শৈলপ্রপাত ঝর্ণা বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ৮ কিলোমিটার দূরে, বান্দরবান-থানচি রোডের পাশেই অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচিত ঝর্ণাগুলোর মধ্যে একটি। বান্দরবানের নিকটবর্তী হওয়ায় সারা বছরই এখানে পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। ঝর্ণার ঠান্ডা, স্বচ্ছ পানি আর নিরবিচার প্রবাহ শৈলপ্রপাতকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ঝর্ণার পাশে পিকনিকের জন্য আদর্শ পরিবেশ থাকায় এটি পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর জন্য দুর্দান্ত একটি জায়গা। পাহাড়, ঝর্ণা আর গ্রামীণ জীবনযাত্রার ছোঁয়া পেতে হলে অবশ্যই শৈলপ্রপাতে ঘুরে আসা উচিত!
কখন যাবেন ও কী দেখবেন
ঝর্ণার আসল সৌন্দর্য উপভোগের সবচেয়ে ভালো সময় বর্ষাকাল। এই সময়ে ঝর্ণা পানিতে ভরপুর থাকে, আর তার স্রোত আরও মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে। তবে বর্ষা ছাড়াও বছরের যেকোনো সময়ে শৈলপ্রপাতের আলাদা সৌন্দর্য দেখা যায়। চিম্বুক বা নীলগিরি যাওয়ার পথে শৈলপ্রপাতের সামনে দিয়েই যেতে হয়, তাই সহজেই গাড়ি থামিয়ে ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। আর শুধু শৈলপ্রপাত দেখতে চাইলে আলাদা গাড়ি ভাড়া করেও যেতে পারেন।
শৈলপ্রপাতে গেলে বম উপজাতীয়দের জীবনধারা দেখার সুযোগ পাবেন। তাঁরা হাতে বোনা চাদর, মাফলার, বেডশিট, বাঁশ ও বেতের তৈরি নানান জিনিস বিক্রি করেন। এছাড়া স্থানীয় মৌসুমি ফলমূলের স্বাদও নিতে পারেন।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বান্দরবান:
- বাস: এস. আলম, সৌদিয়া, ইউনিক, হানিফ, শ্যামলি, ডলফিন ইত্যাদি পরিবহন। নন-এসি ভাড়া ৮০০-৯০০ টাকা, এসি ভাড়া ১২০০-১৮০০ টাকা। সময় লাগে ৮-১০ ঘণ্টা।
- ট্রেন: পর্যটক এক্সপ্রেস, কক্সবাজার এক্সপ্রেস, সুবর্ণ এক্সপ্রেস ইত্যাদি ট্রেনে চট্টগ্রাম। ভাড়া ৪০৫-১৩৯৮ টাকা।
- বিমান: ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি চট্টগ্রাম।
চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান:
- বাস: বদ্দারহাট থেকে পূবালী ও পূর্বানী পরিবহন। জনপ্রতি ভাড়া ২২০ টাকা। ধামপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকে ২০০-৩০০ টাকা।
বান্দরবান থেকে শৈলপ্রপাত:
- সিএনজি, জীপ বা চান্দের গাড়ি ভাড়া করলে যাওয়া-আসা মিলিয়ে খরচ পড়বে ৫০০-৮০০ টাকা। তবে নীলগিরি বা চিম্বুক পাহাড় দেখতে গেলে শৈলপ্রপাত পথে পড়বে, তাই একসঙ্গে পরিকল্পনা করলে সহজ হয়।
কোথায় থাকবেন
বেশিরভাগ পর্যটক দিনে গিয়ে দিনে ফিরে এলেও, যারা রাত কাটাতে চান, তাদের জন্য বান্দরবানে অনেক রিসোর্ট ও হোটেল আছে:
- হলিডে ইন রিসোর্ট
- হিল সাইড রিসোর্ট
- হোটেল ফোর স্টার
- হোটেল রিভার ভিউ
ভাড়া: ৬০০-৩০০০ টাকা (রিসোর্ট ও সুবিধার উপর নির্ভর করে)।
কোথায় খাবেন
বান্দরবান শহরে মাঝারি মানের অনেক রেস্টুরেন্ট আছে:
- তাজিং ডং ক্যাফে
- মেঘদূত ক্যাফে
- ফুড প্লেস রেস্টুরেন্ট
- রুপসী বাংলা রেস্টুরেন্ট
ঝর্ণার কাছেই আদিবাসী দোকানে কম দামে টাটকা মৌসুমি ফলও পাওয়া যায়।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
- চিম্বুক পাহাড়
- নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র
- নীলাচল
- মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র
- স্বর্ণমন্দির
- বগালেক
- সাইরু হিল রিসোর্ট
গুরুত্বপূর্ণ টিপস ও সতর্কতা
- ঝর্ণার নিচে হাঁটার সময় সতর্ক থাকুন, কারণ পাথুরে পথ বেশ পিচ্ছিল হতে পারে।
- গাড়ি বা হোটেল ভাড়া নেওয়ার আগে দরদাম করে নিন।
- ছুটির দিনে গেলে আগে থেকে হোটেল বুকিং দিয়ে রাখাই ভালো।
- বর্ষায় ঝর্ণায় বেশি পানি থাকে, গোসলে সতর্ক থাকুন।
- পাহাড়ি পথে সাবধানে চলাফেরা করুন।
- প্রকৃতির সৌন্দর্য রক্ষা করতে ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলুন।
বান্দরবানের শৈলপ্রপাত শুধু একটি ঝর্ণা নয়, প্রকৃতির অপূর্ব সৃষ্টি যেখানে পাহাড়, জলধারা আর স্থানীয় সংস্কৃতি একসাথে মিশে গেছে। তাই প্রকৃতির সাথে সময় কাটাতে হলে শৈলপ্রপাত ঘুরে আসা অবশ্যই উচিত।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!