বাগেরহাট শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে রণবিজয়পুর গ্রামে অবস্থিত ঐতিহাসিক রণবিজয়পুর মসজিদ। স্থানীয়ভাবে এটি ‘দরিয়া খাঁ’র মসজিদ’ নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদগুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড়। এই মসজিদটি ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত।
ইতিহাসবিদদের ধারণা, ১৪৫৯ সালের দিকে হযরত খান জাহান আলীর ঘনিষ্ঠ সহচর দরিয়া খাঁ এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। স্থাপত্যশৈলীতে খান জাহানী ধারা বজায় রেখে তৈরি করা হয়েছে এই মসজিদটি।
স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য
রণবিজয়পুর মসজিদের দেয়ালগুলো মোটা ইটের তৈরি এবং মসজিদের বাইরের দিকের পরিমাপ প্রায় ৫৬ বর্গফুট, আর ভেতরের অংশ ৩৬ বর্গফুট। দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় ১০ ফুট। মসজিদের পশ্চিম দিকের দেয়ালে রয়েছে ৩টি মেহরাব এবং বাকি তিনদিকে রয়েছে ৩টি করে দরজা। ফুলের নকশায় সজ্জিত মেহরাবগুলোর মধ্যে মাঝেরটি সবচেয়ে বড় এবং প্রধান মেহরাব হিসেবে পরিচিত।
চার কোণায় রয়েছে চারটি গোলাকার মিনার যা খান জাহানী স্থাপত্যরীতির অনন্য নিদর্শন। একমাত্র গম্বুজটি বিশাল এবং আকর্ষণীয়, যা মসজিদের মূল সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। এছাড়া, মসজিদের দেয়ালে পোড়ামাটির অলংকরণ ও খোদাই নজর কাড়ে।
১৯৬১ সালে এই মসজিদটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর।
কীভাবে যাবেন রণবিজয়পুর মসজিদ
ঢাকা থেকে সরাসরি বাস বা ট্রেনে বাগেরহাট যাওয়া যায়। গুলিস্তান ও সায়েদাবাদ থেকে চলাচলকারী দোলা পরিবহন, ওয়েলকাম এক্সপ্রেস, ফাল্গুনী পরিবহন, সাকুরা, হানিফ, সোহাগ ও ঈগল পরিবহনের বাসে যাত্রা করা যায়। এসব বাসের ভাড়া ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে।
ট্রেনে যেতে চাইলে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে আন্তঃনগর চিত্রা এক্সপ্রেস বা সুন্দরবন এক্সপ্রেসে খুলনা পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে বাগেরহাট পৌঁছাতে পারবেন।
বাগেরহাট শহরে পৌঁছানোর পর অটোরিকশা বা লোকাল পরিবহন ভাড়া করে মসজিদে যাওয়া যায়। এছাড়া খান জাহান আলীর মাজারের বিপরীত দিকের রণবিজয় সড়ক ধরে প্রায় ১০ মিনিট হাঁটলেই মসজিদে পৌঁছানো সম্ভব।
কোথায় থাকবেন
বাগেরহাটে পর্যটকদের জন্য বেশ কিছু আবাসিক ব্যবস্থা রয়েছে। সার্কিট হাউজ, ডাক বাংলো, ষাট গম্বুজ প্রত্নতত্ত্ব গেস্ট হাউজ ও সুন্দরবন রিসোর্টের পাশাপাশি নিম্নোক্ত হোটেলগুলোতেও থাকতে পারেন:
- মমতাজ হোটেল
- হোটেল মোহনা
- হোটেল আল আমিন
- হোটেল অভি
- হোটেল ফুয়াদ আবাসিক
- জারিফ আবাসিক
- হোটেল ধানসিঁড়ি
কোথায় খাবেন
বাগেরহাট শহরে বেশ কিছু মানসম্মত হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে। এর মধ্যে রাধুনি হোটেল ও ধানসিঁড়ি হোটেল জনপ্রিয়। বাগেরহাটের ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে “নারিকেল চিংড়ি” ভীষণ জনপ্রিয়।
বাগেরহাটের দর্শনীয় স্থানসমূহ
বাগেরহাট জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে:
- ঐতিহাসিক ষাট গম্বুজ মসজিদ
- খান জাহান আলীর মাজার
- মোংলা সমুদ্রবন্দর
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!