পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় অবস্থিত আর্মেনিয়ান চার্চ (Armenian Church) একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। ১৭৮১ সালে আর্মেনীয় বণিক ও ধর্মযাজকদের উদ্যোগে নির্মিত হয় এই গির্জাটি। এর আগে, এই স্থানে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রার্থনার জন্য একটি ছোট ঘর ছিল।
আর্মেনিয়ানদের আগমন ও ইতিহাস
অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতকে ব্যবসায়িক কারণে আর্মেনিয়ানরা ঢাকায় আসতে শুরু করে। তাদের প্রাথমিক প্রার্থনার স্থান ছিল তেজগাঁওয়ের চার্চ অফ দ্য হোলি রোজারিও, যা ১৬৭৭ সালে নির্মিত হয়। এখানেই প্রথম আর্মেনিয়ান সমাধি হয়, যার মধ্যে ১৭১৪ সালে খোজাহ এভিয়েটেস লেজারের কবর উল্লেখযোগ্য। এই সমাধি প্রমাণ করে যে, আর্মেনিয়ানরা প্রায় ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ঢাকায় বসবাস করছে।
গির্জার স্থাপত্য ও বৈশিষ্ট্য
ইউরোপীয় স্থাপত্যে নির্মিত আর্মেনিয়ান চার্চটি একসময় আর্মেনিয়ানদের কবরস্থান ছিল। গির্জার জন্য জমি দান করেন আগা ক্যাটচিক মিনাস। গির্জার ভেতরে ঢুকতেই বাঁদিকে কাঠের পেঁচানো সিঁড়ি, ডানে নারী ও শিশুদের এবং বাঁ-পাশে পুরুষদের বসার স্থান রয়েছে। মূল বেদিতে যিশুখ্রিষ্টের চিত্রকর্ম এবং ক্রুশচিহ্ন স্থান পেয়েছে। চার্চ সংলগ্ন সমাধিক্ষেত্রে রয়েছে প্রায় তিন শতাধিক কবর, যার অধিকাংশই মার্বেল পাথরে নির্মিত।
সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন কবরটি ক্যাটচিক এভিটিক থমাসের। তার সমাধির পাশে শ্বেতপাথরের এক নারীমূর্তি রয়েছে, যা তার স্ত্রী কলকাতা থেকে এনে স্থাপন করেছিলেন।
পরিশেষে
চার্চে সমাধিস্থ শেষ ব্যক্তি ছিলেন ভেরোনিকা মার্টিন। ২০০৫ সালের ৭ মে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার স্বামী মাইকেল জোসেফ মার্টিন ১৯৮৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চার্চ দেখাশোনা করেন। মাইকেল ছিলেন ঢাকার শেষ আর্মেনিয়ান বংশোদ্ভূত ব্যক্তি, যিনি ২০২০ সালে কানাডায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
কিভাবে পৌঁছাবেন
পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় অবস্থিত এই গির্জায় বাস, সিএনজি বা ব্যক্তিগত গাড়িতে সহজেই পৌঁছানো যায়। গুলিস্তানে এসে রিকশায় করেও যাওয়া সম্ভব।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
গির্জার কাছেই রয়েছে সদরঘাট, আহসান মঞ্জিল, বিউটি বোর্ডিং, বাহাদুর শাহ পার্ক, লালবাগ দুর্গ, তারা মসজিদসহ আরও অনেক আকর্ষণীয় স্থাপনা। হাতে সময় থাকলে এগুলো ঘুরে দেখতে পারেন।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!