বিবির পুকুর

বরিশাল শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি ঐতিহ্যবাহী জলাশয়ের নাম বিবির পুকুর (Bibir Pukur)। ১৯০৮ সালে জিন্নাত বিবি জনসাধারণের পানির কষ্ট দূর করার উদ্দেশ্যে এই পুকুর খনন করেন। নগরীর সদর রোডের পূর্ব পাশে অবস্থিত এই পুকুরটির দৈর্ঘ্য ১৮৫০ ফুট এবং প্রস্থ ৪০০ ফুট। পরবর্তীতে জিন্নাত বিবির নামানুসারে এই শতবর্ষী পুকুরটি বিবির পুকুর নামে পরিচিতি লাভ করে। তৎকালীন সময়ে কীর্তনখোলা নদীর সাথে খালের মাধ্যমে বিবির পুকুরের দুটি সংযোগ ছিল। ফলে নদীর মতোই এই পুকুরে নিয়মিতভাবে জোয়ার-ভাটা দেখা যেত।

১৬০০ সালের শুরুর দিকে বরিশালে কিছু খ্রিস্টান মিশনারির আগমন ঘটে। এর ধারাবাহিকতায় ১৮০০ শতকে বাংলা মুদ্রণ সাহিত্যের জনক উইলিয়াম কেরি বরিশালে অবস্থান করেন। উইলিয়াম কেরি পর্তুগিজ দস্যুদের কাছ থেকে জিন্নাত বিবিকে উদ্ধার করে নিজেই তার লালন-পালনের দায়িত্ব নেন। অবিভক্ত বাংলার মন্ত্রী হাশেম আলী খানের বাড়িই ছিল জিন্নাত বিবির বাসভবন।

বরিশাল পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর বিভিন্ন সময়ে বিবির পুকুরের সংস্কার ও পুনঃখনন করা হয়। বর্তমানে পুকুরকে কেন্দ্র করে ঝুলন্ত পার্ক, বসার বেঞ্চ, ফোয়ারা এবং আলোকসজ্জার মাধ্যমে এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাশাপাশি বিবির পুকুরের কাছে উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্র পাবলিক স্কয়ার নির্মাণ করা হয়েছে, যার বর্তমান নাম হিরণ স্কয়ার।

কিভাবে যাবেন

সড়কপথে ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা সময় লাগে। রাজধানীর গাবতলি বাস টার্মিনাল থেকে নিয়মিত বিরতিতে প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন পরিবহণের বাস যাতায়াত করে। শাকুরা, ঈগল এবং হানিফ পরিবহনের এসি/নন-এসি বাসের জনপ্রতি টিকেটের মূল্য ৬০০ থেকে ১৩০০ টাকা (পরিবর্তনশীল)। ঢাকা থেকে বরিশালগামী বাসগুলো সাধারণত বরিশাল শহরের নতুল্লাবাদ বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে থামে।

তবে ঢাকা-বরিশাল যাতায়াতের জন্য লঞ্চ সবচেয়ে ভালো মাধ্যম। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে রাত ৮টা-৯টার মধ্যে বরিশালগামী লঞ্চগুলো ছেড়ে যায়। লঞ্চগুলো পরদিন ভোরে বরিশাল ঘাটে পৌঁছায়। ভালো সার্ভিসের লঞ্চের মধ্যে রয়েছে এম ভি মানামী, কুয়াকাটা ২, কীর্তনখোলা ১০, এডভেঞ্চার ১, এডভেঞ্চার ৯, সুন্দরবন ৯, সুন্দরবন ১০, সুরভী ৭, সুরভী ৮, পারাবত ৯, পারাবত ১১ সহ আরও কিছু লঞ্চ। জনপ্রতি ডেকের ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১২০০-১৪০০ টাকা, ডাবল কেবিনের ভাড়া ২২০০-২৫০০ টাকা এবং ভিআইপি কেবিনের ভাড়া ৫০০০-৮০০০ টাকা।

বরিশালের লঞ্চ ঘাট বা বাস স্ট্যান্ড পৌঁছে রিকশা নিয়ে নগরীর সদর রোডের পূর্ব পাশে অবস্থিত বিবির পুকুর দেখতে যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

বরিশালে বেশ কিছু ভালো মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। এদের মধ্যে হোটেল গ্র্যান্ড প্লাজা, হোটেল এথেনা ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল সেডোনা, রিচমার্ট গেস্ট হাউজ, রোডেলা হোটেল এবং হোটেল এরিনা উল্লেখযোগ্য।

কোথায় খাবেন

বরিশালে অবস্থিত বিভিন্ন মানের খাবার হোটেল/রেস্টুরেন্ট থেকে আপনার পছন্দমতো খাবার খুঁজে নিতে মোটেও বেগ পেতে হবে না। বিবির পুকুরের পাশেই রয়েছে সকাল সন্ধ্যা হোটেল, যার লুচি, সবজি ও সরমালাই মিষ্টি সবার কাছেই জনপ্রিয়। এছাড়া কাছেই রয়েছে ঘরোয়া হোটেল, যেখানে নানান পদের দেশী খাবার খেতে পারবেন।

বরিশালের দর্শনীয় স্থান

বরিশাল শহরের কাছাকাছি দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে জনপ্রিয় হলো বিবির পুকুর, ৩০ গোডাউন, বেলস পার্ক, দুর্গাসাগর দীঘি, বাইতুল আমান মসজিদ, লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি, মিয়াবাড়ি জামে মসজিদ, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক ইত্যাদি।

বিবির পুকুর এর দূরত্ব
ঢাকা থেকে দূরত্ব:
123.19 কিমি
বরিশাল থেকে
2.57 কিমি
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান
অক্সফোর্ড মিশন
বঙ্গবন্ধু উদ্যান বেলস পার্ক
সুজাবাদ কেল্লা
পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি
লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি
দুর্গাসাগর দিঘী
গুটিয়া মসজিদ
ভাসমান পেয়ারা বাজার
গাবখান সেতু
কীর্তিপাশা জমিদার বাড়ি
শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর
সাতুরিয়া জমিদার বাড়ি
বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল স্মৃতি জাদুঘর
নিজাম হাসিনা মসজিদ
নয় গম্বুজ মসজিদ
শাপলা গ্রাম, সাতলা
আলীপুর মাছ বাজার
ভান্ডারিয়া শিশু পার্ক
রায়েরকাঠী জমিদার বাড়ি
মতিরহাট সৈকত

মন্তব্য

এখনো কোনো মন্তব্য নেই

প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!

আপনার মন্তব্য লিখুন