ঝালকাঠি, বরিশাল এবং পিরোজপুরের সীমান্তবর্তী এলাকায় এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম পেয়ারা বাগান গড়ে উঠেছে। ঝালকাঠি জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ভিমরুলিতে অবস্থিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ভাসমান পেয়ারা বাজার। তিন দিক থেকে আসা খালের মোহনায় এই ভাসমান পেয়ারা বাজার বসে। জুলাই ও আগস্ট পেয়ারার মৌসুম হলেও কখনও কখনও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাজার চলে। ভাসমান পেয়ারা বাজার দেখার জন্য আগস্ট মাস সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। সকাল ১১টার পর বাজারের ভিড় কমতে থাকে, তাই ১১টার আগে বাজারে যাওয়াই ভালো।
এছাড়াও, ব্যাকওয়াটারে ঘুরে খালের পাশের ঘরবাড়ি, স্কুল, ব্রিজ এবং রাস্তার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন। খালের মধ্যে দিয়ে চলার সময় চাইলে হাত বাড়িয়ে পেয়ারা ধরতে পারবেন। আর যদি বৃষ্টি হয়, তবে চারপাশের সৌন্দর্য আরও মোহনীয় হয়ে উঠবে।
পথে কুড়িয়ানা বাজারের ঋতুপর্ণা দোকানের গরম গরম রসগোল্লার স্বাদ নিতে ভুলবেন না। দুপুরের খাবারের জন্য বাজারে বৌদির হোটেলে খেতে পারেন। ভাসমান পেয়ারা বাজার থেকে বরিশাল আসার পথে গুঠিয়া মসজিদ ও দুর্গাসাগর দিঘী ঘুরে আসতে পারেন।
কোথায় কী খাবেন
ভিমরুলি বাজার থেকে সাদা ও লাল মিষ্টি, কুড়িয়ানা বাজারে ঋতুপর্ণা দোকানের গরম মিষ্টি এবং বৌদির হোটেলে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। এছাড়া গুঠিয়ার সন্দেশ, বরিশাল শহরের পুরান বাজার এলাকার হকের রসমালাই, রসগোল্লা কিংবা ছানা, বটতলা এলাকার শশীর রসমালাই, নয়াবাজার মোড়ের নিতাই মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্পঞ্জ মিষ্টি, বিবির পুকুর পাড়ের চটপটি, দধি ঘোরের দই, ঘোল এবং ঘোল-মুড়ি মিক্সড খেতে পারেন।
থাকার ব্যবস্থা
ঝালকাঠি শহরের ধানসিঁড়ি রেস্ট হাউস, হালিমা এবং আরাফাত বোর্ডিংয়ে ১০০ থেকে ২৫০ টাকায় রাত্রিযাপন করতে পারবেন। তবে ভালো মানের হোটেলে থাকতে চাইলে বরিশাল শহরে আসতে হবে। বরিশাল শহরে বিভিন্ন মানের বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল রয়েছে।
ভাসমান পেয়ারা বাজার যাওয়ার উপায়
বরিশাল পানি বা সড়ক পথে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে পানি পথে বরিশাল যাওয়াই সবচেয়ে সুবিধাজনক।
লঞ্চে যেতে চাইলে
ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি লঞ্চ বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। লঞ্চে বরিশাল যেতে জনপ্রতি ডেক ভাড়া ২০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ৯০০ (নন এসি) টাকা এবং ডাবল কেবিন ভাড়া ১৭০০ (নন এসি) টাকা। বরিশাল লঞ্চ ঘাট থেকে অটো বা রিক্সায় চৌরাস্তা এসে বাসে করে স্বরূপকাঠি লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৫০ টাকা ভাড়া লাগবে। স্বরূপকাঠি লঞ্চঘাট থেকে ট্রলার ভাড়া করে সন্ধ্যা নদী দিয়ে আটঘর, কুড়িয়ানা, ভিমরুলি বাজার ঘুরতে পারবেন। ট্রলার ভেদে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা লাগবে। অথবা স্বরূপকাঠি লঞ্চঘাট থেকে ২০ টাকা অটো ভাড়ায় কুড়িয়ানা বাজার এসে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায় নৌকা বা ট্রলার ভাড়া করে কুড়িয়ানার আশপাশের বাজার ও খাল ঘুরতে পারবেন। তবে ভিমরুলি গেলে ভাড়া আরও বেশি লাগবে।
বাসে যেতে চাইলে
ঢাকার সদরঘাট এবং গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে বেশ কয়েকটি বাস পদ্মা সেতু হয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সাকুরা পরিবহনে বরিশাল যেতে জনপ্রতি বাসের টিকেট মূল্য ৫৩৫ থেকে ১২৫০ টাকা। গাবতলী থেকে সরাসরি স্বরূপকাঠি লঞ্চঘাটে যাওয়ার বাস রয়েছে। সোনার তরী, হানিফ এবং সাকুরা পরিবহণের বাসে জনপ্রতি ৫০০ টাকা ভাড়া লাগে। বাসে বরিশাল বা স্বরূপকাঠি এসে উপরে উল্লেখিত উপায়ে ভাসমান পেয়ারা বাজার দেখতে যেতে পারবেন।
ট্যুর প্ল্যান
ভাসমান পেয়ারা বাজার ভ্রমণের ট্যুর প্ল্যান (১):
বরিশাল বা স্বরূপকাঠি থেকে নৌকা বা ট্রলার নিয়ে ব্যাকওয়াটার ও ভাসমান পেয়ারা বাজার দেখুন। দুপুরে কুড়িয়ানা বাজারে বৌদির হোটেলে খাবার খেয়ে আবার ব্যাকওয়াটার ভ্রমণ করে ঝালকাঠিতে রাত কাটান। সকালে ঝালকাঠি থেকে গুঠিয়া মসজিদ, দুর্গাসাগর দিঘী ঘুরে বরিশালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করুন। এরপর বরিশাল শহরের আশেপাশে ঘুরে লঞ্চে ঢাকা ফিরুন।
ভাসমান পেয়ারা বাজার ভ্রমণের ট্যুর প্ল্যান (২):
বরিশাল বা স্বরূপকাঠি থেকে নৌকা বা ট্রলার নিয়ে ব্যাকওয়াটার ও ভাসমান পেয়ারা বাজার দেখুন। দুপুরে কুড়িয়ানা বাজারে বৌদির হোটেলে খাবার খেয়ে বাসে চরে বানারীপাড়ায় গুঠিয়া মসজিদ দেখতে যান। এছাড়া কুড়িয়ানা বাজার থেকে জনপ্রতি ১৫ টাকা অটো ভাড়ায় নারায়ণকাঠি গিয়ে সেখান থেকে আরেকটি অটোতে জনপ্রতি ১০ টাকা ভাড়ায় গুঠিয়া মসজিদ যেতে পারেন। গুঠিয়া মসজিদের কাছে সন্দেশ খেতে ভুলবেন না। এরপর মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে দুর্গাসাগর দিঘী দেখে বাসে বরিশাল শহরে আসুন। যদি সময় থাকে, তবে বিবির পুকুর পাড়ে সন্ধ্যা কাটিয়ে চটপটি খেয়ে ফিরতি লঞ্চ বা বাসে ঢাকায় ফিরুন।
ভাসমান পেয়ারা বাজার ভ্রমণ পরামর্শ
পানিতে ময়লা ফেলে পানি নোংরা করবেন না।
ভাসমান পেয়ারা বাজার ভ্রমণে গ্রুপ করে গেলেই ভালো।
বাসে ভ্রমণের চেয়ে লঞ্চে ভ্রমণ করা আরামদায়ক ও সুবিধাজনক।
অবশ্যই মিষ্টি খেতে ভুলবেন না।
লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করবেন।
বাগান থেকে কিছু খেতে চাইলে বাগান মালিকের অনুমতি নিবেন।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!