মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার দোসরপাড়া গ্রামে অবস্থিত পদ্মহেম ধাম ফকির লালন শাহের একটি বিখ্যাত আশ্রম। এটি বাউল বাড়ি নামে পরিচিত। যদিও লালন শাহ নিজে এখানে কখনো আসেননি, প্রথম আলো পত্রিকার ফটোসাংবাদিক কবির হোসেন লালনের প্রতি গভীর ভক্তি থেকে এই আশ্রমটি নির্মাণ করেন।
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ঘেরা এই আশ্রমে প্রবেশের পরপরই নজরে পড়বে একটি বিশাল পাথরের একতারা, যা লালনের অনন্য স্মারক। আশ্রমের ভেতরে দেখা যায় মুন্সিগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী কাঠের তৈরি দোতলা ঘর, বৈঠকখানা এবং লালনগীতি বিদ্যালয়। আশ্রমের পাশ দিয়ে বয়ে চলা ইছামতী নদী চমৎকার মোহনা তৈরি করেছে। নদীর পাড় থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের দৃশ্য যে কারোর মন কেড়ে নেবে।
আশ্রমের বিশাল খোলা মাঠে প্রাচীন বটগাছের নিচে প্রতি বছর শীতকালীন দুই পূর্ণিমায় লালন উৎসব, মেলা এবং সাধুসঙ্গ অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবে সন্ধ্যা থেকে রাতভর গান, চা এবং পিঠাপুলি খাওয়ার আয়োজন চলে। দেশ-বিদেশ থেকে বহু বাউল শিল্পী, সাধু-গুরু, লালনভক্ত এবং দর্শনার্থীরা এ সময় এখানে জড়ো হন।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ২৩ কিলোমিটার। ঢাকার গুলিস্তান, আবদুল্লাপুর কিংবা মিরপুর থেকে মাওয়াগামী বাসে মুন্সিগঞ্জ পৌঁছাতে পারবেন। এরপর বাইক বা সিএনজি নিয়ে সিরাজদিখান উপজেলার ৭ কিলোমিটার দূরে পদ্মহেম ধামে যাওয়া সম্ভব।
আরও সহজ উপায় হলো ঢাকার পোস্তগোলা থেকে সিএনজিতে মোল্লার বাজারে এসে নৌকায় করে বালুচর পাড়ি দিয়ে সরাসরি সিএনজিতে পদ্মহেম ধামে পৌঁছানো।
এছাড়া গুলিস্তান থেকে বেতকা, টঙ্গিবাড়ী বা সোনারংগামী বাসে সিরাজদিখান বাজারে নামার পর অটো বা সিএনজি নিয়ে আশ্রমে যেতে পারবেন। নদীপথে সদরঘাট থেকে লঞ্চেও মুন্সিগঞ্জ যাওয়া যায়, যা মাত্র দুই ঘণ্টার পথ।
কোথায় থাকবেন
ঢাকার খুব কাছাকাছি হওয়ায় সকালে গিয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসা সম্ভব। তবে চাইলে আশ্রমের খোলা মাঠে ক্যাম্পিং করতে পারেন। এছাড়া মুন্সিগঞ্জ জেলা সদরে হোটেল থ্রি স্টার, হোটেল কমফোর্টসহ কিছু আবাসিক হোটেল পাওয়া যায়।
কোথায় খাবেন
আশ্রমের ভেতরেই খাওয়া-দাওয়ার জন্য হোটেলের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া মুন্সিগঞ্জ শহরে রিভার ভিউ এবং মুন্সির ঘরোয়া হোটেলের খাবার বেশ ভালো। এখানকার বিখ্যাত খাবারের মধ্যে চিত্তর দই, আনন্দর মিষ্টি, ভাগ্যকুলের মিষ্টি ও খুদের বৌউয়া উল্লেখযোগ্য।
মুন্সিগঞ্জের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
পদ্মহেম ধামের পাশাপাশি জগদীশ চন্দ্র বসু স্মৃতি জাদুঘর, ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি এবং মাওয়া ফেরি ঘাট মুন্সিগঞ্জের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!