কেরাণীগঞ্জ উপজেলার পুরান ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর অপর পাড়ে মোগল আমলের এক অনন্য স্থাপত্য নিদর্শন হলো জিঞ্জিরা প্রাসাদ। "জিঞ্জিরা" শব্দটি "জাজিরা" শব্দের অপভ্রংশ, যার অর্থ দ্বীপ। ১৬২০ খ্রিস্টাব্দে সুবেদার দ্বিতীয় ইব্রাহিম খাঁ এ প্রাসাদটি একটি বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে নির্মাণ করেছিলেন। প্রাসাদটি চারদিকে পানিবেষ্টিত একটি ভূখণ্ডে অবস্থিত হওয়ায় এর নামকরণ করা হয় "জিঞ্জিরা প্রাসাদ" বা "দ্বীপের প্রাসাদ"।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা ও নান্দনিক কারুকাজে শোভিত এই প্রাসাদে যাতায়াতের জন্য কাঠের সাঁকো ব্যবহার করা হতো। ইতিহাস থেকে জানা যায়, পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের পর নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরিবারকে এখানে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী, লালবাগ কেল্লার সঙ্গে জিঞ্জিরা প্রাসাদের সংযোগ স্থাপনের জন্য বুড়িগঙ্গার নিচে একটি গোপন সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছিল, যা মোগল সেনা কর্মকর্তারা ব্যবহার করতেন।
বর্তমানে প্রাসাদের প্রধান ফটক ও দুটি ভবন টিকে থাকলেও সময়ের বিবর্তনে এর চারপাশের নির্জন পরিবেশ বদলে গেছে। একসময়ের নিভৃত গ্রাম আজ অট্টালিকা ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। জিঞ্জিরা প্রাসাদ আজও ইতিহাসপ্রেমী ও পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
কিভাবে যাবেন
রাজধানী ঢাকায় যাতায়াতের জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা থেকে বাস, ট্রেন, বিমান ও লঞ্চসহ বিভিন্ন পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকার গুলিস্তান থেকে সদরঘাট এসে বুড়িগঙ্গা নদী পার হয়ে সোয়ারীঘাটের কাছে বড় কাটারা পৌঁছানোর পর স্থানীয় যেকোনো ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলেই আপনি জিঞ্জিরা প্রাসাদের অবস্থান জানতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
রাজধানী ঢাকার প্রায় সব এলাকাতেই কম-বেশি আবাসিক হোটেল পাওয়া যায়। এখানে পাঁচ তারকা মানের বিলাসবহুল হোটেল থেকে শুরু করে সাধারন বাজেটের হোটেলও রয়েছে। পাঁচ তারকা হোটেলগুলোর মধ্যে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ, হোটেল লা মেরিডিয়েন, র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, ফকিরাপুল, পল্টন, গুলিস্তান এবং পুরান ঢাকায় সাশ্রয়ী মূল্যে থাকার জন্য অসংখ্য আবাসিক হোটেল রয়েছে।
কোথায় খাবেন
আপনি যদি পুরান ঢাকা এলাকায় যান, তাহলে এখানকার বিখ্যাত কিছু স্বাদिष্ট খাবারের স্বাদ নিতে ভুলবেন না। কাজি আলাউদ্দিন রোডের হাজির বিরিয়ানি, হোটেল রয়েলের পেস্তা বাদামের শরবত, বেচারাম দেউড়ি রোডে নান্নার মোরগ পোলাও, লালবাগ শাহী মসজিদের পাশে মোহন মিয়ার জুস এবং হানিফের তেহরি—এসব অনন্য রেসিপির স্বাদ আপনার ভ্রমণকে স্মরণীয় করে তুলবে।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!