বিহার ধাপ

বিহার ধাপ বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এটি নাগর নদীর তীরে অবস্থিত এবং স্থানীয়ভাবে "তোতারাম পণ্ডিতের ধাপ" বা "তোতারাম পণ্ডিতের বাড়ি" নামে পরিচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বিহারটি দ্বিতীয় নির্মাণ যুগের নিদর্শন এবং আনুমানিক ১১ থেকে ১২ শতকের মধ্যে এটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। চীনা পর্যটক হিউয়েন সাঙ্গ তার ভ্রমণ বৃত্তান্তে এখানে অবস্থিত এক উঁচু টিলা আকৃতির বিহারের উল্লেখ করেছেন।

বিহার ধাপের গঠন

বিহার ধাপের আয়তন প্রায় ২৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২২০ মিটার প্রস্থ। এটি ভূমি থেকে আনুমানিক ২ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। প্রত্নতাত্ত্বিক খননে উত্তর-দক্ষিণে ৫৭ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৬১ মিটার বিস্তৃত একটি বিহার কাঠামো উন্মোচিত হয়েছে। এটির কেন্দ্রে একটি উন্মুক্ত প্রাঙ্গণ রয়েছে, যার চারপাশে ৩৭টি ভিক্ষু কক্ষ রয়েছে। পশ্চিম দিকে প্রহরী কক্ষসহ প্রবেশদ্বার এবং পূর্বদিকে মূর্তি স্থাপনের বেদি অবস্থিত।

খনন কার্যক্রম ও আবিষ্কার

১৯৭৯ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত বিহার ধাপে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন পরিচালিত হয়। প্রথম পর্যায়ে দুটি বৌদ্ধ বিহার ও একটি মন্দিরের অবকাঠামো আংশিকভাবে উন্মোচিত হয়। পরে, ২০০৫ সালে নতুনভাবে খনন চালিয়ে পূর্বদিক থেকে আরও একটি মন্দির ও পাঁচটি পৃথক নির্মাণ যুগের স্থাপত্য নিদর্শন পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, প্রথম নির্মাণ যুগে নির্মিত মন্দির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর, দ্বিতীয় নির্মাণ যুগে এটি সংস্কার করে নতুন মন্দির নির্মাণ করা হয়। বিহার ধাপ থেকে প্রায় এক হাজারেরও বেশি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে, যার মধ্যে সুলতান সিকান্দার শাহের রৌপ্য মুদ্রা, ব্রোঞ্জের ধ্যানমগ্ন বৌদ্ধ মূর্তি, কাঁচের পুঁতি, পোড়ামাটির ফলকচিত্র, সিলমোহর, ধূপদানী, পিরিচ, মাটির পাত্র এবং নকশা খোদাই করা ইট অন্যতম।

বিহার ধাপে যেভাবে পৌঁছাবেন

বিহার ধাপে যেতে হলে প্রথমে বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহার গ্রামে পৌঁছাতে হবে। ঢাকা থেকে এসআরটিসি, শ্যামলী, হানিফ, কেয়া, ডিপজল এবং শাহ্‌ ফতেহ আলী পরিবহনের বাসে সরাসরি বগুড়ায় যাওয়া যায়। বাসভেদে ভাড়া ৫৫০ থেকে ১৩০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

যারা ট্রেনে ভ্রমণ করতে চান, তারা ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বুড়িমারী, রংপুর, কিংবা লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে করে বগুড়ায় পৌঁছাতে পারেন। ট্রেনের ভাড়া শ্রেণিভেদে ৪৭৫ থেকে ১০৯৩ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।

বগুড়ার মহাস্থানগড় থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার এবং ভাসু বিহার থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে বিহার ধাপ অবস্থিত। বগুড়ার ঠনঠনিয়া বাসস্ট্যান্ড বা সাতমাথা থেকে সিএনজি বা অটোরিকশায় ভাসু বিহার যেতে পারেন। সারাদিনের জন্য অটো রিকশা ভাড়া ৮০০-১০০০ টাকা হতে পারে।

থাকার ব্যবস্থা

বগুড়ায় পর্যটকদের থাকার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। জনপ্রিয় হোটেলগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • মম ইন
  • হোটেল নাজ গার্ডেন
  • পর্যটন মোটেল
  • সেফওয়ে মোটেল
  • সেঞ্ছুরি মোটেল
  • মোটেল ক্যাসেল

খাবারের ব্যবস্থা

বগুড়া শহরের কিছু জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট হলো:

  • সাথী হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট
  • মায়ের দোয়া হোটেল
  • অতিথি গার্ডেন রেস্টুরেন্ট
  • চাপ কর্নার
  • হোটেল সাফিনা

এছাড়া, বগুড়ার বিখ্যাত দই অবশ্যই চেখে দেখতে ভুলবেন না!

বগুড়ার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

বগুড়া জেলার অন্যান্য ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে:

  • মহাস্থানগড়
  • খেরুয়া মসজিদ
  • গোকুল মেধ
  • রানী ভবানীর পিতৃালয়
  • ভীমের জাঙ্গাল

বিহার ধাপ ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব প্রেমীদের জন্য একটি চমৎকার স্থান। অতীতের ইতিহাসকে কাছ থেকে দেখতে চাইলে এই স্থানটি অবশ্যই আপনার ভ্রমণ তালিকায় রাখা উচিত।

বিহার ধাপ এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
170.83 কিমি
বগুড়া থেকে
14.29 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
ভাসু বিহার
গোকুল মেধ
পরশুরামের প্রাসাদ
মানকালীর কুণ্ড
মহাস্থানগড়
যোগীর ভবণ
নান্দাইল দিঘী
ভীমের জাঙ্গাল
হিন্দা-কসবা শাহী জামে মসজিদ
আছরাঙ্গা দীঘি
পাহাড়পুর জাদুঘর
শিশু উদ্যান ও রিসোর্ট
সুরা মসজিদ
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার
বার শিবালয় মন্দির
ড্রিমল্যান্ড এডুকেশনাল পার্ক
খেরুয়া মসজিদ
ডানা পার্ক
পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমি
এসকেএস ইন রিসোর্ট

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন