৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে মুন্সিগঞ্জ জেলা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বিক্রমপুর পরগনার বজ্রযোগিনী গ্রামে পাল সাম্রাজ্যের বিখ্যাত বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারক পন্ডিত অতীশ দীপঙ্কর জন্মগ্রহণ করেন। গৌতম বুদ্ধের পর বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর। স্থানীয়রা অতীশ দীপঙ্করের জন্মস্থানকে “পণ্ডিতের ভিটা” নামে পরিচিত করে থাকে। অতীশ দীপঙ্করের বাসভিটা থেকে বৌদ্ধ বিহারের প্রমাণ পাওয়া যায়। বর্তমানে অতীশ দীপঙ্করের স্মৃতি হিসেবে একটি চৈত্য স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে তাঁর দেহভস্ম রাখা হয়েছে। প্রতি বছর অসংখ্য বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে অতীশ দীপঙ্করের জন্মস্থান পরিদর্শন করতে আসেন।
অতীশ দীপঙ্করের জীবন দর্শন অতীশ দীপঙ্করের পিতা ছিলেন পাল রাজাদের অধীনস্ত সামন্ত রাজা। শৈশবে তাঁর নাম ছিল আদিনাথ চন্দ্রগর্ভ। ১০ বছর বয়সেই অতীশ বৌদ্ধ ও অবৌদ্ধ শাস্ত্রের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারার এক বিরল প্রতিভা প্রদর্শন করেন। পরবর্তীতে তিনি নালন্দায় শাস্ত্র শিক্ষার জন্য যান এবং মাত্র ১২ বছর বয়সে শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান নামে পরিচিত হন। ১২ থেকে ২১ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন পণ্ডিতের কাছে শাস্ত্র শিক্ষা গ্রহণ করেন। সর্বশেষ দীক্ষা তিনি আচার্য ধর্ম পালের কাছ থেকে গ্রহণ করেন এবং দীর্ঘ ১২ বছর বৌদ্ধ দর্শন শাস্ত্র অধ্যয়ন করার পর স্বদেশে ফিরে বিক্রমশিলা বিহারে অধ্যাপনা শুরু করেন। তিনি বৌদ্ধ শাস্ত্র, চিকিৎসাবিদ্যা ও কারিগরি বিদ্যা বিষয়ে প্রায় দুই শতাধিক গ্রন্থ রচনা, অনুবাদ ও সম্পাদনা করেন। বৌদ্ধ ধর্মের নানা সংস্কারের মধ্যে তিনি সন্ন্যাসী জীবন অতিবাহিত করলেও ১০৫৪ সালে ৭৩ বছর বয়সে লাসা নগরের চে-থঙ্গের দ্রোলমা লাখাং তারা মন্দিরে তাঁর মৃত্যু হয়।
কিভাবে যাবেন
রাজধানী ঢাকার গুলিস্থান, আবদুল্লাপুর ও মিরপুর থেকে মাওয়া যাওয়ার বাসে মুন্সিগঞ্জ পৌঁছানো যায়। ভাড়া ৬০ থেকে ৯০ টাকা হতে পারে। মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে রিকশা বা সিএনজিতে সুখবাসপুর পার হয়ে আরও দুই কিলোমিটার দূরে বজ্রযোগিনী গ্রামে অতীশ দীপঙ্করের পণ্ডিত ভিটায় পৌঁছাতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
ঢাকার কাছে অবস্থিত হওয়ায় আপনি সকালে রওনা দিয়ে সন্ধ্যার মধ্যে ঢাকায় ফিরে আসতে পারবেন। তবে রাত্রিযাপনের জন্য মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলায় অবস্থিত হোটেল থ্রি স্টার, হোটেল কমফোর্ট বা পদ্মা, মাওয়া ও মেঘনা ভিলেজ হলিডে রিসোর্টে থাকতে পারেন।
কোথায় খাবেন
মুন্সিগঞ্জ শহরে রিভার ভিউ, নিউ রাজধানী রেস্তোরাঁ, মহিউদ্দিন হোটেল এবং মুন্সির ঘরোয়া হোটেল অন্যতম জনপ্রিয় খাবারের স্থান। মুন্সিগঞ্জের স্থানীয় খাবারের মধ্যে চিত্তর দই, আনন্দর মিষ্টি, খুদের বৌউয়া এবং ভাগ্যকুলের মিষ্টি অন্যতম।
মুন্সিগঞ্জ জেলার অন্যান্য দর্শনীয় স্থান মুন্সিগঞ্জে অন্যান্য দর্শনীয় স্থান হিসেবে আড়িয়াল বিল, পদ্মহেম ধাম, সোনারং জোড়া মঠ, বাবা আদম মসজিদ, জগদীশ চন্দ্র বসু স্মৃতি জাদুঘর, ভাগ্যকুল জমিদার বাড়ী এবং মাওয়া ফেরি ঘাট উল্লেখযোগ্য।
এখনো কোনো মন্তব্য নেই
প্রথম মন্তব্য করুন এবং আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন!