাওরকে স্বর্গীয় সৌন্দর্য দিয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওরের মোট আয়তন ৬,৯১২ একর হলেও বর্ষায় এটি প্রায় ২০,০০০ একর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

এখানে প্রায় ১৪০ প্রজাতির মাছ, ১২ প্রজাতির ব্যাঙ, এবং ১৫০ প্রজাতির বেশি সরীসৃপ রয়েছে। শীতকালে প্রায় ২৫০ প্রজাতির অতিথি পাখি হাওরে আসে।

ভ্রমণের সেরা সময়

টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো সময় বর্ষাকাল। জুন থেকে অক্টোবর এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের সেরা সময়। শরতের নীল আকাশ ও স্বচ্ছ পানি এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়। শীতকালে পানি কমে যায়, তবে অতিথি পাখি দেখতে গেলে শীতকালই উত্তম।

কী দেখবেন

টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রমণের পাশাপাশি আরও কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • ওয়াচ টাওয়ার
  • সোয়াম্প ফরেস্ট
  • শহীদ সিরাজ লেক (নিলাদ্রি লেক)
  • শিমুল বাগান
  • বারিক টিলা
  • যাদুকাটা নদী
  • লাউড়ের গড়

যাতায়াতের উপায়

  • ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ: ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জে সরাসরি বাসে যাওয়া যায়। সায়েদাবাদ থেকে মামুন বা শ্যামলী পরিবহণ এবং মহাখালী থেকে এনা পরিবহণে ভাড়া ৮২০-৮৫০ টাকা। সময় লাগে প্রায় ৬ ঘণ্টা।
  • সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ: সিলেটের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে সুনামগঞ্জে লোকাল বা সিটিং বাস পাওয়া যায়। ভাড়া ১০০ টাকা, সময় লাগে ২ ঘণ্টা।

সুনামগঞ্জ থেকে সিএনজি, লেগুনা বা বাইকে তাহিরপুরে যাওয়া যায়। তাহিরপুর থেকে নৌকা ভাড়া করে টাঙ্গুয়ার হাওরে পৌঁছানো যায়।

হাউজবোট ও নৌকা ভাড়া

  • হাউজবোট:
    • প্রিমিয়াম হাউজবোট প্যাকেজ: জনপ্রতি ৬,০০০-১০,০০০ টাকা।
    • সেমি হাউজবোট: ৪,৫০০-৬,০০০ টাকা।
    • সম্পূর্ণ হাউজবোট রিজার্ভ: ৪০,০০০-৮০,০০০ টাকা।
  • নৌকা:
    • ছোট নৌকা: ২,৫০০-৩,০০০ টাকা।
    • মাঝারি নৌকা: ৩,৫০০-৪,৫০০ টাকা।
    • বড় নৌকা: ৫,০০০-১০,০০০ টাকা।
      রান্নার ব্যবস্থা মাঝির সাথে আলোচনা করে নিন।

কোথায় থাকবেন

পর্যটকরা সাধারণত হাউজবোটেই রাত কাটান। এছাড়া টেকেরঘাট বাজার বা সুনামগঞ্জ শহরের হোটেলে থাকতে পারেন। তবে টাঙ্গুয়ার হাওরের নৌকায় রাত কাটানোর অভিজ্ঞতা অনন্য।

খাবার ব্যবস্থা

হাউজবোট প্যাকেজে খাবার অন্তর্ভুক্ত থাকে। যদি নিজে রান্নার ইচ্ছে থাকে, তাহিরপুর থেকে বাজার করে নিতে হবে। হাওরের মাঝখানের বাজার থেকে তাজা মাছও কিনতে পারেন।

২ দিন ১ রাতের ট্যুর প্ল্যান

  1. রাতের বাসে সুনামগঞ্জ পৌঁছে সকালে নাস্তা সেরে সিএনজি বা লেগুনা ভাড়া করে তাহিরপুর যান।
  2. নৌকা ভাড়া করে সকাল ১০টার মধ্যে যাত্রা শুরু করুন। ওয়াচ টাওয়ার, জলাবন এবং হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করুন।
  3. দুপুরের পর টেকেরঘাটে পৌঁছে নীলাদ্রি লেকে গা ভেজান। নৌকায় রাত কাটান।
  4. সকালে শিমুল বাগান, যাদুকাটা নদী, বারিক টিলা ঘুরে সুনামগঞ্জ ফিরে আসুন।

ভ্রমণের সতর্কতা ও পরামর্শ

  • লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে রাখুন।
  • দলবদ্ধ ভ্রমণ করুন, এতে খরচ কম হবে।
  • হাওরের পরিবেশ দূষিত করবেন না।
  • টাঙ্গুয়ার মাছ, বন্যপ্রাণী ও পাখি ধরার চেষ্টা করবেন না।

যা সঙ্গে রাখবেন

টর্চলাইট, ব্যাটারি, রেইনকোর্ট, পাওয়ার ব্যাংক, টয়লেট পেপার, স্যান্ডেল, সানগ্লাস, খাবার পানি এবং দ্রুত শুকায় এমন জামাকাপড়।

টাঙ্গুয়ার হাওর এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
162.96 কিমি
সুনামগঞ্জ থেকে
33.05 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
নীলাদ্রি লেক
লালঘাট ঝর্ণাধারা
শিমুল বাগান
বারেক টিলা
সাত শহীদের মাজার
নারায়ণতলা
ডিঙ্গাপোতা হাওর
ভেতরবন্দ জমিদার বাড়ি
হাসন রাজার জাদুঘর
বিরিশিরি
সোমেশ্বরী নদী, দুর্গাপুর
উপজাতীয় কালচারাল একাডেমী

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন