বিরিশিরি, নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলায় অবস্থিত, একটি মনোমুগ্ধকর গ্রাম যেখানে প্রকৃতি তার অনন্য রূপে বিরাজমান। বিজয়পুরে অবস্থিত চীনামাটির পাহাড় এবং নীল পানির হ্রদ এখানে প্রধান আকর্ষণ। পাহাড়ের বিস্তৃতি প্রায় ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৬০০ মিটার চওড়া। হ্রদের স্বচ্ছ নীল জল নিমিষেই মনকে প্রশান্ত করে। এই হ্রদের প্রধান পানির উৎস হলো সোমেশ্বরী নদী, যা স্থানীয়ভাবে কয়লা খনি হিসেবেও পরিচিত। নীল হ্রদের মতোই সোমেশ্বরী নদী তার রূপে অনন্য।
দর্শনীয় স্থান
বিরিশিরিতে ভ্রমণের সময় শুধু চীনামাটির পাহাড় বা নীল জলের হ্রদই নয়, আরও অনেক কিছুই দেখার আছে। সোমেশ্বরী নদীর কাশবন, রানীখং গির্জা, কমলা রানীর দীঘি, পাহাড়ি কালচারাল একাডেমি, এবং তেভাগা আন্দোলনের স্মৃতিস্তম্ভগুলো এক অনন্য অভিজ্ঞতা দেবে। বর্ষায় সোমেশ্বরী নদী পূর্ণ রূপে দেখা দিলে পর্যটকদের ভিড় বেড়ে যায়। দূর থেকে দেখা গারো পাহাড়ের সবুজ সৌন্দর্য্য আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তোলে এই স্থানকে।
বিরিশিরি যাওয়ার উপায়
- বাসে: ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি দুর্গাপুরের উদ্দেশ্যে সরকার ও জিন্নাত পরিবহনের বাস চলাচল করে। ভাড়া ২৫০-৩৫০ টাকা। বাস সাধারণত সুখনগরী পর্যন্ত যায়, সেখান থেকে নৌকা পার হয়ে রিকশা বা মোটরসাইকেলে দুর্গাপুর পৌঁছাতে পারবেন। রিকশায় ৮০-১০০ টাকা, মোটরসাইকেলে ১০০ টাকা (২ জন) লাগে।
- ট্রেনে: হাওড় এক্সপ্রেস বা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে শ্যামগঞ্জ নেমে সিএনজি বা বাসে বিরিশিরি যাওয়া যায়। বিকল্পভাবে, নেত্রকোনা চল্লিশা বাজার থেকে মোটরসাইকেলে জনপ্রতি ৩০০ টাকায় সব স্পট ঘুরে দেখা যায়।
- চট্টগ্রাম থেকে: অলংকার মোড় থেকে সাধারণ মানের বাসে ৪৫০-৬০০ টাকা ভাড়ায় সরাসরি বিরিশিরি যাওয়া যায়।
স্থানীয় পরিবহন
বিরিশিরি বাজার থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা ভাড়া নিয়ে ৫-৬ ঘণ্টায় সব দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখতে পারেন। ভাড়া পড়বে ৫০০-৬০০ টাকা। ঢাকা ফেরার সময় দুর্গাপুরের তালুকদার প্লাজার সামনে থেকে রাত ১১:০০ ও ১১:৩০-এ দুটি নাইট কোচ মহাখালীর উদ্দেশ্যে ছাড়ে। এছাড়া, জারিয়া স্টেশন থেকে দুপুর ১২টায় ঢাকার ট্রেন পাওয়া যায়।
থাকার ব্যবস্থা
সুসং দুর্গাপুরে থাকার জন্য বেশ কিছু মধ্যম মানের হোটেল ও গেস্ট হাউস রয়েছে।
- ডাক বাংলো: জেলা পরিষদ ডাক বাংলো (০১৫৫৮৩৮০৩৮৩, ০১৭২৫৫৭১৭৯৫)
- YMCA ও YWCA গেস্ট হাউজ: (০১৮১৮৬১৩৪৯৬, ০১৭১২০৪২৯১৬)
- ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমি গেস্ট হাউজ: (০৯৫২৫-৫৬০৪২, ০১৮১৫৪৮২০০৬)
- হোটেল: স্বর্ণা গেস্ট হাউস, হোটেল সুসং, হোটেল গুলশান, নদীবাংলা গেস্ট হাউস ইত্যাদি। ভাড়া ৫০০-৮০০ টাকা।
খাবার ও স্থানীয় স্বাদ
বিরিশিরিতে খাবারের বিকল্প কম, তাই হালকা খাবার সঙ্গে রাখা ভালো। তবে স্থানীয় হোটেলগুলোতে ভাত, ডাল, মাছ, মাংসের পাশাপাশি বকের মাংস পাওয়া যায়। দুর্গাপুর বাজারে নেত্রকোণার বিখ্যাত বালিশ মিষ্টির স্বাদ না নিয়ে ফিরবেন না!
বিরিশিরি কেন যাবেন?
যদি প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্য আর পাহাড়ি সংস্কৃতি একসঙ্গে উপভোগ করতে চান, তাহলে বিরিশিরি হতে পারে আপনার আদর্শ গন্তব্য। সবুজ পাহাড়, নীল জল, ঐতিহাসিক স্থান ও স্থানীয় সংস্কৃতি মিলিয়ে এটি এক অনন্য ভ্রমণ অভিজ্ঞতা দেবে।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!