চট্টগ্রাম শহর থেকে ৭.৬ কিলোমিটার দূরে আন্দরকিল্লা সার্কেলের কাছে মোঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য নিদর্শন আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ অবস্থিত। ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, মোঘল আমলে কিল্লা আরকানি মগ ও পর্তুগীজ জলদস্যুদের আস্তানা ছিল। ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জানুয়ারি বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খা’র ছেলে বুজুর্গ উমেদ খাঁ এখানে প্রবেশ করার মাধ্যমে "আন্দর কিল্লা" নামকরণ করা হয়। পরবর্তীতে মগ ও পর্তুগীজদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বিজয়ের স্মৃতি ধরে রাখতে সম্রাট আওরঙ্গজেবের নির্দেশে শায়েস্তা খাঁ ১৬৬৭ খ্রিষ্টাব্দে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদের ইমাম পবিত্র মদিনা থেকে নিযুক্ত করা হয়।
মোঘল স্থাপত্য রীতি অনুসারে নির্মিত আন্দরকিল্লা মসজিদের স্থাপত্যে দিল্লি জামে মসজিদের প্রভাব রয়েছে। চুন-সুরকি ও বড় পাথর ব্যবহারের কারণে মসজিদটি পাথরের মসজিদ বা জামে সঙ্গীন হিসেবে পরিচিত। সমতল থেকে প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতায় ২.৪২ একর জায়গা জুড়ে ছোট একটি পাহাড়ে মসজিদটি অবস্থিত। ১৬ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭.৫ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট মসজিদের দেয়াল ২.২ মিটার পুরু। পশ্চিম দেয়াল পোড়া মাটির তৈরি, আর অন্য তিন দিকের দেয়াল পাথরের। মসজিদের মধ্যে একটি বড় গম্বুজ ও দুটি ছোট গম্বুজ রয়েছে, যা ছাদকে আবৃত করে। এছাড়া পূর্বে তিনটি, উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে মোট ৫টি প্রবেশদ্বার ও তিনটি মেহরাব রয়েছে।
প্রায় ৩৫২ বছরের পুরনো এই মসজিদ মোঘলদের চট্টগ্রাম বিজয়ের সাক্ষী হিসেবে শহরের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ন। সেই সময় এটি ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র স্থান হিসেবে জনপ্রিয় ছিল। সময়ের সাথে সাথে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ শুধুমাত্র ধর্মীয় ইবাদতের স্থান হয়ে ওঠেনি, বরং মুঘল আমলের সুন্দর স্থাপত্যকর্ম দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই এখানে আসেন।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন এবং বিমানে চট্টগ্রাম যাওয়ার সুবিধা রয়েছে। গাবতলী, সায়েদাবাদ বা মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে বিভিন্ন বাস সার্ভিসে চট্টগ্রাম যাওয়া যায়। রেলপথে কমলাপুর বা বিমানবন্দর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে সুবর্ন এক্সপ্রেস, মহানগর প্রভাতি বা সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের মতো আন্তঃনগর ট্রেনে চট্টগ্রাম পৌঁছানো যায়। আর দ্রুত সময়ের মধ্যে যেতে চাইলে বিমানে চট্টগ্রাম যাওয়া সবচেয়ে সুবিধাজনক। চট্টগ্রাম পৌঁছালে ষ্টেশন রোড এলাকা থেকে অটোরিকশা বা সিএনজি নিয়ে আন্দরকিলা মসজিদে যাওয়া সম্ভব।
কোথায় থাকবেন
চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ, ষ্টেশন রোড ও জিইসি রোডে বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। এর মধ্যে হোটেল প্যারামাউন্ট, হোটেল স্টার পার্ক, হোটেল হিল টন সিটি, হোটেল ডায়মন্ড পার্ক, হোটেল সেন্ট মার্টিন লিমিটেড, হোটেল মিসকা, হোটেল টাওয়ার ইন ও এশিয়ান এসআর হোটেল উল্লেখযোগ্য।
কোথায় খাবেন
চট্টগ্রাম শহরে বাংলা, চাইনিজ, ফাস্টফুডসহ নানা দেশি-বিদেশি খাবারের রেস্টুরেন্ট পাওয়া যায়। চট্টগ্রামের জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে মেজবান এবং কালাভুনা বিশেষভাবে পরিচিত।
চট্টগ্রামের অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
চট্টগ্রামে ওয়ার সিমেট্রি, ফয়েজ লেক, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, মহামায়া লেক, গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত, জাম্বুরি পার্ক, চন্দ্রনাথ পাহাড় সহ অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!