বগাকাইন লেক, যা সাধারণত বগালেক নামে পরিচিত, এটি বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলা থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে কেওক্রাডং পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই হ্রদটি প্রায় ২০০০ বছর আগে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে। ভূতত্ত্ববিদদের মতে, এটি হয়তো মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ অথবা উল্কাপিণ্ডের পতনের ফলে গঠিত হয়েছে।
বগালেক অনেকের কাছে ড্রাগন লেক নামেও পরিচিত। সকালে, বিকেলে কিংবা রাতে এর সৌন্দর্য ভিন্ন রূপ ধারণ করে, যা পর্যটকদের মোহিত করে। ভ্রমণের ক্লান্তি দূর করতে লেকের স্বচ্ছ ও শান্ত জল যেন এক নিমেষেই প্রশান্তি এনে দেয়। প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই লেকের চারপাশে পাহাড়, আকাশ আর নীল জলের অপূর্ব সমন্বয় এটিকে পর্যটকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
কখন বগালেক ভ্রমণ করবেন?
বর্ষাকালে বগালেক ভ্রমণ কিছুটা কঠিন হতে পারে, কারণ রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যায় এবং যাতায়াতে অসুবিধা হয়। তাই শীতকাল বগালেক ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। তবে অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী ভ্রমণকারীরা বছরের যেকোনো সময়েই এখানে আসেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
কীভাবে যাবেন বগালেক?
ঢাকা থেকে বান্দরবান
বাংলাদেশের যেকোনো স্থান থেকে প্রথমে বান্দরবান যেতে হবে। ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবানে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন বাস সার্ভিস রয়েছে:
- নন-এসি বাস ভাড়া: ৮০০-৯০০ টাকা
- এসি বাস ভাড়া: ১২০০-১৮০০ টাকা
- যাত্রার সময়: ৮-১০ ঘণ্টা
ট্রেনে ভ্রমণ করতে চাইলে:
ঢাকা থেকে পর্যটক এক্সপ্রেস, কক্সবাজার এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, তূর্ণা নিশীথা, মহানগর গোধূলি ট্রেনে চট্টগ্রাম যাওয়া যাবে। ট্রেনের ভাড়া ৪০৫ থেকে ১৩৯৮ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
বিমান পথে:
ঢাকা থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে আসতে পারবেন।
চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান
- বদ্দারহাট বাস স্ট্যান্ড থেকে "পূবালী" ও "পূর্বাণী" পরিবহন সরাসরি বান্দরবান যায়, ভাড়া ২২০ টাকা।
- ধামপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে ভাড়া ২০০-৩০০ টাকা।
বান্দরবান থেকে বগালেক
বান্দরবান থেকে রুমা বাজার
- প্রথমে রুমা বাজার যেতে হবে, যা বান্দরবান শহর থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরে।
- লোকাল বাস বা চাঁন্দের গাড়ি/জিপ পাওয়া যায়।
- বাসের ভাড়া: ১২০ টাকা, সময় লাগবে প্রায় ৩ ঘণ্টা।
- জীপ বা চাঁন্দের গাড়ি রিজার্ভ নিলে: ৩০০০-৪০০০ টাকা, সময় লাগবে ২ ঘণ্টার মতো।
রুমা বাজার থেকে বগালেক
- গাইড নেওয়া বাধ্যতামূলক, অনুমোদিত গাইড ঠিক করতে হবে।
- রুমা বাজার আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করে অনুমতি নিতে হবে।
- বিকেল ৪টার পর রুমা বাজার থেকে বগালেক যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না।
- রুমা বাজার থেকে বগালেকের দূরত্ব: ১৭ কিলোমিটার।
- গাড়ির ভাড়া:
- ল্যান্ডক্রুজার জিপ: ১৮০০ টাকা (৮-১৫ জন যেতে পারে)
- চাঁন্দের গাড়ি: ২০০০ টাকা
- লোকাল গাড়িতে জনপ্রতি ভাড়া: ১০০ টাকা
(বর্ষাকালে রাস্তা খারাপ থাকলে সরাসরি বগালেক পর্যন্ত গাড়ি নাও যেতে পারে।)
বগালেকে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা
- উন্নত মানের হোটেল বা রিসোর্ট নেই, তবে আদিবাসীদের কিছু ছোট কটেজ রয়েছে।
- প্রতি রুমে ৫-৬ জন থাকতে পারে, জনপ্রতি ভাড়া ১০০-২০০ টাকা।
- কাপল বা মহিলাদের জন্য আলাদা কটেজের ব্যবস্থা করা যায়।
- খাওয়ার ব্যবস্থা:
- খাবার সাধারণত ১০০-২০০ টাকার প্যাকেজে পাওয়া যায়।
- সাধারণ খাবারের মধ্যে থাকে ভাত, ডিম, আলু ভর্তা, পাহাড়ি মুরগির রান্না।
- চাইলে বারবিকিউ করার ব্যবস্থা আছে, পাহাড়ি মুরগি কিনে লেকপাড়ে বসে গ্রিল উপভোগ করতে পারেন।
বগালেক ভ্রমণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
✅ বিদ্যুৎ নেই, তবে সোলার পাওয়ার আছে, তাই পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখুন।
✅ সব মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ করে না, শুধু রবি ও টেলিটক সিগন্যাল পাওয়া যায়।
✅ লেকে গোসল করার সময় সতর্ক থাকুন, দুর্ঘটনা এড়াতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন।
✅ আদিবাসীদের প্রতি সম্মানজনক আচরণ করুন, অনুমতি ছাড়া তাদের ছবি তুলবেন না।
✅ পাহাড়ি পথ দুর্গম, তাই সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করুন।
✅ জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি সঙ্গে রাখুন, নিরাপত্তার জন্য এটি জরুরি।
✅ আর্মি ক্যাম্প থেকে অনুমতি নিতে হবে এবং ফিরে আসার সময় রিপোর্ট করতে হবে।
শেষ কথা
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর বগালেক ভ্রমণ সত্যিই একটি অদ্বিতীয় অভিজ্ঞতা। পাহাড়, নীল জলরাশি আর নির্জন প্রকৃতির মধ্যে হারিয়ে যেতে চাইলে বগালেক হতে পারে আপনার জন্য এক অনন্য গন্তব্য।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!