বরিশাল জেলা সদর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু উদ্যান বা বেলস পার্ক অবস্থিত। ১৮৯৬ সালে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে এন.ডি.বিটসন বেলস বরিশালে আসেন। ব্রিটিশ রাজা পঞ্চম জর্জের আগমনকে স্মরণ করে কীর্তনখোলা নদীর তীরে এই উদ্যানটি নির্মাণ করা হয়। বরিশাল শহরের উন্নয়ন, মুসলিম শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্যে বিটসন বেলসের অবদানের জন্য তার নামে এই উদ্যানের নামকরণ করা হয় বেলস পার্ক। বিভিন্ন সময়ে অনেক রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এই পার্কে তাদের মূল্যবান ভাষণ দিয়েছেন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণকে স্মরণীয় করে রাখতে এই পার্কে একটি মুক্ত মঞ্চ ও ম্যুরাল স্থাপন করা হয়। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার বেলস পার্কের নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু উদ্যান রাখে। বর্তমানে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন গণপূর্ত অধিদপ্তরের অধীনে এই উদ্যানটি পরিচালনা করে।
গাছ-গাছালিতে ঘেরা বঙ্গবন্ধু উদ্যানের দৈর্ঘ্য ৫৫০ ফুট ও প্রস্থ ৪৫০ ফুট। উদ্যানের চারপাশে একটি ওয়াকওয়ে, হ্যালিপ্যাড, খেলার মাঠ, বসার ছাউনি ও একটি হ্রদ রয়েছে। অতীতে বরিশাল শহরের প্রধান খেলার মাঠ হিসেবে পরিচিত এই উদ্যানে এখন বৃক্ষ মেলা, বাণিজ্য মেলা ও কুচকাওয়াজসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বঙ্গবন্ধু উদ্যান থেকে কীর্তনখোলা নদীর মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং সন্ধ্যার পর সবুজ ঘাসের উপর বর্ণিল আলোর ঝলকানি মন কেড়ে নেয়। বরিশাল জেলার স্থানীয়দের কাছে সকালের হাঁটা ও জগিংয়ের জন্য বেলস পার্ক অত্যন্ত জনপ্রিয়।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়ক, নৌপথ ও আকাশপথে বরিশাল যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে এনা ট্রান্সপোর্ট, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, লাবিবা ক্লাসিক, ইম্পেরিয়াল এক্সপ্রেস, সাকুরা, সুরভী এবং বিআরটিসির বাসে পদ্মা সেতু হয়ে বরিশাল যেতে পারেন। ঢাকার সদরঘাট থেকে এমভি সুন্দরবন, মানামি, এডভেঞ্চার, সুরভী, পারাবত, কীর্তনখোলা ও ফারহান লঞ্চে বরিশাল যাওয়া যায়। এছাড়া হযরত শাহ্ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ডোমেস্টিক এয়ারলাইন্সে বরিশাল যাওয়া সম্ভব। বরিশাল এসে স্থানীয় পরিবহনে বেলস পার্ক বা বঙ্গবন্ধু উদ্যান পৌঁছাতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
বরিশাল শহরে হোটেল এরিনা, হোটেল গ্র্যান্ড পার্ক, হোটেল প্যারাডাইস, হোটেল ওয়ান, হোটেল সেডোনা, হোটেল আলী, হোটেল প্যারাডাইস ও হোটেল ইম্পেরিয়ালের মতো আবাসিক হোটেল রয়েছে।
কোথায় খাবেন
বরিশাল শহরে বিভিন্ন মানের চাইনিজ, বাঙ্গালী ও ফাস্টফুড জাতীয় খাবারের রেস্তোরাঁ রয়েছে। মলিদা ও গৌরনদীর দধি বরিশালের জনপ্রিয় ও বিখ্যাত খাবার।
বরিশাল জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
বঙ্গবন্ধু উদ্যানের পাশেই রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা পার্ক, প্ল্যানেট ওয়ার্ল্ড পার্ক ও পদ্ম পুকুর। এছাড়া বরিশালের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে শঙ্কর মঠ, বিবির পুকুর, মিয়াবাড়ি জামে মসজিদ, অক্সফোর্ড মিশন, লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি, ভাসমান পেয়ারা বাগান, শাপলা গ্রাম, দুর্গা সাগর দীঘি ও গুটিয়া মসজিদ উল্লেখযোগ্য।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!