সোনারং জোড়া মঠ

মুন্সিগঞ্জ জেলা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সোনারং গ্রামে বাংলাদেশের অষ্টাদশ শতাব্দীর একটি প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, সোনারং জোড়া মঠ (Sonarong Jora Moth) অবস্থিত। এটি মঠ হিসেবে পরিচিত হলেও মূলত একটি জোড়া মন্দির। মন্দিরের শিলালিপি অনুযায়ী, রূপচন্দ্র নামক এক হিন্দু ব্যবসায়ী ১৮৪৩ সালে বড় কালী মন্দির এবং ১৮৮৬ সালে ছোট শিব মন্দিরটি নির্মাণ করেন, এবং ১৮৩৬ সালে শম্ভুনাথ নামক এক ব্যক্তি এই মঠ স্থাপন করেন। জানা যায়, শ্রী রূপচন্দ্রের শেষকৃত্যও এখানে সম্পন্ন হয়েছিল। প্রায় ২৪৬ ফুট উচ্চতাযুক্ত অষ্টভুজাকৃতির সোনারং জোড়া মঠ ভারত উপমহাদেশের সর্বোচ্চ মঠ হিসেবে পরিচিত। চুন সুরকিতে নির্মিত দেয়াল বিশিষ্ট এই মঠের দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ ২১ ফুট, আর বড় মন্দিরের উচ্চতা ১৫ মিটার। মন্দিরের গোলাকার গম্বুজাকৃতির ছাদের শিখরে একটি ত্রিশূল রয়েছে, এবং প্রতিটি উপাসনালয়ের সাথে একটি বারান্দা যুক্ত।

সোনারং জোড়া মন্দিরের সামনে একটি বড় পুকুর রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে দুর্বৃত্তরা মন্দির থেকে মূল্যবান পাথর, কষ্টিপাথরের কলস, শিবলিঙ্গ সহ অন্যান্য জিনিসপত্র চুরি করেছে। বর্তমানে মঠের উপরের খোড়লগুলিতে নানা ধরনের পাখি যেমন ঘুঘু, শালিক ও টিয়া প্রজাতির পাখির কলকাকলীতে মন্দিরের পরিবেশ মুখরিত থাকে। অসাধারণ কারুকার্যমণ্ডিত সোনারং জোড়া মঠের সৌন্দর্য কালের বিবর্তনে অনেকটাই ক্ষয়প্রাপ্ত হলেও এটি এখনো প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে রয়েছে এবং বহু দর্শনার্থী এখানে আসে।

কিভাবে যাবেন

সোনারং জোড়া মঠ দেখতে হলে মুন্সিগঞ্জ জেলার সোনারং গ্রামে যেতে হবে। ঢাকার গুলিস্তান, আবদুল্লাপুর বা মিরপুর থেকে মাওয়া গামী বাসে করে মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী বা শ্রীনগর পৌঁছাতে পারবেন। শ্রীনগর বা টঙ্গীবাড়ী থেকে রিকশা বা অটোরিকশা নিয়ে সোনারং জোড়া মঠে যাওয়া যাবে।

কোথায় থাকবেন

ঢাকার কাছাকাছি হওয়ায় সোনারং জোড়া মঠ দেখার জন্য আপনি দিনের মধ্যে গিয়ে ফিরে আসতে পারবেন। তবে, রাত্রী যাপনের প্রয়োজন হলে মুন্সিগঞ্জ জেলা সদরে "হোটেল থ্রি স্টার", "হোটেল কমফোর্ট" সহ সাধারণ মানের হোটেল রয়েছে, এবং জেলা পরিষদের ডাকবাংলো ও সার্কিট হাউজের মতো সরকারি আবাসনও পাওয়া যাবে। বিলাসী রিসোর্টের মধ্যে "পদ্মা", "মাওয়া" ও "মেঘনা ভিলেজ হলিডে রিসোর্ট" উল্লেখযোগ্য।

কোথায় খাবেন

সোনারং জোড়া মঠ যাওয়ার পথে বিভিন্ন হালকা খাবারের দোকান পাওয়া যাবে। মুন্সিগঞ্জ শহরে "রিভার ভিউ", "মারিয়া ফুড ক্যাফে", "মুন্সির ঘরোয়া হোটেল" সহ বেশ কিছু ভালো মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। মুন্সিগঞ্জের জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে "চিত্তর দই", "আনন্দর মিষ্টি", "খুদের বৌউয়া (খিচুরি)", "ভাগ্যকুলের মিষ্টি" উল্লেখযোগ্য।

মুন্সিগঞ্জের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

মুন্সিগঞ্জে অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে "জগদীশ চন্দ্র স্মৃতি জাদুঘর", "ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ি", "আড়িয়াল বিল" এবং "মাওয়া ফেরি ঘাট" অন্যতম।

সোনারং জোড়া মঠ এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
32.35 কিমি
মুন্সিগঞ্জ থেকে
7.82 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
অতীশ দীপঙ্করের জন্মস্থান
পোলঘাটা সেতু
বাবা আদম মসজিদ
ইদ্রাকপুর কেল্লা
পদ্মহেম ধাম
সোনাকান্দা দুর্গ
ফুলের গ্রাম সাবদি
হাজীগঞ্জ দুর্গ
ষোলআনী সৈকত
মেরি এন্ডারসন
কাইকারটেক হাট
সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের সমাধি
মাওয়া ফেরি ঘাট
মেঘনা ভিলেজ হলিডে রিসোর্ট
আড়িয়াল বিল
সোনারগাঁও জাদুঘর
গোয়ালদি মসজিদ
পানাম নগর
সদরঘাট
সুরেশ্বর দরবার শরীফ

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন