পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমি

পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমি (Pagla Dewan Boddhobhumi) ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় জয়পুরহাট জেলার চকবরকত ইউনিয়নে সংঘটিত এক ভয়াবহ গণহত্যার সাক্ষী। জয়পুরহাট শহর থেকে এই বধ্যভূমির দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার। ১৯৭১ সালের মে মাসের শেষদিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এখানে ক্যাম্প ও বাঙ্কার নির্মাণ করে ঘাঁটি স্থাপন করে। তারা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার উদ্দেশ্যে সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করছিল এমন মানুষদের ধরে এনে লুটপাট ও হত্যা করত এবং তাদের লাশ পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমিতে পুঁতে ফেলত।

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর, রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পাগলা দেওয়ানের ১২২ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বেসরকারি তথ্য অনুযায়ী, পাগলা দেওয়ানে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীরা প্রায় ৪ হাজার মানুষকে হত্যা, ১ হাজার নারীর সম্ভ্রমহানি এবং অসংখ্য বাড়িঘর ধ্বংস করে। স্বাধীনতার পরেও প্রায় ২-৩ মাস ধরে এখানে পচা লাশের গন্ধে কেউ বসবাস করতে পারত না। মাটি খুঁড়লেই অর্ধগলিত লাশের হাড় বেরিয়ে আসত। পাগলা দেওয়ান ও এর আশেপাশের গ্রামগুলো আজও হানাদার বাহিনীর বর্বরতার স্মৃতি বহন করে চলেছে। বধ্যভূমি থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরে পাকিস্তানি সেনাদের নির্মিত ক্যাম্প ও কংক্রিটের বাঙ্কার এখনও টিকে আছে। ১৯৯২ সালে স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রচেষ্টায় এই বধ্যভূমি সম্পর্কে দেশবাসী জানতে পারে। পরে গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে এখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। কালো টাইলসে তৈরি সর্বোচ্চ স্তম্ভ, লাল ইটের বেদি ও ভাঙা দেয়াল ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বরের গণহত্যার শোক ও বেদনার প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।

যাওয়ার উপায়

ঢাকা থেকে জয়পুরহাট যাওয়ার জন্য গাবতলী, মহাখালী, আব্দুল্লাহপুর, শ্যামলী এবং কল্যাণপুর থেকে শাহ্ ফতেহ আলী পরিবহণ, সেইন্টমার্টিন ট্রাভেলস, শ্যামলী পরিবহন, এনআর ট্রাভেলস এবং হানিফ পরিবহণের বাস সার্ভিস পাওয়া যায়। এসি ও নন-এসি বাসের ভাড়া ৫৫০ টাকা থেকে ১,৪০০ টাকা পর্যন্ত।

এছাড়া ঢাকার কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে নিলসাগর এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস এবং পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনে জয়পুরহাট যাওয়া যায়। টিকেটের মূল্য শোভন চেয়ার ৪৬৫ টাকা, স্নিগ্ধা ৮৯২ টাকা, এসি সিট ১,০৭০ টাকা এবং এসি বার্থ ১,৫৯৯ টাকা।

জয়পুরহাট থেকে রিকশা বা স্থানীয় যানবাহন নিয়ে ধলাহার ইউনিয়ন ও নওগাঁ জেলার ধামুরহাট উপজেলার জাহানপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমিতে পৌঁছানো যায়।

থাকার ব্যবস্থা

জয়পুরহাটে রাত্রিযাপনের জন্য হোটেল সাদ, গ্রিন হাউজ, হোটেল পৃথিবী এবং প্রমি হোটেলের মতো বেশ কয়েকটি হোটেল রয়েছে।

খাবারের ব্যবস্থা

জয়পুরহাটের কলেজ রোড ও স্টেশন রোডে বিভিন্ন মানের রেস্তোরাঁ রয়েছে। এছাড়া জয়পুরহাটের বিখ্যাত ঝাল জিলাপির স্বাদ নেওয়া যেতে পারে।

জয়পুরহাটের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

জয়পুরহাট জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে আছরাঙ্গা দীঘি, নান্দাইল দীঘি, বার শিবালয় মন্দির এবং হিন্দা-কসবা শাহী জামে মসজিদ উল্লেখযোগ্য।

পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমি এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
211.75 কিমি
জয়পুরহাট থেকে
11.57 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
জগদ্দল বিহার
লকমা রাজবাড়ি
আলতাদীঘি
বার শিবালয় মন্দির
শিশু উদ্যান ও রিসোর্ট
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার
পাহাড়পুর জাদুঘর
আছরাঙ্গা দীঘি
হিন্দা-কসবা শাহী জামে মসজিদ
নান্দাইল দিঘী
সুরা মসজিদ
দিব্যক জয়স্তম্ভ
বলিহার রাজবাড়ি
ডানা পার্ক
ভাসু বিহার
স্বপ্নপুরী পিকনিক স্পট
বিহার ধাপ
যোগীর ভবণ
ড্রিমল্যান্ড এডুকেশনাল পার্ক
পরশুরামের প্রাসাদ

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন