চিংড়ি ঝর্ণা

চট্টগ্রাম শহর থেকে ৯২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত পাহাড়ি সৌন্দর্যের রানী বান্দরবান। ৪৪৭৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই জেলা শুধু পাহাড়ের জন্যই নয়, অসংখ্য ঝর্ণার জন্যও বিখ্যাত। তেমনই এক অপূর্ব সুন্দর ঝর্ণা হলো চিংড়ি ঝর্ণা (Chingri Jhorna)। একসময় এই ঝর্ণায় প্রচুর চিংড়ি মাছ পাওয়া যেত, তাই এর এমন নামকরণ। বগালেক থেকে কেওক্রাডং যাওয়ার পথে মাত্র ৩০-৪০ মিনিট হাঁটলেই চিংড়ি ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।

যাওয়ার সেরা সময়

যে কোনো ঝর্ণার প্রকৃত সৌন্দর্য দেখা যায় বর্ষাকালে। এই সময় ঝর্ণাগুলো পানিতে ভরে ওঠে, আর জলপ্রপাতের গর্জন আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। তবে বর্ষার সময় পাহাড়ধসের আশঙ্কা থাকে, তাই আগেভাগে স্থানীয়দের কাছ থেকে খোঁজখবর নিয়ে যাওয়া ভালো। বগালেক বা কেওক্রাডং ট্রিপের সাথে চিংড়ি ঝর্ণা দেখে আসতে পারেন। বর্ষা বা শীত — যে কোনো মৌসুমেই এই মায়াবী ঝর্ণা আপনার মন জয় করে নেবে।

কিভাবে যাবেন চিংড়ি ঝর্ণা

প্রথমে বান্দরবান পৌঁছাতে হবে।
ঢাকা থেকে বান্দরবানের সরাসরি বাস সার্ভিস আছে। যেমন:

  • এস. আলম, সৌদিয়া, সেন্টমার্টিন পরিবহন, ইউনিক, হানিফ, শ্যামলী, ডলফিন
  • নন-এসি ভাড়া: ৮০০-৯০০ টাকা
  • এসি ভাড়া: ১২০০-১৮০০ টাকা
  • যাত্রার সময়: ৮-১০ ঘণ্টা

বান্দরবান থেকে বগালেক:
বান্দরবান শহর থেকে চান্দের গাড়ি বা জিপে রুমা বাজার যেতে হবে। রুমা বাজারে পৌঁছে গাইড নিয়ে আর্মি ক্যাম্পে নাম এন্ট্রি করতে হবে। এরপর রিজার্ভ বা লোকাল চান্দের গাড়িতে বগালেক যাওয়া যায়।

  • বগালেক থেকে চিংড়ি ঝর্ণা:
    আর্মি ক্যাম্পে এন্ট্রি করার পর যদি সময় থাকে, তাহলে সেদিনই চিংড়ি ঝর্ণার পথে রওনা দিতে পারেন। অথবা বগালেকে রাতে বিশ্রাম নিয়ে পরদিন সকালে ৩০-৪৫ মিনিট ট্রেকিং করে ঝর্ণায় পৌঁছাতে পারেন। ঝর্ণার পথে হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়ের অপার সৌন্দর্য আর বুনো প্রকৃতির মিশেলে এক অন্যরকম অ্যাডভেঞ্চার অনুভব করবেন।

কোথায় থাকবেন

বগালেকে রাত্রি যাপন এক অনন্য অভিজ্ঞতা। লেকের পাড়ে থাকা আদিবাসীদের কটেজগুলোতে ১০০-২৫০ টাকায় রাত্রি যাপন করা যায়। এক কটেজে ৫-৬ জন থাকতে পারেন। দম্পতি বা মহিলাদের জন্য আলাদা কটেজের ব্যবস্থা করা যায়। গাইডের মাধ্যমে আগে থেকে বুকিং দিলে ঝামেলা কম হবে। আর পাহাড়ি লেকের পাড়ে রাত কাটানো স্মৃতির খাতায় অনন্য অধ্যায় হয়ে থাকবে!

কি খাবেন

রুমা বাজারে কিছু সাধারণ মানের হোটেল আছে, তবে বগালেকে খাওয়ার ব্যবস্থা আদিবাসী ঘরেই করতে হবে।

  • খাবারের প্যাকেজ: ১০০-২০০ টাকা
  • মেনুতে থাকতে পারে: ভাত, ডিম, আলুভর্তা, পাহাড়ি মুরগি
  • বিশেষ আয়োজন: কটেজের সামনে বারবিকিউ করা যায়, চাইলে পাহাড়ি মুরগি কিনে নিজেই আয়োজন করতে পারেন। গাইডকে আগেই জানালে খাবারের ব্যবস্থা সহজ হবে।

গুরুত্বপূর্ণ টিপস ও সতর্কতা

  • পিচ্ছিল পাথর: ঝর্ণার নিচে নামার সময় সাবধানে চলুন, কারণ পাথরগুলো খুব পিচ্ছিল হতে পারে।
  • বিদ্যুৎ নেই: বগালেকে বিদ্যুৎ না থাকলেও সোলার পাওয়ার থাকে, তবে মোবাইল চার্জের জন্য পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে যাওয়া ভালো।
  • নেটওয়ার্ক কভারেজ: রবি ও টেলিটকের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়, তাই এর যেকোনো একটি সিম সাথে রাখুন।
  • লেকে সাবধানতা: বগালেকের পানিতে গোসল করার সময় সতর্ক থাকুন, কারণ সাম্প্রতিক সময়ে কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছে।
  • আদিবাসীদের সম্মান করুন: স্থানীয়দের অনুমতি ছাড়া ছবি তুলবেন না, তাঁদের প্রতি সর্বদা সম্মান দেখান।
  • আইডি কার্ড: নিজের নিরাপত্তার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সাথে রাখুন।
  • আর্মি ক্যাম্প অনুমতি: বগালেক বা কেওক্রাডং যেতে হলে আর্মি ক্যাম্পে নাম এন্ট্রি ও রিপোর্ট করা বাধ্যতামূলক।

শেষ কথা

চিংড়ি ঝর্ণা শুধু একটা ঝর্ণা নয়, এটি প্রকৃতির এক অলৌকিক সৌন্দর্য, যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই। পাহাড়, লেক, ঝর্ণা, আর আদিবাসী সংস্কৃতির ছোঁয়া — সব মিলিয়ে বান্দরবানের এই অংশ যেন ট্রেকপ্রেমীদের স্বর্গ। তাই ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে, বন্ধুদের ডেকে, পাহাড়ের পথে পা বাড়িয়ে দিন। জীবনটা রঙিন হবে নতুন অভিজ্ঞতায়!

চিংড়ি ঝর্ণা এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
294.7 কিমি
বান্দরবান থেকে
37.27 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
বগালেক
কেওক্রাডং
জাদিপাই ঝর্ণা
ঋজুক ঝর্ণা
খাঞ্জেলী দীঘি
দামতুয়া ঝর্ণা
সাতভাইখুম
আমিয়াখুম জলপ্রপাত
চিম্বুক
তিন্দু
ডিম পাহাড়
সাইরু হিল রিসোর্ট
নাফাখুম
দেবতাখুম
শৈলপ্রপাত ঝর্ণা
মিলনছড়ি
চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র
আলীর গুহা বা আলীর সুড়ঙ্গ
মারায়ন তং

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন