খেরুয়া মসজিদ

বাংলাদেশের অন্যতম পুরাতন স্থাপত্য নিদর্শন খেরুয়া মসজিদ বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার খন্দকার টোলা এলাকায় অবস্থিত। এটি ১৫৮২ সালে জওহর আলী কাকশালের পুত্র মির্জা মুরাদ খান কাকশাল নির্মাণ করেন। তবে মসজিদের নামকরণের সঠিক ইতিহাস এখনো অজানা।

স্থাপত্যশৈলী ও নির্মাণশৈলী

প্রায় ৪৩০ বছর পুরনো এই মসজিদটি সুলতানি ও মোগল স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে। শক্তপোক্ত চওড়া দেয়াল ও মজবুত মিনারের কারণে এটি এখনো টিকে আছে। মসজিদটি চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি, যার দেয়ালের পুরুত্ব ১.৮১ মিটার এবং এটি লাল ইটের উপর নির্মিত। ছাদে রয়েছে তিনটি অর্ধগোলাকৃতি গম্বুজ

মসজিদের বাইরের দৈর্ঘ্য ১৭.২৭ মিটার এবং প্রস্থ ৭.৪২ মিটার। পূর্ব দিকে রয়েছে তিনটি খিলানযুক্ত প্রবেশদ্বার, আর উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে রয়েছে একটি করে দরজা। পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে তিনটি কারুকাজখচিত মেহরাব

শৈল্পিক বৈশিষ্ট্য

খেরুয়া মসজিদের অন্যতম আকর্ষণ ধনুকের মতো বাঁকা কার্নিশ, যার নিচে রয়েছে সারিবদ্ধ খিলান আকৃতির প্যানেল ও চমৎকার অলংকরণ। মসজিদের ইটের নকশা, খাড়া প্যানেল, ফুল-লতা-পাতার কারুকাজ, মিনার ও গম্বুজের বৈচিত্র্যময় গাঁথুনি একে দিয়েছে বিশেষ স্বতন্ত্রতা।

মসজিদের সামনে রয়েছে একটি আয়তাকার মাঠ, আর চারপাশে তাল, নারকেল, আম ও কদমগাছের সারি, যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। মসজিদের মোট আয়তন প্রায় ৫৯ শতাংশ জমি

ধর্মীয় ও প্রত্নতাত্ত্বিক গুরুত্ব

ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটিতে এখনো নিয়মিত নামাজ আদায় করা হয়। এটি বর্তমানে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত এবং সংরক্ষিত স্থাপনা হিসেবে বিবেচিত।

কিভাবে যাবেন?

বগুড়া জেলা সদর থেকে খেরুয়া মসজিদের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার, আর শেরপুর উপজেলা সদর থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার। শেরপুর উপজেলা সদর থেকে রিকশা, ভ্যান বা সিএনজি দিয়ে সহজেই মসজিদে পৌঁছানো যায়।

ঢাকা থেকে বগুড়া যাওয়ার উপায়

বাসে:

ঢাকার গাবতলী, মহাখালী, শ্যামলী, আবদুল্লাহপুর ও কল্যাণপুর থেকে বগুড়াগামী বাস পাওয়া যায়। জনপ্রিয় বাস সার্ভিসগুলোর মধ্যে রয়েছে—

  • শ্যামলী পরিবহন
  • এস আর ট্রাভেলস
  • হানিফ এন্টারপ্রাইজ
  • একতা পরিবহন
  • বাবুল এন্টারপ্রাইজ
  • এস এ পরিবহন
  • শাহ ফতেহ আলী পরিবহন

বাসের ভাড়া ৫৫০ থেকে ১৩০০ টাকা (এসি ও নন-এসি অনুযায়ী)।

ট্রেনে:

ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বুড়িমারী এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস ও লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনে বগুড়ায় আসা যায়। ট্রেনের ভাড়া ৪৭৫ থেকে ১০৯৩ টাকা (শ্রেণীভেদে)।

কোথায় থাকবেন?

বগুড়ায় থাকার জন্য বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল ও মোটেল রয়েছে।

উন্নতমানের হোটেল:

  • পর্যটন মোটেল
  • নাজ গার্ডেন
  • নর্থওয়ে মোটেল
  • সেফওয়ে মোটেল
  • মোটেল ক্যাসল এমএইচ
  • সেঞ্চুরি মোটেল
  • হোটেল সিস্তা
  • হোটেল আকবরিয়া
  • রেডচিলিস চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও আবাসিক হোটেল

সাধারণ মানের হোটেল:

  • হোটেল আল আমিন
  • হোটেল রয়াল প্যালেস
  • হোটেল সান ভিউ
  • হোটেল রাজমনি
  • হোটেল হানি ডে
  • হোটেল আজিজ

শেষ কথা

বগুড়ার খেরুয়া মসজিদ শুধুমাত্র ধর্মীয় উপাসনার স্থান নয়, এটি বাংলার ইতিহাস ও স্থাপত্যশিল্পের এক মূল্যবান নিদর্শন। ঐতিহাসিক ও স্থাপত্যশিল্পে আগ্রহী ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এটি অবশ্যই এক দর্শনীয় স্থান।

খেরুয়া মসজিদ এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
138.15 কিমি
বগুড়া থেকে
22.25 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
ভীমের জাঙ্গাল
চলন বিল
নবরত্ন মন্দির
যোগীর ভবণ
গোকুল মেধ
মহাস্থানগড়
চলনবিল জাদুঘর
মানকালীর কুণ্ড
রবি ঠাকুরের কুঠিবাড়ী
পরশুরামের প্রাসাদ
হালতির বিল
বিহার ধাপ
ভাসু বিহার
চায়না বাঁধ
বঙ্গবন্ধু যমুনা ইকোপার্ক
পরীর দালান
যমুনা সেতু
২০১ গম্বুজ মসজিদ
হিন্দা-কসবা শাহী জামে মসজিদ
উত্তরা গণভবন

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন