নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার পতিসর গ্রামে, নাগর নদীর তীরে অবস্থিত রবীন্দ্র কাচারী বাড়ি বাংলাদেশের অন্যতম সংরক্ষিত ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা। নওগাঁ শহর থেকে প্রায় ৩৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বাড়িটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
১৮৩০ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর প্রথমবারের মতো এই অঞ্চলে আসেন। পরবর্তীতে ১৮৯১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারী পরিচালনার উদ্দেশ্যে পতিসরে আসেন। প্রায় ১০ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই কাচারী বাড়ির সামনে রয়েছে সিংহদুয়ার, প্রশস্ত আঙিনা, দোতলা ভবন এবং কুঠিবাড়িকে ঘিরে থাকা কিছু ধ্বংসাবশেষ। প্রবেশ পথ দিয়ে সামনে এগোলেই চোখে পড়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি আবক্ষ মূর্তি এবং মার্বেল পাথরে খোদিত তাঁর লেখা কিছু বাণী।
রবীন্দ্র কাচারী বাড়ির অভ্যন্তরীণ নিদর্শন
বাড়ির ভেতরে সংরক্ষিত রয়েছে কবির ব্যবহৃত নানা তৈজসপত্র, স্বহস্তে লিখিত চিঠি, বিভিন্ন বয়সের ছবি এবং আসবাবপত্র। এছাড়াও এখানে রয়েছে রবীন্দ্র সরোবর, দীঘি ও কালিগ্রাম রবীন্দ্রনাথ ইন্সটিটিউট, যা কবিগুরুর সময়কাল থেকে এই অঞ্চলের ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে।
কবিগুরুর সাহিত্য ও জনহিতকর কার্যক্রম
পতিসরে অবস্থানকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর "চিত্রা," "পূর্ণিমা," "সন্ধ্যা," "গোরা," "ঘরে-বাইরে" সহ অনেক বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম রচনা করেন। জমিদারী পরিচালনার পাশাপাশি তিনি এখানে দাতব্য চিকিৎসালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কারের পুরস্কারমূল্য থেকে এক লক্ষ আট হাজার টাকা ব্যয়ে তিনি একটি কৃষি ব্যাংক স্থাপন করেন, যা এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্য বিশেষ সহায়ক ছিল।
১৯৩৭ সালের ২৭ জুলাই কবিগুরু শেষবারের মতো পতিসর সফর করেন। বর্তমানে, এই ঐতিহাসিক কুঠিবাড়ি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে সংরক্ষিত রয়েছে। প্রতি বছর ২৫ বৈশাখ এখানে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজন করা হয় বিশেষ অনুষ্ঠান ও লোকজ মেলা, যেখানে দেশ-বিদেশ থেকে বহু দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে।
কিভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে নওগাঁ পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন বাস সার্ভিস রয়েছে, যেমন এসআর, শ্যামলী, হানিফ, মৌ এন্টারপ্রাইজ। বাসভেদে এসি/নন-এসি ভাড়া ৬৮০ থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
রেলপথে ঢাকা থেকে নীলসাগর এক্সপ্রেস, নীলমণি এক্সপ্রেস ট্রেনে সরাসরি আত্রাই স্টেশনে নামা যায়। এছাড়া নাটোর থেকেও বাস, ট্রেন এবং নৌপথে আত্রাই আসার ব্যবস্থা রয়েছে।
আত্রাই উপজেলা থেকে নসিমন, ভুটভুটি বা অটোরিকশায় ১৪ কিলোমিটার দূরে পতিসর গ্রামে অবস্থিত রবীন্দ্র কাচারী বাড়িতে পৌঁছানো যায়।
কোথায় থাকবেন?
পতিসর কুঠিবাড়ির কাছেই জেলা পরিষদের একটি দোতলা ভবন রয়েছে, যেখানে অনুমতি সাপেক্ষে রাতযাপন করা সম্ভব। এছাড়া নওগাঁ শহরে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেমন:
- হোটেল প্লাবন
- হোটেল যমুনা
- হোটেল অবকাশ
- মল্লিকা ইন
- হোটেল ফারিয়াল
- হোটেল রাজ
কোথায় খাবেন?
আত্রাই উপজেলায় সাধারণ মানের খাবারের হোটেল পাওয়া যাবে। নওগাঁর গোস্তহাটির মোড় এলাকায় বেশ কয়েকটি ভালো মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে মানসম্মত খাবার পাওয়া যায়।
নওগাঁ জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
নওগাঁ জেলায় আরও কিছু উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যেমন:
- আলতাদীঘি জাতীয় উদ্যান
- ডানা পার্ক
- পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ও জাদুঘর
- কুসুম্বা মসজিদ
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!