বর্ষাকালে অথই পানির ভরা বিল আর শীতকালে বিস্তীর্ণ সবুজ ফসলের ক্ষেত—মুন্সিগঞ্জ, ঢাকা এবং শ্রীনগরের এক অভূতপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নাম আড়িয়াল বিল। প্রায় ১৩৬ বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই বিলের বেশিরভাগ অংশ মুন্সিগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত। ধারণা করা হয়, প্রাচীনকালে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর মিলনস্থল শুকিয়ে যাওয়ার ফলেই পদ্মা ও ধলেশ্বরী নদীর মাঝে আড়িয়াল বিলের সৃষ্টি হয়।
আড়িয়াল বিলে প্রকৃতির রূপ
আড়িয়াল বিলের সৌন্দর্য ঋতুভেদে নানান রূপ ধারণ করে। বর্ষাকালে বিলে শাপলা, কচুরিপানার ফুল এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এই জায়গাকে অনন্য করে তোলে। আর শীতকালে ফসলি জমিতে চাষ করা হয় নানাবিধ শীতকালীন সবজি। বিলে নৌকাভ্রমণ, মাছ ধরা বা শাপলা তোলার অভিজ্ঞতা নিতে প্রতি বছর দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য পর্যটক এখানে আসেন।
যেভাবে পৌঁছাবেন
ঢাকা থেকে আড়িয়াল বিলের দূরত্ব মাত্র ৪২ কিলোমিটার। ঢাকার গুলিস্তান, মিরপুর বা আবদুল্লাহপুর থেকে মাওয়া রুটের বাসে চড়ে সহজেই শ্রীনগরে পৌঁছানো যায়। শ্রীনগর বাজার থেকে রিকশায় গাদিঘাটে যেতে হবে। সেখান থেকে হাতে টানা বা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বিলে পৌঁছানো যায়। চাইলে নৌকা ভাড়া করে সারাদিন বিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন, ভাড়া পড়বে ১০০০-১৫০০ টাকার মধ্যে।
থাকার ব্যবস্থা
ঢাকার কাছাকাছি হওয়ায় সকালে গিয়ে সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসা যায়। তবে রাত্রিযাপনের প্রয়োজন হলে মুন্সিগঞ্জ শহরে হোটেল থ্রি স্টার বা হোটেল কমফোর্টে থাকতে পারেন। এছাড়া পদ্মা রিসোর্ট, মাওয়া রিসোর্ট এবং মেঘনা ভিলেজ হলিডে রিসোর্টে থাকার সুবিধা পাওয়া যায়।
খাবার ব্যবস্থা
আড়িয়াল বিল এলাকায় খাবারের ভালো ব্যবস্থা নেই। তাই শুকনো খাবার ও পানি সঙ্গে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। মুন্সিগঞ্জে ভালো মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে চিত্তর দই, আনন্দর মিষ্টি এবং ভাগ্যকুলের বিখ্যাত মিষ্টি উপভোগ করতে পারেন।
কাছাকাছি দর্শনীয় স্থান
আড়িয়াল বিলে ভ্রমণের পথে শ্যামসিদ্ধ মঠ দেখে আসতে পারেন। এছাড়াও জগদীশ চন্দ্র স্মৃতি জাদুঘর, ভাগ্যকুল জমিদারবাড়ি এবং মাওয়া ফেরিঘাটের মতো আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে।
আড়িয়াল বিল বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। ঋতু অনুযায়ী এর পরিবর্তনশীল রূপ আপনাকে মুগ্ধ করবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!