বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের মাজার

১৯৩৬ সালের ২৬শে ফেব্রুয়ারি নড়াইল জেলার চন্ডীকপুর ইউনিয়নের মহেষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ। তাঁর পিতা ছিলেন মোহাম্মদ আমানত শেখ এবং মাতা জেন্নাতুন্নেসা। কৃষক পরিবারের সন্তান হলেও ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ছিল তাঁর গভীর আগ্রহ—বিশেষ করে গান আর থিয়েটারে।

১৯৫৯ সালের ১৪ই মার্চ তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালের ১০ই জুলাই দিনাজপুর থেকে বদলি হয়ে তিনি যশোর সেক্টরে যান এবং ল্যান্স নায়েক পদে পদোন্নতি পান। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ৮ নম্বর সেক্টরের একজন সাহসী যোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধক্ষেত্রে অংশ নেন।

শহীদ হওয়ার বীরত্বগাথা

১৯৭১ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর যশোরের গোয়ালহাটি গ্রামে পেট্রোল ডিউটিতে থাকা অবস্থায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হঠাৎ তাদের ওপর তিনদিক থেকে গুলিবর্ষণ শুরু করে। প্রতিরোধের সময় সিপাহী নান্নু মিয়া গুলিবিদ্ধ হন। নূর মোহাম্মদ সাহসিকতার সঙ্গে তাঁকে কাঁধে তুলে নিয়ে এলএমজি দিয়ে পাল্টা গুলি চালাতে থাকেন। শত্রুপক্ষ পিছু হটলেও, একটি মর্টার শেল তাঁর কাঁধে আঘাত হানে।

তবুও তিনি সহযোদ্ধাদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে মরিয়া ছিলেন। নিজের এলএমজি সিপাহী মোস্তফার হাতে তুলে দিয়ে নির্দেশ দেন—নান্নু মিয়াকে নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে। তিনি তখন মোস্তফার রাইফেল দিয়ে শত্রুদের বাধা দিতে থাকেন। পরবর্তীতে যুদ্ধে শহীদ হন এবং যশোরের কাশিপুর গ্রামে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে যশোরে পৌঁছানো যায় সড়ক, রেল ও আকাশপথে। যশোর শহর থেকে বাস, প্রাইভেট কার বা অটো রিকশায় শার্শা উপজেলার ডিহি ইউনিয়নে গিয়ে রিকশাযোগে পৌঁছানো যায় বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের মাজারে।
বিকল্পভাবে, শার্শা রোডের কামারবাড়ি স্ট্যান্ড থেকে লেগুনা করে কাশিপুর পৌঁছে, সেখান থেকে কিছুটা পথ হেঁটেই তাঁর সমাধিস্থল দেখা যাবে।

বাসে

ঢাকার কল্যাণপুর, গাবতলী ও কলাবাগান থেকে চলাচল করে সোহাগ, হানিফ, এম.আর এন্টারপ্রাইজ, দেশ ট্র্যাভেলস, ঈগল পরিবহনসহ আরও কিছু বাস সার্ভিস।
নন-এসি বাসের ভাড়া আনুমানিক ৫৫০-৭৫০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ৭৫০ থেকে ১৩০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।

ট্রেনে

ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে সপ্তাহের বিভিন্ন দিনে চলে সুন্দরবন এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস, বেনাপোল এক্সপ্রেস ও রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস।
টিকিটের দাম ৪১০ টাকা থেকে শুরু হয়ে প্রায় ১৯২৭ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

বিমানে

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ বিমান, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এবং নভোএয়ার—নিয়মিতভাবে ঢাকা-যশোর রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে।

কোথায় থাকবেন

যশোর শহরে বেশ কিছু মানসম্মত আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেমন:

  • হোটেল সিটি প্লাজা ইন্টারন্যাশনাল
  • হোটেল হাসান ইন্টারন্যাশনাল
  • জাবির ইন্টারন্যাশনাল হোটেল
  • হোটেল আর.এস ইন্টারন্যাশনাল
  • হোটেল শামস ইন্টারন্যাশনাল

এছাড়াও রয়েছে কিছু সরকারি রেস্ট হাউস ও মধ্যম মানের আরও কিছু থাকার ব্যবস্থা।

কোথায় খাবেন

যশোর শহরে ভ্রমণের সময় কিছু জনপ্রিয় খাবার অবশ্যই ট্রাই করা উচিত, যেমন:

  • জামতলার মিষ্টি
  • খেজুরের গুড়ের প্যারা সন্দেশ
  • ভিজা পিঠা
  • জনি কাবাবে কাবাব, ফ্রাই ও লুচি
  • ধর্মতলার মালাই চা
  • চুক নগরের বিখ্যাত চুই ঝালের রান্না
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের মাজার এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
65.55 কিমি
যশোর থেকে
79.86 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
পাতরাইল মসজিদ
গেরদা ফলক
উজানী রাজবাড়ী
মধুমতি বাওড়
কানাইপুর জমিদার বাড়ি
ফরিদপুর পৌর শেখ রাসেল শিশুপার্ক
পল্লী কবি জসীমউদ্দীনের বাড়ি
পদ্মা রিসোর্ট
সাতৈর মসজিদ
মধুমতি নদী
ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি
মাওয়া রিসোর্ট
রাজা সীতারাম রাজপ্রাসাদ
মথুরাপুর দেউল
মাওয়া ফেরি ঘাট
নীহাররঞ্জন গুপ্তের বাড়ি
আড়িয়াল বিল
উলপুর জমিদার বাড়ি
নিরিবিলি পিকনিক স্পট
স্বপ্নবীথি পিকনিক স্পট

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন