বাগেরহাট শহর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে, হযরত খান জাহান (রহঃ) এর মাজারের দক্ষিণ পাশে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে খাঞ্জেলী দীঘি বা খান জাহান আলী দীঘি অবস্থিত। এটি প্রায় ২০০ বিঘা জমি জুড়ে বিস্তৃত একটি বৃহৎ জলাশয়। দীঘিটির নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত রয়েছে। কেউ বলেন, একসময় এখানে বৌদ্ধ ঠাকুরের একটি মূর্তি পাওয়া গিয়েছিল, তাই একে “ঠাকুর দীঘি” বলা হতো। আবার অনেকে মনে করেন, স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় শ্রদ্ধাবশত খান জাহান (রহঃ)-কে “ঠাকুর” বলে সম্বোধন করতো, এবং তাঁর তত্ত্বাবধানে এই দীঘি খনন করা হয়।
স্থানীয়দের মাঝে একটি জনপ্রিয় বিশ্বাস রয়েছে, এই দীঘিতে কালা পাহাড় ও ধলাপাহাড় নামে দুইটি কুমির ছেড়ে দিয়েছিলেন খান জাহান (রহঃ)। ষাট গম্বুজ মসজিদের জাদুঘরে এখনও কালা পাহাড় কুমিরটির দেহ সংরক্ষিত আছে। অনেকেই বিশ্বাস করেন, দীঘির পানিতে রয়েছে রোগ নিরাময়ের গুণ। গাছ-গাছালিতে ঘেরা শান্ত পরিবেশ এবং প্রশস্ত ঘাটটি দীঘির সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশে কিছুটা সময় কাটাতে প্রতিদিনই বহু পর্যটক এখানে ঘুরতে আসেন।
কীভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে সরাসরি বাস বা ট্রেনে বাগেরহাট পৌঁছানো যায়। গুলিস্তান বা সায়েদাবাদ থেকে দোলা পরিবহন, ফাল্গুনী পরিবহন, ওয়েলকাম এক্সপ্রেস, সাকুরা, সোহাগ, হানিফ ও ঈগল পরিবহনের বাসে পদ্মা সেতু পেরিয়ে সরাসরি বাগেরহাট যাওয়া যায়। এসব বাসে জনপ্রতি ভাড়া পড়ে আনুমানিক ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা।
রেলপথে ভ্রমণ করতে চাইলে, ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে চিত্রা এক্সপ্রেস বা সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে খুলনা পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে বাগেরহাট পৌঁছানো যায়। বাগেরহাট জিরো পয়েন্ট থেকে রিকশা বা অটো নিয়ে সহজেই খাঞ্জেলী দীঘিতে পৌঁছানো সম্ভব।
কোথায় থাকবেন?
বাগেরহাট শহরে পর্যটকদের জন্য বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে। মমতাজ হোটেল, হোটেল মোহনা, হোটেল আল-আমিন, হোটেল অভি, ফুয়াদ আবাসিক, জারিফ আবাসিক, হোটেল ধানসিঁড়ি, সার্কিট হাউজ, ডাক বাংলো এবং ষাট গম্বুজ প্রত্নতত্ত্ব গেস্ট হাউজ পর্যটকদের জন্য অন্যতম ভরসাযোগ্য ঠিকানা। এছাড়া সুন্দরবন রিসোর্টেও থাকতে পারেন।
কোথায় খাবেন?
বাগেরহাট শহরে ভালো মানের খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। বিবি হোটেল, বিসমিল্লাহ হোটেল, পর্যটন রেস্তোরা, ব্ল্যাক চেরি, রাধুনি হোটেল ও ধানসিঁড়ি হোটেল—এসব জায়গায় সুলভ মূল্যে সুস্বাদু খাবার পাবেন। বিশেষ করে বাগেরহাটের বিখ্যাত "নারিকেল চিংড়ি" খেতে ভুলবেন না।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
খাঞ্জেলী দীঘি ছাড়াও বাগেরহাটে আরও অনেক ঐতিহাসিক ও পর্যটন আকর্ষণ রয়েছে। যেমন—ষাট গম্বুজ মসজিদ, খান জাহান আলীর মাজার, নয় গম্বুজ মসজিদ, কোদলা মঠ, বাগেরহাট জাদুঘর, কচিখালী সমুদ্র সৈকত, চন্দ্রমহল ইকো পার্ক, দুবলার চর ও মোংলা বন্দর—সবকটি ঘুরে দেখার মতো জায়গা।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!